Skip to main content

Full text of "Acharjya Prafulla Chandra Rayer Jiban Katha"

See other formats




্দীী এল 


থা ুচ রায়ের এ কথা ) 


শ্রীমনোমোহন মুখোপাধ্যায় 


বুক করপোরেশন লিমিটেড 
১১ গোপাল বস্থ লেন 
কলিকাত। ৯ 


প্রকাশক -- 


বুক করপোরেশন লিমিটেডের পক্ষে 
শ্রীশঙ্করী গ্রসাদ ঘোষ 


খুল্য--ছুই টাক। 


প্রিণ্টারস্প্প্রবোধ ঘোষ 


গোরাচা্ প্রেস 
১৪, মদন মিত্র লেন 


প্রকাশকের কথা 


ভারতবর্ষের অবস্থা অনিশ্চয়তাপূর্ণ_বাংলার অবস্থা জটিল। 
জাতি দ্বিধা বিভক্ত ও বিভ্রান্ত ; তার চিন্তাধারা কুটিলপথগামী। 
যুগপদ্‌ তাঙা-গড়ার মধ্য দিয়া জাতি অগ্রসর হচ্ছে--নবলব্ধ 
স্বাধীনতার পরিবেশে ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি কিরূপ 
পরিণতি লাভ করবে € সম্পর্কে প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তি আজ 
নীরব। বিভিন্ন মতবাঁদের প্রত্যেক লোক তার আনর্শানুষাযী 
ভারতকে গড়িয়া তৃলিতে চাহিতেছে। এমন সময় দেশে 
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন কথা আলোচিত হওয়ার বিশেষ 
প্রয়োজন । 

্রফুল্লচন্দ্র একাধারে আদর্শ শিক্ষক__আদর্শ বৈজ্ঞানিক, 
আদর্শ সমাজ সেবক-_সর্বেবোপরি আদর্শ যানুষ। তিনি 
একাধারে দ্রষ্টা ও অ্রষ্টা। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তাহার 
কথা আলোচিত হওয়ার যথেষ্ট অবকাশ আছে। ছাত্র, শিক্ষক, 
ব্যবসায়ী, দেশব্রতী_ প্রত্যেকেই প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন হইতে 
প্রেরণা লাভ করিতে পারেন। সেইজন্য-_“মনীষী প্রফুল্লচন্দ্র” 
প্রকাশিত হইল। 

লেখক প্রফুল্লচন্দ্রের জীবনের ঘটনাগুলিকে কোন শ্রীধান্ত 
দেন নাই। ঘটনাকে উপলক্ষ্য করিয়া যে মহৎ যন পিছনে 
ক্রিয়াশীল থাকিয়া! এ সকল ঘটনা সম্ভব করিয়াছে, তাহাকেই 
বুঝিতে ও বুঝাইতে চাহিয়াছেন। নে মন সম্পূর্ণ ভারতীয়-- 
সাধনায়-্যাগে ও মীনবগ্রীতিতে সম্বদ্ধ। এই মহৎ মনের স্পর্শে 


9/০ 


আমরাও মহান্‌ হইয়া উঠি-_ইহাই তাঁহার কামনা । বস্তুতঃ 
রফুল্লচন্দরের জীবনের গুরুত্ব একটুও স্থান হয় নাই। জাতির 
সর্ববতোমুখী উন্নতি তাহার কাম্য ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ 
জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রকৃত কর্মোগ্ভম আজ যেন স্তব হইয়া 
গিয়াছে। লঘু উত্তেজনার আবর্তে পড়িয়া জাতি আজ বিভ্রান্ত 
_ কেন্দ্রচ্যুত নক্ষত্রের ন্যায় সে লক্ষ্যহারা হইয়া ছুটিতেছে। এই 
পরাধীন দেশে বিগত একশত বতসর "ধরিয়া ষে বিরাট 
কন্মোছ্যম-__সর্ববক্ষেত্রে জীবনের যে কি অত্যাশ্চধ্য বিকাশ 
সম্ভব হইয়াছে, তাহার উৎস কোথায় তাহাই আমাদের ধীরভাবে 
চিন্তা করিতে হইবে । জাতির উৎস কি শু হইয়া গিয়াছে? 
বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, দেশবন্ধু ও নেতাঁজীর মত মহাপুরুষ এ 
পরাধীন দেশে কি করিয়া সম্ভব হইল? অধীনতার নিম্পেষণ 
সত্ত্বেও জাতির প্রাণ-প্রাচু্য এমন অব্যাহত ধারায় উৎসারিত 
হইল কি করিয়া ?__-তাহাই আজ ভাবিয়া দেখিতে হইবে। 
জাতির পক্ষে আত্মানুসন্ধান আজ অপরিহাঁধ্য ৷ “মনীষী প্রফুল- 
চন্দ্র” সেই আত্মানুসন্ধানে সাহায্য করিবে। একজন পাঠকও 
ষদি এই পুস্তক পাঠে উপকার লাভ করেন__আমাদের পরিশ্রম 
সার্থক যনে করিব। ইতি-__ 


কলিকাতা | 


পৌষ, ১৩৫৪ 


প্রকাশক 





&২- সাই 


ম 


ক ৬ 
চা 


মণীষী পরুন 


আচাধ্য প্ররফুল্পচন্দ্র নবযুগের সম্তান। রাজা রামমোহন 
রায়ের সময় হইতে বাংলায় তথা ভারতে নব যুগের সুচনা হয়। 
মুসলমান আক্রমণের যুগ হইতে শত সহত্র বিধিনিষেধে 
আবদ্ধ হইয়া বাংলার সমাজ-জীবন আড়ষ্ট ও বুদ্ধি পঙ্গু হইয়া 
পড়িয়াছিল। ঠিক এমনই সময়ে ভারতে ইংরাজের অভ্যুদয় হইল। 
ইংরাজের আবির্ভাব জাতির রাষ্তীয় জীবনের পক্ষে যত অশুভই হউক 
না! কেন, ইহার ফলে একটি বিকা'শমান, প্রাণচাঞ্চল্যে বেগবান্‌ সভ্যতা 
বাঙ্গালীর নিদ্রিত জীবনের উপর আলোকপাত করিল। সেই 
আলোকে বাঙ্গালী যেন নূতন করিয়া বাঁচিয়া উঠিল। জীবনের 
বৃহত্তর পটভূমিকায় তাহার নিজ জীবনের রিক্তৃতা সে যেন সুজ্পফ্টভাবেই 
অনুভব করিতে পারিল। বাঁচিবার পরম আগ্রহে সে জীবনকে 
বন্ধনমুক্ত করিবে-_তাহারই শুভ আহ্বান প্রথম শুনিতে পান 
স্রামমোহন রায়। 

রাজ রামমোহন রায় সংস্কারের যে বাঁধ ভাজিয়া৷ দিলেন, তাহারই 
পথ বাহিয়া বাঙ্গালীর জীবনের “মরাগাডে বঝ্ঠার ঢল নামিয় 


২ মনীষী গ্রফুল্লচন্্র 


আসিল-_বিধিনিষেধের সমস্ত গণ্ডী দলিয়! বাঙ্গালীর প্রতিভা! চারিদিকে 
অবাধ প্রসারতার মধ্যে আপনাকে ছাড়িয়া দিল। তাহার চলিবার 
পথে যাহাই বিদ্ব স্থি করিল, তাহাকেই ভাঙ্গিয়া দলিয়া পিষিয়া 
তাহার গতিভঙ্গির অনুকূল করিয়া গড়িয়া লইতে চাহিল। এই 
ভাবে তাহার মন সংস্কারপ্রয়াসী হইয়৷ উঠিয়াছিল।- সমাজের 
সংস্কার, শিক্ষার সংস্কার, শাস্ত্রের সংস্কার, গতানুগতিক আচার ব্যবহারের 
সংস্কার__সবদিকেই সংস্কারের একটা উদ্দাম আকাঙ্গা বাঙ্গালীকে 
যেন পাইয়া বসিয়াছিল। 

এই নবজীবনের বার্ত। লইয়া সেই সময় ধাহারা বাংলাদেশে 
জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে মহত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজ। 
রামমোহন রায়, রামগোপাল ঘোষ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্ত্র 
সেন, রামতন্থু লাহিড়ী প্রভৃতির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ইহার! 
ইহাদের বলিষ্ঠ চিন্তা, অসাধারণ মনীষা ও স্বাধীন মতবাদ দ্বারা 
বাঙ্গালীর জীবনকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করিয়াছিলেন। ইহাদের 
প্রত্যেকেই সংস্কারক ছিলেন। বাঙ্গালীর শ্রোতহীন জীবনে যে 
আবজ্জন! ও পক্কিলতা জমিয়া উঠিম্াছিল, ইহারা তাহা! বিদুরিত 
করিতে বদ্ধ-পরিকর হইয়াছিলেন। 

ভারতের রাজধানী কলিকাতাই তখন এই নূতন ভাবের কেন্দ্র 
ছিল। বাংলার পল্লীগুলি তাহার প্রাচীন পরিবেশের মধ্যে তখনও 
বেশ শাস্তিতেই ঘুমাইতেছিল ; নৃতন ভাবের স্পর্শে তাহাদের বুক 
তখনও চঞ্চল হইয়া উঠে নাই। কেবল স্থানে স্থানে এই নূতন 
চিন্তাধারার সহিত সহান্ুভূতি-সম্পন্ন ছুই এক জন ব্যক্তির সহায়তায় 
ভীহাদের বাস পল্লীতে এক একটি প্রগতি কেন্দ্র গড়িয়া উঠিতেছিল। . 


মনীষী গাডুমচজ ৩ 


খুজনা জেলার অন্তত :রাঁড়ুলি তেমনি একটি গ্রাম। যখন 
সত্রীশিক্ষার নামে দেশের লোক আতঙ্কে শিহরিয়া উঠিত, সেই: সময় 
রাড়লিতে বালিকা বিষ্ভালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরাজী শিক্ষার প্রবর্তক 
হিসাবে তঞ্চলে রাড়ুলিই অগ্রণী ছিল। এ গ্রামের প্রতিপত্তিশালী 
জমিদার হরিশ্চন্জ রায়ের উদ্যোগে দেশে বিধবা বিবাহ প্রচলনের 
চেষ্টাও হইয়াছিল, কিন্তু রক্ষণশীল সমাজের প্রবল বাধার মুখে এই 
বিধবা বিবাহ সেদিন সম্ভব হইতে পারে নাই। 

এমনি সামাজিক পরিবেশের মধ্যে ১৮৬১ খুষ্টীবে ২রা 
আগস্ট তারিখে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রাড়ুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ 
করেন। 

আচারধযপ্রফুল্লচন্দ্র যখন জন্মগ্রহণ করেন, ইউরোপের তখন পূর্ণ 
যৌবন। তাহার জীবনের পাত্র হইতে প্রাণের রস একেবারে উপচিয়া 
পড়িতেছে। জীবন-সম্পদের গুপ্ত গৃহের ছার যতই উদ্ঘাটিত হইতেছে 
এশ্বধ্যের দীপ্তি ততই তাহাকে সম্মুখে আহ্বান করিতেছে। প্রত্যেক 
অগ্রবর্তী পদক্ষেপ জীবনের সম্ভাবনার পরিসরকে যোজনাতীত বাঁড়াইয়া 
দিতেছে। অজানাকে জানিবার, অজেয়কে জয় করিবার পরিপূর্ণ 
আনন্দে দিশাহারা হইয়া সে সন্ুখে ছুটিয়া চলিয়াছে। পর্যবেক্ষণ 
গবেষণা, আবিষ্ষিয়া এবং উদ্ভাবন তাহার জীবনের সর্বক্ষেত্রে নৃতন 
নৃতন আলোকপাত করিতেছে। একনিষ্ঠ সাধক, অক্লান্ত ক্ষ, 
হুঃসাহসিক আবিষ্ষারক এবং নাছোড়বান্দা উদ্ভাবকের আবির্ভাবে 
বিজ্ঞান ও দর্শনের পরিধি কেবলই বাড়িয়া চলিয়াছে। বাস্তব ও 
মানস ক্ষেত্রে পশ্চিমের এই অভূতপূর্ব প্রীবৃদ্ধি বাঙ্গালীর প্রাণে নৃতন 
প্রেরণা জাগাইয়া, বাঙ্গালীকে নূতন উৎসাহে উদ্দীপিত করিয়া, 





৪ মনীষী প্রফু্চন্্র ' 


বৃহত্তর জীবন ও বিপুলতর জন্তাবনার দিকে তাহাকে সবলে আকর্ষণ 
করিতেছিল। 

এই ভাবে প্রাচ্যমনের স্থায়ী গঠনের উপর পশ্চিমের প্রভাব. 
পড়িয়া ভারতের ভাবী কালের সভ্যতার প্রাণকোষে যখন শক্তি. 
সঞ্চার হইতেছিল, এমনি সময়ে প্রফুললচন্্র জম্মগ্রহণ করেন। এই ছুই 
সভ্যতার সঙ্গতিপূর্ণ মিলন কি ভাবে তাহার জীবনে রূপায়িত হইয়াছিল, 
আমরা তাহাই বুঝিতে চেষ্টা করিব । 


বংশ পরিচয় ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ 


১৮৬১ খৃষ্টাব্দে খুলনা জেলার অন্তর্গত রাড়ূলি গ্রামের প্রসিদ্ধ 

রায় চৌধুরী পরিবারে প্রফুল্লচ্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার 
নাম হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী এবং মাতার নাম ভূবনমোহিনী। 
, হুরিশ্চন্দ্র রায়ের পূর্ববপুরুষগণ যশোহর জেলার অন্তঃপাতী বোধ- 
খানায় বাস করিতেন। বোধখানা-_ মহাত্মা শিশিরকুমার ঘোষ 
মহাশয়ের জন্মপল্লী পলুয়! মাগুরা হইতে তিন মাইল উজানে কপোতাক্ষী 
তীরে অবস্থিত। এখানকার রায় চৌধুরী বংশীয়েরা নবাব সরকারে 
কাজ করিয়া বিপুল অর্থ ও যশের অধিকারী হন। এই বংশের রামকৃষ্ণ 
রায় বাদশাহ প্রদত্ত জায়গীর লাভ করিয়া পরবর্তীকালে রাড়ূলি 
আসিয়া বসবাস করেন। হরিশ্চন্দ্রের পিতামহ মাণিকলাল রায় 
প্রথমে কৃষ্ণনগরে, পরে যশোহরে সেরেস্তাদারের কার্ধ্য করিতেন । 
ইহারা প্রস্ৃত উপার্জন দ্বারা পৈতৃক সম্পত্তির যথেষ্ট শীবৃদ্ধিট্দাধন, 
করেন। ইহার! প্রত্যেকেই উৎসাহ ও কর্মমকুশলতা গুণে কর্তৃপক্ষের 
বিশেষ প্রীতিভাজন হইয়াছিলেন। 


শা শশা ও যা নেপাল বাপ্পি তাতাশস্পািপশি 


মনীষী এররচ্র € 


পিতৃপিতামহ হইতে সংক্রামিত গুণগুলি অনুকূল পরিবেশে বৃদ্ধি- 
প্রাপ্ত হইয়া মানুষের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব গড়িয়া তুলে__ ইহাই মনস্তাত্বিক* 
দিগের অভিমত। আমরাও প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন পর্য্যালোচন! করিয়া 
বুঝিতে চেষ্টা করিব--উত্তরকালে যে লোকোত্তর চরিত্র ও সর্ববতো- 
মুখী প্রতিভা! জগং-সভায় তাহার জন্য সম্মানের আসন আহরণ 
করিয়াছিল, তাহার বীজ কোথা হইতে আসিয়াছিল এবং কোন্‌ 
অনুকুল পরিবেশ তাহার পরিপুষ্টির সহায়ক হইয়াছিল। 

কিন্তু মানুষের সহিত প্রকৃতির আদান-প্রদীন সর্বদাই জীবনের 
সদর দরজা দিয়া হয় না। এমন কোন বিশিষ্ট পথ নাই, যে পথে 
চলিলে আমরা মানুষের জীবনের মূল রহস্তে যাইয়া পৌছিতে পারি বা 
প্রাণের সেই অনির্বাণ অগ্নিশিখার সন্ধান পাই, যেখানে আহৃত 
হইয়া বাহিরের সমস্ত জিনিসই তাহাদের বিশিষ্ট রূপ ত্যাগ করিয়া 
জীবনের অঙ্গ হইয়া উঠিতেছে। সেই জন্যই বংশ তালিকা, শিক্ষা- 
দীক্ষা ও আচারব্যবহার সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় বলার পরও 
মহাপুরুষদের জীবন যেন রহস্তারৃত থাকিয়া যায়। সহস্র ঘটনার বিপুল 
আবর্ত হইতে হয়তো একটা তুচ্ছ ঘটনা-_কর্মমমুখর জীবনে সহত্র 
রাগিণীর মাঝখানে হয়তো একটি অজ্ঞাত মৃদু স্থর কেমন করিয়। 
হুদয়ে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহারই প্রভাবে জীবনদেবতা সকলের 
অজ্ঞাতে জীবনকে যেন বিশিষ্ট আকারে রূপায়িত করিয়! তুলেন। 

মানুষের জ্ঞানের বাহিরে সেই মানস রাজ্যের রহস্তময় অনন্ত 
গম্ভীর বিশালতা ! বৈজ্ঞানিকের সুঙ্ধ দৃষ্টি আজও সেখান হইতে 
ফিরিয়! আসে-_মানুষের কল্পনা সেখানে প্রতিহত হয়। সেই ছুজেপন 
জীবন-বিকাশের ইতিহাস-__কেমন করিয়া একটির পর একটি করিয়া - 





রি মমীকধী এ্রদুরাচ 


আবে পাপড়িগলি খুলি দে 
বিফল্িত হইয়া উঠে__তাহা আমর! জানিনা। সুতরাং প্রফুল্পচন্রের 
জীবদ পর্য্যালোচন! কালে পিতামাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ্ বাহ 
পরিষেশের সন্থায়তায় প্রফুল্লচন্দ্রের মত মহাপুরুষ গড়িয়া! তুলিয়াছিল, 
তাহাই আমরা বুঝিতে চেষ্টা করিব। 

হরিশ্চজ্্র রায় প্রফল্পচন্দ্রের পিতা । রাড়,লিকে কেন্দ্র করিয়। 
তাহার চারিপাশে কয়েকখানি গ্রাম লইয়া! তাহার জমিদারী । সুতরাং 
যথেষ্ট গ্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠার সহিতই তিনি রাড়ুলি গ্রামে বসবাস 
করিতেন। শিক্ষায় ও সংস্কৃতিতে তাহার সমকক্ষ লোক এ অঞ্চল্গে 
বড় কেহ ছিল না। মাঞ্জিত রুচি ও শোভন আচরণ কাহার সকল 
কাজেই একটা বৈশিষ্ট্যের ছাপ আকিয়া দিত। বাল্যকালে হরিশ্চজ্র 
এক মৌলবীর নিকট পারসী ভাষা শিক্ষা করেন। পরে ইংরাজী 
শিক্ষার জন্য কৃষ্ণনগর কলেজে গমন করেন। কি চরিত্র মাহাক্মোযে, 
কি পাণ্তিত্যের গভীরতায় রামতন্ু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গ সমাজে 
বিশেষ খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন । তাহারই পাদমূলে বঙিয়া শিক্ষালাভ 
করার সৌভাগ্য হুরিশ্চজ্জের হইয়াছিল। পারিবারিক কারণে শিক্ষা 
অসমাপ্ত রাখিয়া তাহাকে বাড়ী ফিরিতে হইয়াছিল, কিন্তু ইংরাজী 
ভাষার উপর তাহার প্রবল অনুরাগ কোন দিনই ক্ষুপ্ন হয় নাই। 
উত্তরকালে, তিনি ইংরাজী শিক্ষাভিলাধী দেশবাসীর সুবিধার জগ 
উইলস্মল্‌ ডিক্সনারী নামক একখানি ইংরাজী-বাংলা অভিধান 
লবন করিয়াছিলেন । সংস্কৃত ভাষাও তিনি বেশ ভাল ভাবেই শিক্ষা 
করিয়াছিলেন 

গারদীক কধি হাফিজ হরিশ্চন্্রকে যথেষ্ট প্রভাবিত করিয়াছিলেন । 


মনীহী শ্রযুচজ ৭ 
হাফিজের কবিতা পাঠের ফলে তাহার মনের সংস্কারের বন্ধনগুলি শিথিল 
ইইয়াছিল। ইংরাজী শিক্ষার ফলে সেই বন্ধনগুলি এখন তাহার মন 
হইতে একেবারে খসিয়া পড়িল । ভূগোল ও বিদেশী ইতিহাসের জ্ঞীন 
জীবন ও সমাজ সম্পর্কে তাহার দৃষ্টিভঙ্গীকে সম্পূর্ণ পরিবন্তিত 
করিল। যাহা অতীত, যাহা পুরাতন, যাহা গতানুগতিক, তাহারই 
সম্পর্কে একটা ক্ষুব্ধ বিদ্রোহের মনোভাব তখনকার শিক্ষিত 
সম্প্রদায়ের ভিতর পরিলক্ষিত হইত। হরিশ্ন্দ্রও ইহার প্রভাব হইতে 
মুক্ত ছিলেন না। নূতন জীবনের আস্বাদ ও স্বাধীন চিন্তাধারা 
বাঙ্গালীর ভাবজগতে যে আলোড়ন স্থ্টি করিয়াছিল, তাহার তরঙ্গ 
ত্বাহারও মনকে দোল! দিয়াছিল। 

রাড়ুলি একটি প্রগতিকেন্্র রূপে গড়িয়া উঠিয়াছিল, সে কথা 
পূর্বেই বলা হইয়াছে। একমাত্র হরিশ্ন্দ্রের চেষ্টায় ইহা সম্ভব 
ইয়াছিল। পল্লীতে পল্লীতে খা গুরু'র (২) প্রতাপের তলায় শিশু 
“পড়ুয়ার' চিত্রকোরক যখন শুকাইয়া উঠিতেছিল, মেয়েদের শিক্ষা 
সম্বন্ধে কোন চিন্তা যখন গ্রামবাঁসীরা মনেও স্থান দিতে পারিত না, 
এমনই সময়ে হরিশ্চন্দ্র নিজ গ্রামে ছেলেদের জন্য মধ্য ইংরাজী 
বিচ্ভালয় ও মেয়েদের জন্য প্রাথমিক পাঠশালা স্থাপন করেন। সেই 
সময়ের সংবাদপত্র “সংবাদ প্রভাকর” ও “সংবাদ সাধুরঞ্জন” এই সম্পর্কে 
হরিশ্চন্দ্রের ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছিল। প্রায় একই সময়ে রাড়ুলির 
পাশাপাশি কাটিপাড়া গ্রামেও একটি ( মধ্য ) ইংরাজী বিষ্কালয় স্থাপিত 
হইয়াছিল। কাটিপাড়ার ঘোষবংশীয় জমিদারগণ এই কার্য্যের উদ্ভো্তা 
__ বর্তমান শিক্ষা প্রবর্তনের আগে মুললমান পত্ডিতেরা গ্রামে গ্রামে পাঠশালা 
খুলিতেম! ইহাদের বেজরদণ্ড ছাত্র তাড়না প্রসিদ্ধি লাভ 'বরিরাছিল। 


৮ মনীষী প্রসুষ্লচন্্র 








ছিলেন সত্য, কিন্ত হরিশ্চন্দ্ের উপদেশ ও পরামর্শ তীহাদদিগকে 
উৎসাহিত করিয়াছিল । বস্তৃতঃ বিগ্ার উপর হরিশ্চন্দের অনুরাগ অত্যন্ত 
প্রবল ছিল। শুন! যায়, কলিকাতায় বাসকালে তিনি বিগ্ভাসাগর মহা- 
শয়ের উপর স্বীয় পত্রী তুবনমোহিনীর শিক্ষার ভার অর্পণ করিয়াছিলেন। 

এই দুরতম পল্লীতে হরি“ন্্র নিজের জন্য মৃল্যবান্‌ গ্রন্থসম্থলিত 
একটি গ্রন্থাগার গড়িয়া! তুলিয়াছিলেন। আচার্ধ্যদেবের আত্মচরিত 
হইতে আমরা জানিতে পারি-_কেরীকৃত “বাইবেলের অনুবাদ" সৃত্যপ্য় 
বিষ্ভালস্কারের “প্রবোধচন্দ্রিক” ও 'রাজাবসী', লপনের 'িরখবীবলী” এবং 
কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের “এন্সাইক্লোপিডিয়। বেঙ্গলেন্সিস্‌ঃ 
প্রভৃতি গ্রন্থ তাহার গ্রন্থাগারে ছিল । পরীতে বসিয়াও দেশের নবীন 
ভাবধারা ও জগতের আধুনিকতম ঘটনার সহিত যোগাযোগ রক্ষার জন্ত 
তিনি বহু সংবাদ-পত্র ও সাময়িক-পত্রের নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। 
তন্ববোধিনী, বিবিধাবর্পংগ্রহ, হিন্দু পত্রিকা, সোম প্রকাশ--এই সকল 
সাময়িকী ও সংবাদপত্র তীহার গ্রন্থাগারটিকে সমৃদ্ধ করিয়াছি্ন। 
গ্রাম্য সন্কীর্ণত। ও কুদংস্কারের আবহাওয়ার মধ্যে তাহার মাজ্ফিত রুচি 
ও সংস্কৃতির অনুকূল একটি জ্ঞান ও ভাবের ক্ষুদ্র পরিমগ্ডল তাহার 
গৃহের মধ্যেই তিনি রচনা করিয়াছিলেন । 

হরিশ্ন্ত্র রাড়ুলিতেই বসবাস করিতেন। কিন্তু কলিকাতার 
সঙ্গেই তাহার বেশী যোগ ছিল। কলিকাঁতার তৎকালীন শিক্ষিত ও 
প্রগতিশীল সমাজের সহিত তিনি .ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন। 
মহারাজ! যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, রাজা দিগম্বর মিত্র, কৃষ্দাস পাল, 
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিষ্ঠাসাগর প্রভৃতি সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যকিদের 
সহিত কীহার পরিচয় ছিল। তিনি কিছুকালের জন্ত ব্রিটিশ ইত্ডয়ান 


মনীষী প্রফুল্লচন্দ্র "৯ 


এসোসিয়েশন নামক জমিদারসভার সদস্যও মনোনীত হইয়াছিলেন। 
এই সমস্তই তাহার ষোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। . 
হরিশ্চ্্র গ্রামাঞ্চলে প্রথম ব্যাক্কের প্রতিষ্ঠাতা । তখন চোর ডাকাতের 
উপদ্রবে কাহারও সঞ্চিত অর্থ নিরাপদ ছিল না এবং কোন নিরাপদ্‌ 
উপায়ে টাকা খাটাইয়া৷ ধনবৃদ্ধি করিবার ব্যবস্থাও দেশে ছিল না॥ 
হরিশ্চন্দ্র দেশের এই অভাব অনুভব করিয়া তাহার স্বগ্রামে একটি লোন্‌ 
আফিসের কাররার প্রতিষ্ঠা করেন। তীহার সততার জন্ হরিশ্নদ 
সকলেরই আস্থাভাজন ছিলেন এবং অনেকেই তাহার লোন্‌ আফিসে 
টাকা জম! দিয়াছিলেন। পরে এই কারবারে লোকসান ঘটিয়াছিল। 
কিন্তু হরিশ্ত্দ্র নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াও সকলের আমানতি টাকা নিজ 
হইতে শোধ করিয়া দিয়াছিলেন। 
এইরূপ সংস্কৃতিসম্পন্ন প্রতিভাবান্‌ পিতার পুত্র হওয়ার সৌভাগ্য 
প্রফুল্পচন্দ্রের হইয়াছিল। তাহার মাতা ভূবনমোহিনীও যে তাহার 
পিতার উপযুক্ত সহধর্টণী ছিলেন__একথা আমরা নিঃসন্দেহে বলিতে 
পারি। ভুবনমোহিনী খুলনা জেলার অন্তর্গত ভাড়াসিমলা গ্রামে 
বিখ্যাত বন্ুবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম নবকৃষ্ণ বন্থু। 
ভূবনমোহিনীর চরিত্র সম্পর্কে বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করিবার 
মত উপাদান আমাদের নাই। বর্তমীন সমাজে যে মর্ধ্যাদাবুদ্ধি লইয়া! 
সকলে নারীর কথ! ভাবিতে শিখিতেছে, একশত বৎসর পূর্বে নারী 
সম্পর্কে সেরূপ কোন অন্কুল মনোভীব সমাজের ছিল ন!। বর্তমানের 
নারী আত্ম-সচেতন-__আত্মপ্রতিষ্ঠার মনোভাব তাহাদের মধ্যে সুস্পষ্ট । 
সমাজও তাহাদের এই মনোভাব সমর্থন করিতেছে। অন্দরের 
বাহিরে সাধারণ ক্ষেত্রে তীহাদের কর্্কুশলত৷ নানাতাবে রূপায়িত 


১০ মমীধী প্রফুল্লচন্্র 


হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু শতবৎসর পূর্বে নারী পরিবারসর্ববন্ম ছিলেন । 
সংসারের দৈনন্বিন কাজের মধ্য দিয়া সুনিপুণ গৃহিণী হইয়া তাহারা 
গড়িয়। উঠিতেন। সংসারের বাহিরের জগতের সঙ্গে তীহাদের কোন 
যোগ ছিল না। তাহার উপর, তৃবনমোহিনী-জমিদার গৃহের বধূ ছিলেন 
এবং জমিদার গৃহের বধূরা চিরদিনই অনূর্ধ্যম্পশ্যা থাকিতেন। স্মৃতরাং 
তাহাকে বুঝিতে, আমাদিগকে অনুমানের উপর নির্ভর করিতে হইবে। 
যে শিল্পী চিত্রকে সৌন্দর্য্য ভরিয়! তুলে, তাহাকে না দেখিলেও,, 
চিত্র দেখিয়া সেই শিল্পীর দক্ষতা ও শিল্পচাতুর্ধ্য সম্বন্ধে আমর! 
নিঃসন্দেহ হইতে পারি। সেইরূপ প্ররফুল্লচজ্্রকে দেখিয়া তুবন- 
মোহিনী সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা আমরা গড়িয়া! তৃলিতে 
পারিব। ভূবনমোহিনী প্রফৃল্লচন্দ্ের মাতা। প্রফুল্লচন্দ্র ঠাহারই' 
ক্রোড়ে শৈশব অতিবাহিত করিয়াছিলেন। পরবত্বী কালে যে 
প্রতিভার দীপ্তি ও চরিত্রের মাধুর্য্য দেশকে সমূজ্জল করিয়া তুলিয়াছিল, 
তাহা যে আংশিক ভাবেও তাহার মায়ের চরিত্র হইতে প্রতিফলিত 
হয় নাই-_একথ! কে বলিবে ? 
তববনমোহিনীর মন যদি গোঁড়ামি ও কুসংস্কারে পূর্ণ থাকিত, তাহা 
অন্তর্লোকে একটি হুর্লংঘ্য ব্যবধান গড়িয়া উঠিত। কিন্তু আমর! 
্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিত হইতে জানিতে পারি- প্রত্যেক সাংসারিক 
সমস্তায় হরিশ্চ্দ্র পত্বীর পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। পরস্পরের এই 
সহযোগিতা দাম্পত্য-সন্ভাবেরই পরিচায়ক। আরও বুঝিতে পারি__ 
হরিশ্চন্্র তাহার স্ত্রীর পরামর্শ মূল্যবান মনে করিতেন। বুদ্ধিম্তী ও 
গুণবর্তী মহিলারাই সংসারে এই জাতীয় সম্মান লাক করিয়! থারেন। 


মদীধী . ্রফুরচজ 


হয়িশ্চঙ্রোক্ধ প্রগতিশীল মনের ছোঁয়াচ ভূবনমোহিনীর মনেও 
লাগিয়াছিপ। কলিকাতায় অবস্থান কালে: হরিশ্ন্দ্রষে বিস্ভাসাগর 
মহাশয়ের নিকট তুবনমোহিমীর শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, ইছা 
তববনমোহিনীর জ্ঞানপিপান্থ ও সংস্কারমুক্ত মনেরই পরিচায়ক। 
প্রফুল্পচন্দ্রের বিলাত যাত্রায় মাতার সমর্থন__-এ একই মনের পরিচয় 
প্রদান করে। 

এইরূপ উদার পিতামাতার কোলে প্রফুল্পচন্দ্র জন্মগ্রহণ করিয়া- 
ছিলেন। তাহাদের রক্ষণাবেক্ষণে প্রফুল্লচন্ছের শিশুদেহ ও শিশুমন 
পরিপুষ্টি লাভ করিয়াছিল। অনেক স্ুপণ্ডিত ও কৃতী পিতার পুত্রকে 
মুর্খ ও বিপথগামী হইতে দেখা যায়। পিতা-পুত্রের মধ্যে ভাষের, 
আদাম প্রদানের অভাবই এই ছুরবস্থার জন্য দায়ী। পিতা সম্পর্কে 
মানুষ তাহার আদিম মনোভাব হইতে সম্পূর্ণ যেন মুক্ত হইতে পারে 
নাই। একটা ভয়ার্ত সন্ত্রম বোধ পুত্রকে পিতা হইতে দূরে রাখিয়া 
দেয়। পিতাও অনেক ক্ষেত্রে এই দৃরত্বকে প্রশ্রয় দিয়া গৌরব বোধ 
করেন। ফলে পুত্রের মনের গঠন ও চরিত্রের প্রবণতা সম্পর্কে পিতা 
সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকিয়! যান। পিতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা! পুত্রের পক্ষে কি 
গ্রভৃত কল্যাণপ্রদ হয়, মিলের আত্মজীবনী পাঠে তাহ! আমরা জানিতে 
পারি। কেবলমাত্র পিতার শিক্ষাগুণে ষোল বৎসর বয়সে দর্শনশাস্তে 
পারদর্শী হইয়া এই বিশ্ববিখ্যাত মনীষী বিদ্বতসমাজে সকলের সম্মান- 
ভাজন হুইয়াছিলেন। প্ররফুল্লচন্দ্রের সহিতও তাহার পিতার ব্যবহার 
লয়ল, উদ্দার ও কপট-গাস্তীরয্য-বর্জিদ্বত ছিল। তিনি মুখে মুখে পুক্র- 
. দিগকে শিক্ষা দিতেন। তাহার সহিত গল্প করিতে তাহারা আনন্দ 
লী ঝরিত।. স্বাধীন ভাবে কথ! বলিবার ন্থযোগ হইতে বাল্যকালে 





১২ - মনাষা প্রফুল্লচন্ 


তিনি পুত্রদিগকে কোনদিন বঞ্চিত করেন নাই। প্রফুললচন্দর একস্থানে 
লিখিয়ছেন--পিতার ভৌগোলিক জ্ঞন সম্পর্কে জ্ঞাত হুইবার জন্য 
আমি একবার জিজ্ঞাস! করিয়াছিলাম-_সিবাষ্টোপল কোথায় ।-_শিশু 
মনের বল্লাশৃন্য হাস্তাস্পদ কৌতৃহুল ! পিতা-পুত্রের মাঝখানেন্রঅকৃত্রিম 
মাধুর্য্যের বিষ্যমানতাই পুত্রকে এইভাবে কৌতুহলী করিতে পারে। 


প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শৈশবের শিক্ষ। 


প্রকৃতি মানবের শ্রেষ্ঠ শিক্ষয়িত্রী। শিশুর ছয়মাঁস বয়স হইতেই 
এই শিক্ষাকার্ধ; আরম্ত হয়। শিশুর বুভূক্ষু অন্তর জাগ্রত ইন্সিয়ের 
দ্বার পথে শবম্পর্শরূপময় প্রাকৃতিক বস্ত নিচয় যেন লুটিয়া লইতে 
থাকে। সহজ আনন্দের মধ্য দিয়া প্রকৃতির সহিত শিশুমনের যে 
সংযোগ স্থাপিত হয়, তাহাই শিশুর অন্তরশায়ী ভবিষ্যৎ মানুষের 
অস্কুরটিকে পরিপুষ্ট করিতে থাকে । বেত্রাহত শিশুর অনিচ্ছুক মনের 
উপর চাপায় দেওয়া মানুষের নীরস শিক্ষা-ব্যবস্থার কঠোরতা তাহার 
মনের অবাধ বিক'শের পথে বিত্ব স্ষি করে এবং তাহার আয়াঁসসাধ্য 
প্রচেষ্ট ও অধ্যবসায়ের ফলে মানুষ যাহা শিক্ষা করে, তাহা কখনই 
প্রকৃতিদত্ত শিক্ষার হ্যায় তাহার জীবনের সহিত একাঙ্গ হইয়া উঠে না। 
স্বতরাং আমর! প্রফুললচন্দ্রের জন্মভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশটিরই 
আলোচন! করিব। | 

প্রফুল্লচন্দ্রের জন্মস্থান রাড়লি কপোতাক্ষী নদীতীরে অবস্থিত। . 
মাইকেলের অমর লেখনী মুখে এই কপোতআক্ষী নদী অমরত্ব লাভ 
করিয়াছে । আজ এই নদী ক্ষীণকায়া। ইহার উৎস শুক হইয়া 
গিয়াছে। উপর দিকে ইহার অর্থাংশের বহতা একেবারে নষ্ট হইয়া 


মনীষী গ্রফুল্লচন্জ ১৩. 


গিয়াছে । ফলে ইহার তীরবর্তী অঞ্চল সমূহের দিনদিনই অবনতি 
ঘটিতেছে। কিন্তু একদিন এই নদীতীরবর্তী অঞ্চল সমূহ সভ্যতার 
একটা বিশিষ্ট এতিগ্ গড়িয়া তুলিয়াছিল। এমন একদিন ছিল, যখন 
এই নদীধৌত অঞ্চল সমূহ ধনে, জনে,£সমৃদ্ধিতে, শিক্ষায় এবং সভ্যতায় 
বাংলাদেশে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছিল। এই নদীর 
লহরী লীলায় সেদিন বুঝি জীবনসঙ্গীতের মৃদু গুঞ্জন ধ্বনিত হইয়া 
উঠিত! সাগরদীড়ীর বালক মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দের উদাত্ত গম্ভীর 
অনুরণন একদিন বুঝি এই নদীর বুকেই শুনিতে পাইয়াছিলেন। 
মহাত্মা শিশিরকুমার তাহার মাহাত্য্ের বীজ বুঝি এই নদীতীরেই 
কুড়াইয়া পাইয়াছিলেন। এই নদীতীরস্থ অঞ্চলসমূহে এমন অনেক 
মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, যাঁহাঁদের কণ্ধ্নশক্তি জীবনের সঙ্কীর্ণতর 
ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ [ছিল, এবং ধাহাদের জীবন জাতীয় উত্তরাধিকাঁরের 
মহান্‌ মর্যাদা লাভ করিতে পারে নাই। কিন্তু মহত্বের আদর্শে ও 
চরিত্র গৌরবে তীহার! মানব জাতির পুজ| পাঁইবার যোগ্য এবং তাহাদের 
জীবন সকল মানুষের অনুকরণীয় । 

রাড়ুলির প্রাকৃতিক পরিবেশও অতি মনোরম। রাঁড়,লির প্রান্ত 
দিয়। বহিয়! বহিয়৷ কপোতাক্ষী নদী দৃষ্টির বাহিরে কোথায় যেন মিলাইয়। . 
গিয়াছে। তারই তীরে তীরে “হুরগোজার অসংখ্য গাছ ফুলে ফুলে 
নদীতীর যেন আলো! করিয়। রাখে । এখানকার নীলোজ্বল আকাশ-_- 
মহাপুরুষের বিরাট অন্তরের সহিতই_বুঝিবা৷ উপমেয়-_ৃষ্টির বাহিরে 
কুয়াশায় কোথায় যেন।তার সীম! হারাইয়। গিয়াছে । বর্ষায় নিবিড় 
কালো মেঘ আসিয়া এই আকাশের বুক আধার করিয়া ফেলে; কখনও 
বা আলে! মেঘের খেলায় আকাশের গায়ে ইন্্রধমূর বরণচ্ছটা ফুটিয়া 


১৪ মনীষী রুমার 


উঠে। আচ্ের সৌপ্রদবর্শখুলর প্রান্তর-স্বব্ষার় তারই বুকে ধানগাহের 
মায় সখা সবুজের সমায়রাহ লাগিয়া! যায়, 'ল্ীতে লক্্মী যেন দিজের 
হাতে তাহার উপর সোনা! বিছাইয়া দেন। আর বর্ষার নদী ? বর্ষায় 
নদীর জল ফাঁপিয়! উঠে; উদ্দাম জলল্োত ফুলিয়। রুষিয়া পথঘাট 
ভাঙ্গিয়া, খাল বিল ভাসাইয়! অশ্রীন্ত গতিতে বহিয়। চলে ; তার অশ্রাস্ত 
কল্লোলে জীবনেরই গান বুঝি উদগীত হইতে থাকে-_তার উদ্দাম 
গতিবেগ-_সংগ্রামশীল হাঁর-না*মাঁন! ছুরবার জীবনগতিরই ইঙ্গিত বুঝি 
তাহাতে! রাডুলির এই বিচিত্র পল্লীপ্রকৃতির মধ্যে প্রফুল্লচন্দ্ 
জন্মগ্রহণ করেন। রাঁড়ুলির এই বিচিত্র পল্লীগ্রকৃতির মধ্যেই প্রফু্- 
চন্দ্রের শিক্ষা আরস্ত হয় । রাড়লির এই পল্লী-প্রকৃতির মধ্যেই প্রকুল্লচন্্ 
সাহার জীবনের প্রথম নয়টি বৎসর 'অতিবাহিত করেন। মহাকালের 
: বুকে বর্তমানের পদচিহ্ন আকিয়া দিনের পর দিন আসিয়াছে, দিনে দিনে 
মাঁস, মাসে মাসে বশসর ঘুরিয়া গিয়াছে-_-শিশু প্রফুল্লচন্দ্রও দিনে দিনে 
বড় হুইয়! উঠিয়াছেন। মহাকালের বুকে সবই মুছিয়৷ যায়, প্রফুল্লচন্দোর 
জীবনের এই নয়টি বসরও কি মুছিয়! গিয়াছে? এই. কালজয়ী অগর 
'মহাপুরুষের জীবনটিকে সমগ্রভাবে দেখিলে তাহা তো মনে হয় না। 
তীঁহার জীবনের দিক হইতে বিচার করিলে এই নয়টি বরই অপূর্ব 
ব্যঞ্রনায়্ আমাদের মনের উপর ভাঙগিয়া উঠে। তীহার পরবর্তী জীবনে 
যে লোকোত্তর মানবতার অপূর্বব প্রকাশ আমরা দেখিতে পাই, প্রকৃতি 
এই নয় বশসর ধরিয়। প্রফুল্লচন্দ্রের মধ্যে তাহারই সন্তাবনা রচনা 
করিতেছিলেন.৷ শবা্পর্শরূপরস-গন্ধময় বিচিত্র এশর্য্যসস্তারে তীঁহার 
হবদয় ভরিয়া দিয়া প্রকৃতি বুঝি পরবর্তীকালের মহামানবতার উপযোগী 
করিয়া প্রফুল্পচন্ত্রকে গড়িয়া তুলিতেছিলেন। 


মনীষী গাছ. ১৫ 

'আমর। কল্পনার চোখে ষেন দেখিতে পাই-_পাঁধীর কলরৰ সুখরিত 
পল্লীর শীস্ত স্সিঞ্ধ পথে, নদীর বুকে, প্রান্তরে ' বৈচিত্রময় শ্রাকৃতিক 
সম্পদের মাঝখানে এই ভবিস্তৎ বৈজ্ঞানিকের শিশু হৃদয় উচসিত 
আনন্দে ক্ষণে ক্ষণে দোলা! খাইয়া উঠিতেছে; আর সমস্ত প্রাকৃতিক 
দৃশ্য দিনের পর দিন সহজ আনন্দে তাঁহার হৃদয়ে আহত হইয়া! 
চলিয়াছে। চন্দ, সূর্য্য, পৃথিবী, নক্ষত্র, নদী, প্রান্তর প্রকৃতির এই 


সমস্ত রহ্য-লোক বালক প্রফুল্লচন্দ্রের অস্প মনের উপর কিরূপ 


প্রভাব বিস্তার করিত, তাহ। আমাদের জান! নাই । সাত বৎসর বয়সে 
আপেলের অধঃপতন নিউটনের মনে জিত্ভাঁসার যে বিরাট আবেগ শ্ঠি 
করিয়াছিল, তাহাই তীহাকে দিনের পর দিন জ্যামিতিক প্রগতিতে 


স্পীকার 


ঠেলিয়' লইয়া গিয়াছিল প্রজ্ঞালোকের দিকে । তেমন কোন বিরাট, 


আলোড়নে প্রফুল্লচন্দ্ের চিত্ত আন্দোলিত হয় নাই। বাঁংলার ঘরের 
আর দশটি ছেলের মতই তিনি একজন ছিলেন। নয় বৎসর বাঁ দ্ধ 
বয়স পধ্যন্ত যে সমস্ত প্রশ্ন তাহাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিত, তাহা এবং 
পিতামাতার নিকট হইতে প্রাপ্ত তাহার স্থৃচিন্তিত উত্তর-_্যার উইলিয়ম 
জোন্দের মত তীহার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎস! গড়িয়া তুলিতে সাহায্য 
করিয়াছিল কিনা__তাহাঁও আমরা জানি না। তবে তীহার পরবর্তী 
কালের পরিণত মনের গঠন দেখিয়। আমরা বুঝিতে পারি, পৃথিবীর 
চিরন্তন 'কেন' বাল্যকাল হইতেই তাহার মনের উপর ক্রিয়া করিতেছিল। 
পৃথিবীর দৃশ্যাবলী ইন্দ্রধনুর বরণচ্ছিটায় তাঁহার বালক মনের কুয়াশার উপর 
ফুটিয়। উদ্জয়প্রফুল্লচনদরের চিত্তকে বিস্ময়ে কৌতুহুলে ভরিয়! দিত। এই 
জাগ্রত কৌতৃহল দিনের পর দ্দিন তিল তিল করিয়া! গ্রফুল্লচন্দ্রের অন্ত- 


লোকে পরবর্তী কালের বৈজ্ঞানিকটিকে পরম যত্তে গড়িয়া তুলিতেছিল। 


২৬ মনীষী প্রয়ু্নচজ 


বস্ততঃ প্রতিভাবান . জ্ঞানী এবং মনীষী ব্যক্তিদিগের জীবন 
পর্ধযালোচনা করিলে আমরা দেখিতে পাই, একটি লোকাতীত আনন্দের 
আকর্ষণ তীহাদিগকে মন্্মুগ্ধের মত বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়া সবলে 
টানিয়৷ লইয়া গিয়াছে জ্ঞানলোকের দিকে । দৃঢ় অধ্যবসায়, সুদৃঢ় 
সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম উন্নতি লাভের উপায়-_-আমরা মৌখিক 
উপদেশ দ্বারা ও আখ্যায়িকার মধ্য দিয়! এই নীতি-বাঁক্য সর্বদাই 
বালকদের শিক্ষা দিতে চেষ্টা করি। অনেকের মতে প্রতিভার 
নিরানবব,ই ভাগই পরিশ্রাম।. কিন্তু অধ্/বসায়, সংকল্প বা পরিশ্রমের 
মধ্যে যে আয়াস স্বীকার বা আত্মনিগ্রহের ইঙ্গিত রহিয়াছে, প্রতিভাবান্‌ 
ব্যক্তিদিগের জীবনে, সেই আত্মনি গ্রহের অভাবই পরিলক্ষিত হয়। 
তাহাদের জ্ঞানসাধনার চলিবার পথে পরিশ্রম, সংকল্প, অধ্যবসায়__ 
এই সমস্ত গুণগুলি অন্তরের আবেগ হইতে সহজ আনন্দে ফুলের মতই 
ফুটিয়া উঠে। নীতি শান্তর অনুশাসন মানিয়া! তাহারা কেহ অধ্যবসায়ী 
ব! পরিশ্রমী হন নাই। আনন্দের তাগিদেই তাহারা অধ্যবসায়ী ব| 
পরিশ্রমী হইয়াছিলেন। জ্ঞান সম্পর্কে মনের এই রসানুভূতিই 
তাহাদের উন্নতির মূলে সর্বদা ক্রিয়াশিল ছিল। 

্রফুল্লচন্দ্রের জীবন পর্যালোচনা করিলে আমর! এ একই সত্যে 
উপনীত হুইব। জানার কৌতুহল-_জ্ঞান .লাভের আগ্রহ বাল্যকাল 
হইতেই ঠাহার জীবনের মুলে রস সঞ্চার করিয়াছে । হুরিশ্চন্দ্র শিক্ষিত, 
প্রতিভাবান, মার্জিতরুচি এবং সংস্কৃতিবান লোক ছিলেন। তাহার 
শিক্ষা দীক্ষার অনুকূল ও পরিপোঁষক একটি গ্রন্থাগার তিনি নিজের 
বাসগৃহেই প্রতিষ্ঠারুকরিয়াছিলেন। সমসাময়িক সংবাদ ও অন্যান 
বহুতথ্য পুর্ণ বিভিন্ন সাময়িকী ও সংবাদপত্র তাঁহার এই গ্রন্থাগারের 





মনীষী প্রয়াত ১৭ 


সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করিত। এই জ্ঞান-লাভের অনুকূল আবেইনীর মধ্যে 
বালক প্রফুল্পচন্দ্রকে আমরা দেখিতে পাঁই। -পুত্রের জীবন গঠুনে 
বুদ্ধিমান পিতার আগ্রহ এবং পরস্পরের মধ্যে ভাবের বিনিময় প্রযুলপ- 
চন্দ্রের জ্ঞানক্ষুধা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করিয়াছিল। প্প্রফুল্লচন্দ্র তীহার 
'আত্মচুরিতে' এক স্থানে বলিয়াছেন-__“বই পড়া অপেক্ষা পিতার সঙ্গে 
কথা বলিয়া আমরা অনেক বেশী শিখিতাম। তাঁহার নিকটে যাইয়া, 
কথাবার্তা বলিতে ও গল্লা্দি করিতে তিনি আমাদের সর্ববপ্রকার স্থযোগ 
দিতেন!” পিতার সাহচর্ষ্যে নয় বৎসর বয়সেই প্ররফুল্লচন্দ্রের ভূগোল 
ও ইতিহাসের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ জন্মিয়াছিল। এই বয়সেই 
তিনি পিতার, মুখ হইতে “ইয়ং এর “নাইট থটস্‌” € ০9/788 2281 
11)70806 ) এবং 'বেকনের' নিভাম্‌ অরগানাম্‌, (88900৪ ০০ 
01£81081) )-_এই পাণ্তিত্যপূর্ণ বই ছুইখানির নাম প্রথম শুনিয়া- 
ছিলেন। এক স্থানে তিনি বলিয়াছেন আমার মন কৌতৃহল-প্রবণ 
ছিল। পড়াশুনাতেও আমার অনুরাগ ছিল। 

বুঝিতে না পারিলেও পিতার গ্রন্থাগারের পুস্তকগুলি তিনি 
নাড়াচাড়া করিতেন। এই “নাড়াচাড়া” করার পিছনে থে মন 
ক্রিয়াশীল ছিল, তাহার সম্পর্কে খুব সুস্পষ্ট না হইলেও, মোটামুটি 
একটা ধারণা আমরা গড়িয়া লইতে পারি। তাঁহার পিতার দ্বারা 
কোন পুস্তক সঙ্নিবিট কোন ঘটনার, উল্লেখ সেই পুস্তক সম্পর্কে 
্রফুল্পচন্দ্রের মনকে কৌতৃহলী করিয়া তুলিত। অক্ষরের শৃঙ্খলে 
আবদ্ধ ভাবগুলির সহিত পরিচিত হইবার অপার কৌতুহল লইয়া 
্রফুল্চন্্র পুস্তকের পাতার পর পা! উল্টাইয়৷ যাইতেন। শ্রেণীবদ্ধ 
অক্ষরগুলির দিকে চাহিয়া চাহিয়া জানিবার আগ্রহ তাহার তীব্রতর, 





১৮ মনীষী 'গ্রফুল্লচম্তর 


স্পা পি্পেস্পপ্া্পিশিশাশাসিপাশ 





হইয়া উঠিত। শব্দের পর শব্দ যোজনা করিয়া মনে মনে পুস্তকের 
বাক্যগুলি গড়িয়া তুলিতেন এবং তাহার বাল্যের অপরিপুষ্ট মনের 
সাহায্যে এ বাক্যের একটি অর্থও বোধ হয় গড়িয়! তুলিতে চাহিতেন। 
বিখ্যাত ইংরাজ সাহিত্যিকদের লেখার সংকলন হইতে রুচিসম্মত 
অংশগুলি তিনি মুখস্থ করিতেন। এই বালক বয়সেই *ঠাহার 
জ্ঞানাভিলাষ যে কিরূপ তীব্র হইয়াছিল, তাহার নিজের লেখ! হইতেই 
আমরা তাহ! জানিতে পারি। 1[20018008 18 1118 0098 0100, 
র0019069 (119 1118 স[09ঘ710) ছাও গু 60 71985). (€ অজ্ঞতা 
ভগবানের অভিশাপ, জ্ঞানের ডানায় ভর করিয়া আমরা স্বর্গে উপনীত 
হই )।-_সেক্দ্পিয়ারের এই উক্তির সহজ মাধুর্য ও সততা তাহাকে 
এমনই মুগ্ধ করিয়াছিল যে, তিনি এই অংশটুকু একদিন মুখস্থ করিয়া 
ফেলিলেন। আমাদের মনে রাখিতে হইবে,_এই মুখস্থ করার 
পিছনে কোন ছুর্দাস্ত শিক্ষকের রক্তচক্ষু বা বেত্রভীতি মোটেই ক্রিয়াশীল 
ছিল না। মনের সহজ আনন্দে চালিত হইয়াই তিনি হহা 
করিয়াছিলেন। যে রালক এই চাঞ্চল্যস্থলভ বাল্যেই জ্ঞানকে এত 
ভাল্বাসিতে শিখিয়াছিলেন, তিনি যে উত্তর কালে জ্ঞানেরই একনিষ্ঠ 
সাধনায় জীবন উৎসর্গ করিবেন, তাহা! আমরা অনায়াসেই অনুমান 
করিয়া লইতে পারি। 
_. এই বাল্যকালেই প্রফুল্লচন্দ্রের সেক্স্পিয়ারের সহিত পরিচয় 
ঘটিয়াছিল। তিনি বলিয়াছেন-__বাল্যকালে তিনি যেটুকু পড়িয়াছিলেন, 
তাহার ফলেই অমর কবির নাটকের প্রতি__বিশেষতঃ বিয়োগাস্ত 
নাটকের প্রতি তাহার অনুরাগ বৃদ্ধি হইয়াছিল। 

সুতরাং আমরা দেখিলাম কলিকাতায় আসিবার পূর্বেই 


ননী যাহ ই 


ল 
স্াপপাশটাশাসাীপিশপীশাশি পা পরজিটি 


প্রফুল্লচন্দের মনের একটি স্থুনির্দি্ট' প্রবণতা গড়িয়া উঠিয়াছিল, 
এবং সেই প্রবণতা জ্ঞানাভিমুখী। বয়সের অনুপাতে তাহার মনের 
বৃদ্ধি একটু বেশীই হইয়াছিল। তীহার ক্রেতবর্ধনশীঙ্গ মন পাঠ্য 
তালিকা নির্দিষ্ট পুস্তকের আবৃত্তি মুখরতার ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে আপনাকে 
কোনদিনই আবদ্ধ রাখিতে পাবে নাই। মুক্তপক্ষ শিশুবিহঙ্গের মত 
তাহার অপরিপুষ্ট মনের ডানায় ভর করিয়া জ্বানলোকের বহুদূর পর্য্যন্ত 
তিনি ব্বতঃক্ুর্ত আনন্দে বিচরণ করিয়াছিলেন। 


জ্ঞীনের বাঁধাধরা বিচরণ ক্ষেত্র ছিস তাহার পিতার প্রতিষ্ঠিত 
মধ্য-ইংরাজী বিগ্ভালয়। এখানে তিনি ও তাহার অপর তিন সহোদর 
অধ্যয়ন করিতেন। এই বিগ্ভালয়ে অধ্যয়ন কালে তিনি .'অনন্য- 
সাধারণ মেধা বা অদ্ভুত স্মৃতিশক্তির কোন পরিচয় দিতে পারেন 
নাই। দিয়া থাকিলেও, তৎসম্পর্কে কোন বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত আমাদের 
জানা নাই। দেশের আর দশ জন বালকের মত তিনিও একজন 
ছাত্র ছিলেন। ধারণা শক্তি বা স্থৃতি শক্তির দিক হইতে অপর 
সকলের অপেক্ষা তাহার হয়তো একটু বিশিষ্টতা ছিল। কিন্ত 
বৃহত্বর প্রতিদ্ন্দিতার ক্ষেত্রে দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র হইতে পৃথক 
করিয়! দেখিবার মত কোন বিশেষত্ব তাহার ছিল বলিয়া মনে হয় না। 
যে বিশেষত্ব তাহার ছিল, তাহ! শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে ব! প্রশ্ব-পত্রের 
সমাধানে সর্ববদা ধরা পড়ে না। জ্ঞান সম্পর্কে অন্তরের একটা 
সহান্গভূতিই ছিল সেই বিশেষত্ব; এবং ইহাই দিনের পর দিন 
ভাবীকালের সাধনার উপযোগী করিয়! তাহার বৈজ্ঞানিক চিত্তকে 
গড়িয়া, তুলিতেছিল। 


২ মর্মী্ধী পরুাচজ 


কলিকাতায় আগমন ও উচ্ট শিক্ষা 
_. প্রফুল্লচন্দ্রের বাল্যকালের প্রবণতা অনুকূল পরিবেশের মধ্যে 
গতিবেগ লাভ করিয়া তাহাকে কেমন করিয়! বৈজ্ঞানিক গবেধরাঁ-: 
গারে অতন্দ্র সাধনার পথে আগাইয়! দিয়াছিল, কেমন করিয়া! ধনীর 
সন্তান প্রফুল্লচন্্র উত্তরকালে বিশ্বের নিগীড়িত মানবাত্বার মধ্যে 
আপনাকে নিঃশেষে ডুবাইয়া দিয়া জনকল্যাণে ও সেবাত্রতে জীবন 
উৎসর্গ করিয়াছিলেন, তাহাই আমরা! বুঝিতে চেষ্টা করিব। 

১৮৭০ খৃঃ অবে প্রফুল্পচন্দ্রের পিতা হরিশ্চন্দ্রের জীবনে একটি সমস্ত! 
দেখা দিল। এ বৎসর তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র জ্ঞানেন্দ্রচজ্্র মধ্য ইংরাজী 
পরীক্ষায় পাশ করেন। তাহার মধ্যম ও তৃতীয় পুত্র নলিনীবাস্ত 
ও প্রফুল্লচন্দ্র দেই বংসরই এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতেছিলেন। 
হরিশ্চন্দ্র তাহার এই পুত্রদের লইয়া কি করিবেন-ইহাই তাহার 
প্রধান সমস্তা হইল। পুত্রদিগকে উচ্চ শিক্ষিত করিবার জন্ত তাহার 
আগ্রহের অন্ত ছিল না। তৎকালে কলিকাতা ব্যতীত অন্য কোথাও 
উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র ছিল না। অথচ এই স্থৃকুমার বয়সে তাহার 
বালক অস্তানদিগকে কলিকাতায় কাহার তত্বাবধানে রাখিবেন? 
পুত্রদের লইয়৷ নিজে কলিকাতায় আলিয়া স্থায়ীভাবে বদবাম করিতে 
পারিলে, পুত্রদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেন। 
 কিন্তুসে দিকেও তাহার যথেষ্ট অস্ৃবিধা ছিল। রাড়ুলি গ্রাম 
লইয়া! তাহার চারিপাশে কয়েকখানি গ্রামে তাহার জমিদারী বিস্তৃত 
ছিল। তাহ! ছাড়া, বন্ধকী কারবারে তিনি দেশের মধ্যে বু টাকা 
ছাদন দিয়াছিলেন। তিনি জানিতেন-__বৈষয়িক কার্ধ্য নিজে পরিদর্শন 
ট্দ1করিলে বিষয়ের বনিয়াদ শিথিল হইয়া, পড়ে। তখনকার দিনে 


মনীয়ী গডুলচজ ২১ 


রাডু'ধি হইতে কলিকাতায় যাইতে নৌরাপথে ৩৪ দিন লাগিত) 
সুতরাং প্রায়শঃ বাড়ী যাইয়! য়ে বিষয়াদ্ির তত্বাকধান করিরেন_ সে 
সঙ্তারনাও তখন ছিল না। অতএব, বৈষয়িক অরস্থার দিক হইতে 
বিচার করিলে স্বগ্রাম হইতে দূরে যাইয়৷ বাস রুরা তাহার পক্ষে 
সন্কর ছিল ন|। 

কিন্তু পুত্র সম্পর্কে পিতার কর্তব্য-বোধই শেষ পর্য্যন্ত জয়ী হইল। 
১৮৭০ খুঃ অব ডিসেম্বর মাসে হরিশচন্্র পুতরদিগকে জইয়া সন্্রীক 
কলিকাতায় আসিলেন এবং এখানে স্থায়ীভাবে বাস করিতে 
লাগিলেন । ৃ 
নয় বসর বয়সে প্রফুল্লচন্ত্র কলিকাতায় আসিলেন। পল্লীর সহিত 
স্হরের কি বিরাট পার্থক্য ! কলিকাতায় আসিবার সাথে সাথে তাহার : 
চোখের সম্মুখে যেন এক সম্পুর্ণ নূতন দ্ধগতের ছার খুলিয়া গেল ! 
উদ্দাম গতিশীলতায় ও কর্মচাঞ্ধল্যের মুখরতায় এখানে জীরন একেবারে 
উচ্ছষিত হইয়া উঠিয়াছে ! বিস্তৃততর ক্ষেত্রে বহুমুখী জীবনের 
খারা বিচিত্র ভঙ্গীতে বহিয়া চলে এখানে ; পৃথিবীর সকল দেশের 
নর নারী তাহাদের বিচিত্র পরিচ্ছদ ও অভিনব আচার ব্যবহার লইয়! 
মনের উপর আঘাতের পর আঘাত করিতে থাকে । এর স্বৃহৎ 
সৌধমালা, বিরাট শিক্ষায়তন, বড় বড় সওদাগরী অফিস-_এর 
রেলগাড়ী, জাহাজ, গ্রীমার প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের কল্যাণকর 
ফ্ললসমূহ-_এই সর লইয়া সহরের জগৎ গ্রাম্য জগৎ হইতে এত 
স্বতন্ত্র যে কলিকাতাকে প্রফুল্পচন্দ্রের নিকট একটি অভিনব জগ 
বলিয়াই মনে হইয়াছিল । 

ছুরিশ্চন্দ্র কলিকাতায় 'আসিয়! প্রসুল্পচন্দ্রকে. এবং তাহার জ্যেষ্ঠ 








বং মনীষী গ্রকুল্লচন্দ্র 


ভ্রাতাকে হেয়ার স্কুলে ভণ্তি করিয়৷ দেন। কলিকাতায় তখন হিন্দু স্কুল 
ও হেয়ার স্কুল- এই ছুইটি বিষ্ভায়তন অন্ত সকলের শীর্ষস্থানীয় ছিল। 
এই ছুইটি শিক্ষ। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধ্যাপনার উৎকর্ষ সম্পর্কে একটি 
প্রতিযোগিতার ভাব বিছ্ধমান ছিল। বিশেষতঃ মহামতি হেয়ার 
সাহেবের নামের সহিত বিজড়িত থাকায় হেয়ার স্কুলের সুনাম বন্থদূর 
ছড়াইয়৷ পড়িয়াছিল। টিটি 
মন্দিরেই প্রবেশ লাভ করিয়াছিলেন। 

১৮৭০ সাল হইতে ১৮৭৪ সাল পর্য্যন্ত প্রফুল্লচন্দ্র হেয়ার স্কুলের 
ছাত্র ছিলেন। পরবর্তী কালে বিষ্ভালয়ে প্রীপ্ত শিক্ষা ও প্রচলিত 
শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে তাহার মনে যে বিতৃষ্ণার ভাব আমরা লক্ষ্য করি, 
হেয়ার স্কুলেই তাহার সবৃত্রপাত হইয়াছিল বলিয়া! মনে হয়। ফলতঃ 
এখানকার শিক্ষা আদৌ তাহার তৃতপ্তিদায়ক হয় নাই। কিন্তু বিদ্ভালয়ের 
শিক্ষার ফলাফল যাহাই হউক না কেন, পাঠ্যতালিকা-নিদ্দিষ্ট পুস্তক 
পড়িয়া তাহার জ্ঞানভৃষ্ণা কোনদিনই পরিতৃপ্ত হয় নাই। কলিকাতায় 
আসিয়! প্রফুল্পচন্দ্র একনিষ্ঠ সাধকের ম্যায় অতন্দ্র পরিশ্রমে জ্ঞান 
আহরণে যত্বুপর হইলেন। এই তরুণ বয়স্ক বালক জ্ঞানের উপর সহজ 
অনুরাগ বশতঃই পুস্তকের পর পুস্তক পড়িয়া চলিলেন। তাহার 
অধ্যয়নের মূল বিষয়-বন্ত সাহিত্য হইলেও, বিভিন্ন গ্রন্থ তাহার পাঠ্য 
বন্তর অন্ততূক্ত ছিল। জীবন-চরিত, ইতিহাস, ভাষা, ও ভাষাতত্ব 
সম্পকীঁয় বছ গ্রন্থ এই সময় হইতেই তিনি পাঠ করিতে 
আরম্ভ করেন। 

ইতিহাস ও জীবন-চরিতের উপর তাহার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। 
এচেম্বার' সম্পাদিত 'জীবন-চরিত” এবং “নিউটন” ও গ্যালিলিওর' জীবনী 


মনীষী প্রযুম্নচন্্ ২ 


এই সময় তিনি অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের 
আত্মচরিত তাহাকে এমনই মুগ্ধ করিয়াছিল যে, পরিণত বয়সেও এই 
ইয়াঙ্কী মনীষীর জীবনী হইতে তিনি আনন্দ ও অনুপ্রেরণা লাস 
করিতেন। 'ম্তার উইলিয়ম জোন্সের' জীবনীও তাহার. প্রিয় ছিল+ 
“পড়িলেই সব জানিতে পারিবে”_তীহার মায়ের এই বিখ্যাত উপদেশ- 
বাণী প্রফুল্লচন্দ্রকে সর্ববদাই অনুপ্রাণিত করিয়াছে। এই বয়সেই 
“জোন্স্‌ ও 'জন লেভেনের' ভাষাতত্ব সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য উপলব্ধি, 
করিয়৷ মুগ্ধ হইবার মত মানসিক উৎকর্ষ প্রফুল্লচন্দ্র লাভ করিয়াছিলেন + 

১৮৭৪ সালের আগষ্ট মাসে গুরুতর রক্ত আমাশয় রোগে আক্রান্ত 
হওয়ায় প্রফুল্লচ্্র স্কুলে যাওয়া বন্ধ করিতে বাধ্য হন। এই রোগ 
হইতে তিনি কোন দিনই সম্পূর্ণ মুক্ত হইতে পারেন নাই। জীর্ণ 
ব্যাধি রূপে ইহ! সারা জীবন তাহাকে কষ্ট দিয়াছে; এবং ইহার 
ফলন্বরূপ অজীর্ণ, উদরাময় ও অনিদ্রা রোগে তিনি আক্রান্ত হইয়া, 
ছিলেন। কিন্ত্ব আহারাদি সম্পর্কে কঠোর নিয়ম পালন, নিয়মিত 
ব্যায়াম ও ভ্রমণ প্রভৃতি দ্বারা তাহার ভগ্ন দেহকেও তিনি বৃদ্ধ বয়স 
পর্য্যন্ত শ্রমসহিষু ও কর্মপটু রাখিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। 

এই ব্যাধিকে প্রফুল্লচন্দ্র কিন্তু কতকটা ভগবানের আশীর্ববাদস্বরূপ। 
গ্রহণ করিয়াছিলেন । বিদ্যালয়ে শিক্ষার উন্নতি সম্পর্কে তাহার মনো- 
ভাব কোনদিনই অন্থকুল ছিল না। নানাস্তরের বুদ্ধিসম্পন্ন বালকের 
দারা শ্রেণীগুলি গঠিত ; ব্যক্তিগত বুদ্ধির উৎকর্ষ বা অপকর্ষ সম্পর্কে 
বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ সেখানে হয় না। বয়স অনুপাতে 
বুদ্ধির আনুমানিক গড় ধরিয়া প্রত্যেক শ্রেণীর শিক্ষার মান নির্ণয় করা 
হয়। ফলে, যাহার বুদ্ধি সেই মানের উপরের বা নিম্নের স্তরের, তাহাদের 


ও মনীষী শরচুরচজ 
শিক্ষার অবহেলাই হইয়া থাকে। উপরন্তু, বিরে্গী ভাষ৷ শিক্ষার বাহন 
হওয়ায় শিক্ষার উন্নতি কাহারও পক্ষে আশানুরূপ হয় না। বিলাতের 
বিষ্ভালয়ে চরিত্র গঠনের যে অন্গকুল আবহাওয়া বিদ্যমান, দেপীয় 
বিদ্যালয়ে তাহার একাস্ত অভাবই পরিলক্ষিত হয়। বিদ্যালয়ের পাঠ্য 
তালিকার মধ্যে যাহাদের পড়াশুনা! আবদ্ধ, বুদ্ধির প্রাখরধ্য ও বহুমুখিতা 
যতই হউক না৷ কেন, তাহাদের পড়াশুনা ধীর গতিতেই হইয়া থাকে । 
গ্ঞামের ক্ষেত্রে কৃতিত্ব তাহাদের মধ্যে অল্প লে।কের জন্যই বিশেষ যশ 
"আহরণ করিতে পারিয়াছে । 

রোগগ্রস্ত হইয়া বাড়ী বসিয়া থাকায়, তাহার এই স্ুুধিধা হইল 
'ষে, বিষ্ভালয়ের যে সন্থী্ণক্ষেত্রে তাহার বুদ্ধি-বৃত্তিকে শৃঙ্খলিত ও অবরুদ্ধ 
রাখিতে হইত, তাহা হইতে তিনি মুক্ত হইলেন ; এবং বিদ্যালয় তাহার 
স্বাধীন জ্ঞানান্বেষণ পথে যে অন্তরায় স্থা্টি করিত, তাহ! তাহার পথ 
হইতে অপসারিত হইল। অমনোযোগী ছাত্রের পক্ষে যে বাধ্যতামূলক 
শিক্ষা তাহার উন্নতির কারণ হইত, জ্ঞানের উপর সহজ অনুরাগ-বশতঃ 
এই বালকের পক্ষে তাহার প্রয়োজন ঠিক ততখানি ছিল না। তাহার 
এই বিদ্যালয়ের বন্ধনমুক্ত স্বাধীন জীবন যথেচ্ছ জ্ঞান আহরণ ছ্বায়া অল্প 
বয়সে তাহার জ্ঞানভাগার পূর্ণ করিতে যথেষ্ট সাহাঁষ্য করিয়াছিল । 

এই সময়ে '্মিথের' 'প্রিনসিপিয়া ল্যাটিনা" নামক ল্যাটিন ভাষা! 
শিক্ষার একখানি প্রাথমিক গ্রন্থ প্রফুল্লচন্দ্রের হস্তগত হয় । এই পুস্তকের 
কয়েক পষ্ঠ৷ অধ্যয়ন করিয়া! প্রফুল্লচন্দ্র ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে 
'আশ্্য্য সাদৃশ্য দেখিয়া মুগ্ধ হন এবং নিজের চেষ্টায় উক্ত পুস্তকের 
প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ এবং ল্যাটিন ভাষার ব্যাকরণ পড়িয়া শেষ 
করিয়া ফেলেন। তিনি এই ভাবে ফ্রেঞ্চ প্রিনসিপিয়া'র প্রথম ও 


মলীখী প্রধুজাচজ : ২৫ 


পাপা শাপস্পস্পিস্পাস্পা্জপৃরিিতি 


ছিতীয় ভাগ নিজের চেষ্টায় পাঠ কয়েন, পরে জাবায় তিনি 
বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হন, এই পূর্ধবান্থত জ্ঞান ভীহার 'অসাখারণ কৃতিচ্ষের 
পরিচায়ক হইয়।ছিল। 

্রফুল্লচন্দ্র বলিয়াছেন_-“যত সাছিত্যের সহিত পরিচিত হুই না 
কেন, ইংরাজী সাহিত্য আমাকে ঘাছ করিয়্াছিল।” কে. এস 
ব্যানার্জী সংকলিত [770 010089018 73906919081 নামক পুস্তকখানি 
প্রফুল্লচন্দ্রের পিতার গ্রন্থাগারে 'ছিল। “আরনন্ডের 149080788৫2 
018, 1960" “রলিন্সের 21006 নাও িবস্সের' 
4[300187 7001]1:9 প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থ হইতে নির্বাচিত অংশঞ্চলি 
এ পুস্তকে সরিবিষ্ট হইয়াছিল। উক্ত পুস্তক অধ্যয়ন করিয়া 
প্রফুল্লচজ্জ এ সকঙ্গ বিখ্যাত লেখকদিগের উন্নত শ্রেদীর ভাহার, 
রসান্বাদন করিয়াছিলেন । “চেম্বার সংকলিত 010গ্রাথাাযা এবং 
“মগ্ডারের' পাদ৩৪৪এশয ০3108150107 অধ্যয়নের ফলে অল্প বয়সেই 
প্রফুল্লচন্ত্র উন্নততর ও মহত্তর জীবনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া 
ছিলেন। জীবন চরিত ও এতিহাসিক ঘটনা-সম্থলিত এই সকর্প 
পুস্তক অধ্যয়নের ফলে তাহার স্মৃতি এতিহা্িক তথ্য-সম্তারে পুর্ণ 
হইয়াছিল । “গোল্ডন্মিথের' 5108: 06 ৪9910 নামক বিখ্যাত 
পুস্তকখানি তিনি পুনঃ পুনঃ পাঠ করিয়াছিলেন ইহার অপূরধব 
রসাল ভাষা স্তীহার কিশোর মনটিকে একেবারে মুগ্ধ করিয়াহিল্ 
“এডিসনের' “স্পেক্টেটর' ও 'জম্সনের' 'রাসেলাস' প্রভৃতি সাহিত্য 
গ্রন্থের সহিত তিনি এই সময়েই পরিচিত হইয়াছিলেন। “নাছিটের 
গ161)007 ত16) 0060986৪060, নামক গ্রন্থে উদ্ধত “01016 
08989, 11610%06 0 ড600106 ও 891016 এর কেকগছি 





২৬ মনীষী প্রছাচজ 


নির্বাচিত অংশ অধ্যয়ন করিয়৷ অমর কৰি “সেকৃস্পিয়ারের' গ্রস্থাবলী 
সম্পূর্ণভাবে পড়িবার জন্য তাহার কিশোর মনে গভীর আগ্রহ 
জদ্মিয়াছিল। 

ছুই বংসর রোগভোগের পর রোগের তীব্রতা মন্দীভূত হইলে, 
প্রফুল্পচন্দ্র পুনরায় বিদ্যালয়ে ভণ্তি হইলেন। স্কুলের সেসন্‌ প্রায় শেষ 
হইয়া আসিয়াছিল ; সুতরাং প্রফুল্লচন্দ্র তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতীর সহিত 
পরামর্শ করিয়া সেসনের অবশিষ্ট কয়েক মাসের জন্য আলবার্ট স্কুলে 
ভত্তি হইলেন। এই শিক্ষায়তন “ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজের' প্রতিষ্ঠাতা 
কেশবচন্দ্র সেন ও তাহার সহকন্ধীদের দ্বারা পরিচালিত হইত। 

্রফুল্লচন্দ্র যে আলবার্ট স্কুলের উপর আকৃষ্ট হইয়াছিলেন, তাহার 
বিশেষ কারণ ছিল। কলিকাতায় আসিয়া প্রথম হইতেই তিনি 
ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। তাহার পিতা! তদানীন্তন 
সামাজিক কুসংস্কার হইতে মুক্ত ছিলেন এবং তাহার মন সংস্কার" 
প্রয়াসী ছিল। এই পিতার সাহচর্য্যে মানুষ হওয়ায় প্রফুল্লচন্দ্রে 
মনও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে আড়ষ্ট শ্রদ্ধার ভাব হইতে সম্পূর্ণ 
সুক্ত ছিল। সংস্কারপন্থী মনীষীদিগের নূতন ভাবধারার সহিত 
গ্রামে থাকিতেই তিনি পরিচিত হইয়াছিলেন। ব্রান্মসমাজের মুখপত্র 
“তত্ববোধিনী' পত্রিকা তিনি নিয়মিত অধ্যয়ন করিতেন। মহর্ষি 
দেবেন্দ্রনার্থ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, অযোধ্যানাথ পাকড়াশী, অক্ষয় 
কুমার দত্ত প্রভৃতি চিন্তানায়কদিগের রচনা ও উপদেশ বাল্যকাল 
হুইতেই তাহার মনে ধর্মের বীজ বপন করিয়াছিল। কলিকাতায় 
আসিয়! তিনি ত্রাহ্ষসমাঁজে মিশিবার এবং ধর্ম সম্পর্কে সংস্কারপ্রয়াসী 
চিন্তানায়কদিগের, চিন্তাধারার সহিত পরিচিত হইবার সুযোগ লাভ 





মনীষী শ্রফুললচন্্র ২% 
করেন। টু প্রণীত 1) 0 0080 018 018) ও “রেনানের” 
[1 0 78৪০৪ প্রভৃতি গ্রন্থে অলৌকিক ও অতীন্দ্রিয় ঘটনা 
বঞ্জিত যীশু খুষ্টেরে জীবনের আলোচনা কর! হইয়াছে! 
যুক্তিবাদ-মূলক ধর্মের সমর্থনে এই সমস্ত গ্রন্থ লিখিত। প্রফুললচ্র 
এই সকল পুস্তক অধ্যয়ন করেন। এইভাবে কৈশোরেই ধর্মের 
অপৌরুষেয়তা সম্পর্কে তিনি আস্থাহীন হুয়া! পড়েন। বোধ ও 
প্রজ্ঞার উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্ম্মই মানুষের প্রতিপাল্য ধর্ম্দ_এই বিশ্বাস 
তাহার মনে বদ্ধমূল হুইয়। যায়। উত্তর কালে অন্যান্য গ্রন্থপাঠে ও" 
স্বাধীন চিন্তার ফলে তাহার এই বিশ্বাস আরও দৃট়ীভূত হইয়াছিল। 
এই সমস্ত ভাবধারার সহিত পরিচিত হইবার ফলে জাঁতিভেদ, বাধ্যতা” 
মুলক বৈধব্য, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক প্রথাগুলিকে তিনি অত্যন্ত 
জঘন্য আচার বলিয়া মনে করিতে আরস্ত করেন। 

স্বভাবতঃই ধাঁহারা এই সমস্ত সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে বদ্ধ. 
পরিকর হুইয়াছিলেন, এবং এই সমস্ত সংস্কারমূলক চিস্তাপোষণ: 
করিবার জদ্য পিতৃপরিত্যক্ত, সমাজ-পরিত্যক্ত হুইয়! মন্তকে অশেষ- 
নির্যাতনের কণ্টক-মুকুট ধারণ করিয়াছিলেন, প্রফুক্লচন্দ্রের শ্রদ্ধা 
ও শ্রীতি যে তাহাদের অভিমুখে প্রধাবিত হুইবে-_-তাহাতে আর 
বিচিত্র কি? 

কেশবচন্দ্র সেন জাতিভেদ তুলিয়।৷ দিয়! আদি ব্রাহ্ম সমাজ 
হইতে বিচ্ছিন্ন হইলেন এবং ভারতীয় ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠা 
করিলেন। বহু শিক্ষিত যুবক তাহার ধর্মোপদেশে অনুপ্রাণিত হইয়া 
তাহার পতাকাতলে সমবেত হইলেন। : কেশবচন্দ্রের বক্তৃতা প্রফৃল্ল- 
চন্দ্রকেও বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করিয়াছিল । প্রফুল্নচন্্র বলিয়াছেন--» 





৮ মনীরী গরুর 
ভারতবর্ষায় ব্রাহ্ম সমাজে প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় জ্মামি তাহার 


খ্মালধার্ট হলে কেশবচলোর বতৃত্তা শুনিবার সুযোগ জমি কমই 
ক্যাশ বরিতাম না।” 

_ কেশবচন্তর ও তাহার মতবাদ সম্পর্কে রিনি এরপ শ্রদ্ধা পোষণ 
করিতেন, তিনি ক্বভাবতঃই তাহার পরিচালিত বিদ্যায়তনের দিকে 
আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। এখানে জধ্যয়ন কালে রিষ্ালয়ের পাঠ আর 
্াহার পক্ষে নীরস হ্বা গুষ্ধ ছিল ন|। হেয়ার স্কুলে পড়িবার কালে 
ঠাহাদের শ্রেণীয় যিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তাহার বিরাট দেহ, 
খন গুক্ষ ও ভীতি জনক মুখাঁকৃতি ছাত্রদের মনে ত্রাসের সঞ্চার রুরিত। 
জ্লুতরাং ছাত্রদের সক্কুচিত মন সহজ 'আনন্দে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি ধাবিত 
হইত না। কিন্তু আলবার্ট স্কুলের এই সমস্ত সমাজ-পরিত্যন্ত শিক্ষক 
শান্ত প্রকৃতি ও চরিত্রের মাধ দ্বার ছাত্রদিগের চিত্ত আকুষ্ট করিতেন 
প্ররং ছাত্রগণ শিক্ষামন্দিরের বাহিরেও শিক্ষকের মহৎ ও মধুর ব্যক্তিত্বের 
ক্লংস্পর্শে আসিবার সুযোগ লাভ রূরিত। 

. প্রফুল্চন্্র স্বীয় “আত্মচরিতে' আদিত্যকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং 
ঝহেজ্্নাথ (া- আলবার্ট স্কুলের এই ছুইজন শিক্ষকের কথা উল্লেখ 
করিয়াছেন। জীবনের আদর্শের জন্য সামাজিক নির্যাতন তাহারা 
হাসিমুখে বরণ করিয়াছিলেন। প্রফুল্পচন্দ্র ও তাহার সহাধ্যায়ীরা 
প্লায়ই তাহাদের বাড়ী যাইতেন এবং সকল বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ 
ক্লারিতেন। তাহারা! এই সকল ছাত্রের নিকট ব্রাঙ্গ সমাজের তত্বসমূহ 
ব্যাখ্যা করিতেন এবং প্রজ্ঞ। ও বোধের উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মের প্রতি 
ভাহাদের চিত্ত আকৃষ্ট করিতেন । 





্রফুল্পচন্্র সেসনের' অবশিষ্ট কয়েক মাস আলবার্ট স্কুলে অধ্যয়ন 
করিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই সহপাঠিদের অপেক্ষা সর্ববিষয়ে তাহার 
জ্ঞানের উৎকর্ষ সকলে উপলব্ধি করিলেন এবং বয়সের অনুপাতে 
তাহার অনশ্তসাধারণ কৃতিত্ব সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। নুতরাং 
প্রফুল্লচন্দ্রের কথা শীত্তই শিক্ষকদিগের আলোচনার বিষয় হইয়া 
দাড়াইল। এখানে অধ্যয়ন কালে তাঁহার রোগের সময় অধীত বিষ্তা 
বিশেষ কাজে লাগিয়াছিল। ক্লাসে যখনই শব্দবূপ সম্পকীয় কোন 
প্রশ্ন উথাপিত হইত, প্রফুল্লচন্দ্র তাহার ল্যাটিন ভাষার জ্ঞানের সাহাফ্যে 
অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃত ও ইংরাজী ভাষায় একই শবের বিভিন্ন রূপ 
এবং তাহার ধাতুগত অর্থ বলিয়। দিতেল। 
পরীক্ষ। দিলে তিনি সকল বিষয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করিতেন--এবিশ্বাম 
তাহার ছিল। কিন্তু সেসনের অস্তে পুনরায় হেয়ার স্কুলে প্রবিষ্ট হইবার 
আশা! প্রফুল্লপচজ্জ পোষণ করিতছিলেন। আলবার্ট স্কুলে পরীক্ষায় গ্রথস 
হইয়া পুরস্কার লাভ করিয়া পরে অন্ত বিষ্ভালয়ে চলিয়! যাওয়। তিনি 
অন্যায় মনে করিয়াছিলেন। সুতরাং তিনি পরীক্ষা দিতে বিরত 
থাকেন। পরীক্ষা না দিলেও পুরস্কার বিতরণের সময় শিক্ষকের! 
সর্ব বিষয়ে উৎকর্ষের জন্য প্রফুল্পচক্রকে একটি বিশেষ পুরস্কার দাম্রে 
ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। র 

শেষ পধ্য্ত গ্র্ল্নচ্্র আলবার্ট স্কুলে থাকিয়া যাইতে বাধ্য হন.। 
একে শিক্ষকদের চরিত্র মাধুর্য তিনি মুস্ধ হুইয়াছিলেন, তাহার উপর 
স্কুলে পুনঃ প্রবিষ্ঠ হওয়া তাহার পক্ষে অসস্ভব হইয়াছিল । প্রফুল্সচতা 


বত মনীষী প্রফুচজ 


তাহার 'আত্মচরিতে' আলবার্ট স্কুলে তাহার স্থিতিকে জীবনের একটি 
ক্$ভঘটনা বলিয়া বর্ণন! করিয়াছেন | 

আলবার্ট স্কুলের প্রধান শ্রিক্ষক ছিলেন কৃষ্ণবিহারী দেন। ইনি 
€কেশবচন্ত্র সেনের ভ্রাতা । ইহার ইংরাজী ভাষায় অসাধারণ পাণ্ডিত্য 
ছিল। কেশবচন্দ্র সেন বগ্সিতায় যেমন অদ্ধিতীয় ছিলেন, কৃষ্ণ 
বিহারী সেনও সেইরূপ ইংরাজীতে লেখনী চালনায় অপ্রতিত্বন্থী 
ছিলেন। তিনি 'ইগ্ডিয়ান মিরর নামক ইংরাজী সংবাদপত্রের 
সুগ্ব-সম্পাদক ছিলেন। তাহার অধ্যাপনা-পদ্ধতি সহজেই ছাত্র- 
দিগের মন আকর্ষণ করিত । 

মূল বিষয় মধ্যে আলোচনা আবদ্ধ না রাখিয়া আন্মুসঙ্িক 
বছুতখ্যের অবতারণা দ্বারা তিনি ছাত্রদিগের মনে কৌতৃহল, ও 
অনুসদ্ধিংদা জাগ্রত করিতেন। এই জন্য তাহার অধ্যাপন! অত্যন্ত 
হাদয়গ্রাহী হইত। ফলতঃ কৃষ্ণবিহারীর শিক্ষকত৷ গুণে ইংরাজী 
সাহিত্যের প্রতি প্রফুল্লচন্দ্রের অনুরাগ আরও বৃদ্ধি পাইয়াছিল। 
এই বিদ্যালয় হইতেই প্রফুল্লচন্্র প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়াছিলেন। 
“পরীক্ষায় তিনি শিক্ষকদিগের আশানুরূপ কৃতিত্ব দেখাইতে পারেন 
নাই। তিনি বৃত্তি লাভ করেন নাই। এই পরীক্ষার ফল প্রফুল্নচন্ত্র 
'যে ভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাতে তাহার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বিশেষ 
ভাবেই ফুটিয়! উঠিয়াছে। যেখানে জীবনের মূল লক্ষ্য জ্ঞান আহরণ, 
সাধন! যেখানে আত্ম প্রত্যয় ও অধ্যবসায়ের দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, 
কৃতিত্বের লৌকিক পরিচয়পত্র যে রূপই হউক না কেন, তাহাতে 
“শিক্ষার্থীর মানসিক স্থৈর্য্য এতটুকুও ক্ষু্ হয় না। জ্ঞানলাভের বিভিন্ন 
সারে," শিক্ষার 'ছাূপত্র চাকরির. মোহ্গরস্ত বাঙ্গালী যুবকের নিকট 


মনীষী প্রফুল্লচ্ত | ৩৯ 


এ সস্স্মিস স্প্রে সস সপ সর সাসিতাসিতাস্া্সপিস্িসসসসস্িস্বিসসসপসসস সরস সম 


যতই কাম্য হউক না কেন, জীবনের লফলতার পক্ষে তাহা একান্ত 
প্রয়োজনীয় নহে-_এ সত্য প্রফুল্পচন্্র বুঝি সেই কিশোর বয়সেই 
উপলব্ধি করিয়াছিলেন। 

এই পর্য্যন্ত প্রফুল্পচন্দ্রের জীবন পর্য্যালোচনা করিলে দেখা! যায়, 
সাহিত্যের উপরই তাহার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। ভাগ্যদেবী যদি 
কোন দিন তাহার মাথায় সফলতার মুকুট পরাইতে আসেন, সাহিত্যের 
পথ বাহিয়াই তিনি আসিবেন-ন্বতঃই যেন এই কথা মনে আসিতে 
থাকে । কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষার পর তাহার সাধনার গতি 
অপ্রত্যাশিতভাবে ভিন্ন দিকে নিয়ন্ত্রিত হইল। সাহিত্য তাহার 
অবসর বিনোদনের সহচরী থাঁকিলেও, বিজ্ঞানই তাহার অভীষ্ট 
দেবীরূপে দেখা দিলেন । 

কিরূপে যে তাহার মন বিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট হইল, তাহার 
কারণ অনুসন্ধান করিতে যাইয়া আমাদিগকে কতকটা! হতাশ হইতে 
হয়। তাহার জীবনের পূর্ব্বেকার কোন ঘটনা দ্বারা বিজ্ঞানের. উপর 
তাহার বিশেষ আকর্ষণ সূচিত হয় না। নিউটন ও গ্যালিলিওর জীবন- 
চরিত তিনি আগ্রহের সহিত পাঠ করিয়াছিলেন, কিন্তু বনু দার্শনিক ও 
সাহিত্যিকের জীবন চরিত অধ্যয়নেও তাহার সমান আগ্রহ পরিলক্ষিত 
হইত। অক্ষয়কুমার ' দত্তের বৈজ্ঞানিক রচনাগুলি নিশ্চিতই তাহার 
মনের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, কিন্তু সাহিত্য তে তাহাকে 
একেবারে 'যাছ্‌" করিয়াছিল । বাঙ্গালী অনুভূতি-প্রধান জাতি। তাহার 
মনে ভাবের নীহারিকাপুঞ্জ আনন্দের উত্তাপে স্পন্দিত হইতে. থাকে, 
তাহার অনুভূতিতে সত্যের বিচিত্র রূণ লইয়া তাহারা ফুটিয়! উঠে। এ 
অনুভূতি রষ্টার_কবির-_দাহিত্যিকের | বাংলীর ভুলসীমঞ্চ নারায়ণের 


গু মলীমী প্রচ্ছচজ 

'আবাদভূমি; বাংলার কীর্তনে রাধারৃষ্ বৃদ্দাবনের নিত্য লীলায় 
আবিভ্'ত হন, বাংলার ভাবগানে কোন্‌ অচিনপুরুষের আবাহন ধ্বনিয়া 
উঠে, বাংলার উদ্ভানে প্রান্তরে কোন্‌ কুহকীর শ্টামচ্ছায়ার মায়ারচনার 
মধ্যে দেবতার সিদ্ধ দৃষ্টি উকি দিতে থাকে, বাংলার মাটি প্রষ্টার__কবির 
-সাহিত্যিকের। এখানে বৈজ্ঞানিকের আবির্ভাব হইবে, কে কবে 
ভাবিয়াছিল। তবে যুক্তিবাদ ও পরীক্ষণের (38601181197) ও 
চ875710187). ভিত্তিতে সত্য প্রতিষ্ঠার যে দার্শনিক মতবাদ 
'ইউরোগীয় সভ্যতায় যুগাত্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করিয়াছিল, তাহার 
হাওয়া পশ্চিম হইতে প্রাচ্যের বুকে আসিয়া লাগিয়াছিল এবং 
'পরোক্ষে বাংলার মাটিকে বৈজ্ঞানিক স্প্টির অনুকূল করিয়া গড়িয়া 
ভূলিতেছিল। ্‌ 
_ এনন্রাম্স পাশ করিয়া প্রফুলপচ্দ্র পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় 
প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইন্ষ্টিটিউশনে এফ. এ. ক্লাশে ভত্তি হইলেন। 
এফ. এ--নির্দিষ্ট পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে রসায়ন শান্ত্র অবশ্য পাঠ্য ছিল। 
গ্রফুল্পচন্জ প্রেসিডেন্সি কলেজে যাইয়া! বাহিরের ছাত্র হিসাবে রসায়ন 
শান্তর ব্তৃতা। শুনিয়া আসিতেন। পৃথিবীতে বড় হইবার জন্য ধাহারা 
জঙগগ্রহগ করেন, সকল ক্ষেত্রেই তাহাদের বিশেষত্ব সমান ভাবেই 
প্রকচিত হইয়৷ থাকে। সাহিত্যের একদিষ্ঠ সাধক প্রফৃক্লচন্্রকে 
আমর! দেখিয়াছি, রসায়নে দাঁক্ষিত হইবার পর বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ 
সাধক প্রুল্পচন্ত্রকে আমরা দেখিতে পাঁই। ক্লাশে এক্স্পেরিমেন্ট 
দেখিয়া সন্তুষ্ট না হইয়া তিনি ভাহার এক সহাধ্যাক়্ীর বাড়ীতে একটি 
ছোটখাট গরীক্ষণাগার (লেবরেটারী ) স্থাপন করিয়াছিলেন। যে 
সমর ছেলের! কলেজজ-পাঠ্য পুস্তক লইয়াই বিব্রত থাকে, সেই সঙ্গয় 


মনীষী প্রফু্লচন্্ ৩৩ 


কলেজ-পাঠ্য ছাড়াও রসায়ন শাস্ত্রের অনেকগুলি পুস্তক তিনি পড়িয়া 
শেষ করিয়া ফেলেন। মনে হয়, রসায়ন শাস্ত্রের সুবিশাল জ্ঞান 
ভাগারের প্রবেশ ছারে দীড়াইয়। ইহার অনন্ত রহস্তের মাধুধ্যে তিনি 
মন্ত্রমুগ্ধের ম্তায় আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। তাই সম্তাবিত সাহিত্যিক প্রফুল্প- 
চন্দ্র আকস্মিকভাবে বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ তপস্বী হইয়া উঠিয়াছিলেন। 

এই সময় প্রফুল্লচন্দ্র ও তাহার ভ্রাতৃগণ ছাত্রাবাসে আশ্রয় লইতে 
বাধ্য হন। প্রফুল্লচন্রের এন্ট্রানস পাশ করিবার পূর্ব হইতেই তাহার 
পিতা হরিশ্ন্দ্রের জীবনে আধিক বিপর্যয় আরম্ভ হয়। তাহার 
জমিদারী একটির পর একটি বিক্রয় হইতেছিল। অবশেষে তাহার 
আঘিক অবস্থা এমন সঙ্গীন হইয়া াড়াইল যে, কলিকাতায় বাসা রাখিয়া 
পুত্রদের শিক্ষার সুব্যবস্থা বজায় রাখা তাহার পক্ষে সম্ভব হইল না। 

এফ, এ. পড়িবার সময় প্রফুল্লচন্দ্র গোপনে 'গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি' 
পরীক্ষার জন্ঠ প্রস্তুত হইতেছিলেন। এই পরীক্ষা লগ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের 
ম্যাটি কুলেশন পরীক্ষার অনুরূপ ছিল। এই সময় তাহার পূর্ব্বের 
অধীত ল্যাটিন ও ফরাসী ভাষা কাজে লাগিয়া গেল। কারণ এ 
ছুই ভাষা উক্ত বৃত্তি পরীক্ষায় অবশ্য পাঠ্য ছিল। অন্য অপরিহার্ধ্য 
ভাষ! ছিল গ্রীক অথবা সংস্কৃত। এফ. এ. পরীক্ষার জন্য তিনি রঘুবংশ 
ও ভট্টিকাব্যের কিয়দংশ অধ্যয়ন করিয়াছিলেন এবং জনৈক পণ্ডিতের 
সহায়তায় কুমারসম্ভবও পাঠ করিয়াছিলেন। ন্মুতরাং ভালভাবেই 
্রফুল্লচন্দ্র এই পরীক্ষা দিয়াছিলেন। কয়েক মাস সংশয় ও উদ্বেগের 
মধ্যে অতিবাহিত হইবার পর একদিন ্রেটসম্যান পত্রিকায় উক্ত 
পরীক্ষার ফল বাহির হইল। দেখা গেল, প্রফুল্লচন্্র ও বাহাছ্রজী 
নামক জনৈক পার্শা যুবক এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছেন। 


৩ 


৩৪ মনীষী প্রসুয়চন্্র 

“গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি" পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার পর প্রফুল্লচন্ত্র উচ্চশিক্ষা 
লাভের জন্য বিলাত যাইবার সংকল্প করিলেন এবং তহদ্দেশ্যে পিতার 
সম্মতি প্রার্থনা করিলেন। পুত্র সম্পর্কে উচ্চশিক্ষাভিলাধী হরিশ্ন্্ 
সহজেই সম্মত হইলেন। প্রফুল্লচন্দ্র মাতার মত চাহিয়া পত্র দিলেন। 
মাতাও তীহার প্রস্তাবে আপত্তি করিলেন না। এখানে তাহার মাতার 
চরিত্র প্রণিধানযোগ্য । সন্তানকে অঞ্চলের নিধি করিয়া-_+বাঙ্গীলী' 
করিয়া রাখিবার মত অন্ধ স্রেহে তাহার অন্তর আচ্ছন্ন ছিল ন|। 
স্েহকেও যে প্রয়োজন মত কতখানি কঠোর হইতে হয়, ৭০ বৎসর 
পূর্বে বাঙ্গালীর মা হইয়াও এই সত্য তিনি হদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন। 
অবশ্য সন্তানকে বিদায় দেওয়ার সময় সন্তাবিত বিচ্ছেদবিধুরা' জননীর 
বাৎসল্য অশ্রুর যুক্তাবিন্দূতে ঝরিয়া পড়িয়াছিল। মাতৃমনের এই 
মাধুর্যময় দুর্ববলতা-_সাঁত সমুদ্র তের নদীর পারে সন্তানকে বিদায় 
দিতে যে মানসিক শক্তি ও কর্তব্য নিষ্ঠার প্রয়োজন__তাহাকে আরও 
প্রোজ্জল করিয়া তুলে । 

বাল্যকাল হইতে এই দেশে শিক্ষার পরিসমান্তি পর্য্যস্ত আমর! 
্ফুল্পচন্দ্রের জীবন আলোচনা করিলাম। মহাপুরুষদিগের জীবনী 
পাঠে জীবন সম্পর্কে তাহার দৃষ্টিভঙ্গী উদার ও বিস্তৃত হইয়াছিল। 
অধ্যয়ন ও অন্ুশীলন দ্বারা তাহার রুচি মার্জিত ও জ্ঞান পরিপকক 
হইয়াছিল। সাহিত্য তাঁহার হ্ৃদয়বৃত্তির উন্মেষসাধন করিয়৷ কল্পনাকে 
উদ্দীপিত করিয়াছিল। ইতিহাস পাঠে তাহার স্মৃতি বহু তথ্য-সন্তারে 
পরিপূর্ণ হইয়াছিল । জীবন সম্পর্কে গভীর দায়িত্ববোধ ও আত্তর 
অম্পদের প্রাচূর্য্য বশতঃ যুবোচিত লঘু আনন্দের স্পৃহা এবং চটকদার 
' বাহক পারিপাট্য সাপের খোলসের শ্যায় অপ্রয়োজনে তাহার জীবন 





মনীষী গ্র়ুষলচন্্র ৩৫ 


৯৯ দিতি পাস্পস্িস্পসিিসিপাস্পান্পিতসটিত্পিসিলাসপা সাস্পিসিতসিলাস্িপাসিস্দিতীিতাসিপীসপািপাসিসিা পিসি স্পস্ট 


(হইতে খনিয়া পড়িয়াছিল। এইরূপ একাধিক সন্তান কোলে পাইবার 
সৌভাগ্য যে বঙ্গজননীর একদিন হইয়াছিল, তিনি যে অন্য সকল 
প্রদেশের পুরোভাগে থাকিয়া ভারতবর্কে চালনা করিবেন--তাহাতে 
আর বিচিত্র কি? 





ছাত্র রফু্চ্্র_বিলাতে 


১৮৮২ সালে কালিফোণিয়া নামক জাহাজে প্রফু্চন্দ্র সর্বপ্রথম 
বিলাত যাত্রা করেন। তিনি লগ্নে উপস্থিত হইলে আচার্য জগদীশ 
চন্দ্র বনু ও মিঃ এপস, আর, দাম তাহাকে সাদরে অভ্যর্থনা করেন। 
ইহারা উভয়েই তখন বিলাতে ছাত্র হিসাবে বাস করিতেছিলেন। 
প্রফুল্লচন্দ্র এক সপ্তাহকাল লগুনে অবস্থান করেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত: 
বৈদেশিক আবহাওয়ার মধ্যে মনে যে ভয় ও সক্কোচের ভাব জন্মে, এই 
এক সপ্তাহ মধ্যেই প্রফুল্লচন্দ্র তাহা কাটাইয়! উঠিয়াছিলেন। 

লগুন হইতে প্রফুল্লচন্দ্র এডিনবরায় গমন করেন এবং সেখানকার 
অধ্যাপক আলেকজাণ্ার ক্রাম ব্রাউনের ছাত্ররূপে রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন 
করিতে থাকেন। ক্রাম ব্রাউনের রসায়ন শাস্ত্রে স্থগভীর পাণ্তিত্য 
ছিল। তাহার মৌলিক চিন্ত ও গবেষণ! দ্বার রসায়ন শাস্ত্র বহুল 
পরিমাণে সমৃদ্ধ হইয়াছিল। তাহার সহকারীদ্বয়ও রসায়ন শাস্ত্রে 
বিশেষ কৃতবিগ্ভ এবং পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ কার্যে বিশেষ অভিজ্ঞ 
ছিলেন। ইহাদের সাহচর্ধ্যে ও উপদেশে প্রফুল্লচন্দ্রের রসায়ন শাস্ত্রের 
উপর স্বাভাবিক অনুরাগ একনিষ্ঠ সাধনায় পরিণত হইয়াছিল । রসায়ন 
সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান লাভের জন্ত তিনি এই সময়ে জান্মান ভাষা 
শিক্ষ। করিয়াছিলেন । বি. এস্‌-সি. পরীক্ষার জন্য পদার্থ বিদ্া ও 


৩৬ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র 


শা ্পা শা সি্পাশি পি শপাসিা 


প্রাণী বিদ্যা তাহার পাঠ্যতালিকার অন্তভূক্ত ছিল। কিন্তু তাহার! 
রসায়ন শাস্ত্রের স্তায় তাহার মনকে আকৃষ্ট করিতে পারে নাই। 

১৮৮৫ সালে প্রফুল্লচন্ত্র যখন বি. এস-সি. পরীক্ষার জন্য প্রস্তৃত 
হইতে ছিলেন, তখন তাহার বয়স ২৪ বৎসর । এই সময়ে এডিনবরা 
বিশ্ব-বিগ্ভালয় 'সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বে ও পরে ভারতের অবস্থা” সম্বন্ধ 
সর্ব্বোৎকৃষ্ট প্রবন্ধের জন্য একটি পুরস্কার ঘোষণা করে। প্রফুল্লচন্্ 
যদিও ইতিহাস ও রাজনীতি চ্চা পরিত্যাগ করিয়া রসায়ন শাস্ত্রের 
চচ্চ্ণয় মনোনিবেশ করিয়াছিলেন, তথাপি ভারত সন্তান হিসাবে এই 
আহ্বানে তিনি সাড়া না দিয়া থাকিতে পারিলেন না। 

এই প্রবন্ধ রচনার জন্য তাহাকে কঠোর পরিশ্রম করিতে হইয়াছিল । 
এই জাতীয় প্রবন্ধ রচনায় রাজনীতি, অর্থনীতি এবং দেশের প্রচলিত 
শীসননীতি সম্পর্কে সুপ্রচুর জ্ঞান এবং স্ক্ষ বিশ্লেষণ শক্তি থাকা একাস্ত 
প্রয়োজনীয় । সিদ্ধান্তগুলি অন্রান্ত তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া 
প্রয়োজন । বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী-সম্পন্ন বিভিন্ন মনীষীর চিন্তাধারার 
সহিত পরিচিত না হইলে, স্বাধীন অথচ অন্রান্ত মতবাদ গড়িয়া! উঠে 
না। সুতরাং প্রফুল্লচন্দ্র এই প্রবন্ধ রচনার জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি 
এবং ইতিহাস সম্পর্কে ইংরাজী ও ফরাসী ভাষায় লিখিত বধ গ্রস্থ 
অধ্যয়ন রুরেন। পালিয়ামেণ্টে বক্তৃতার রিপোর্ট ও বিখ্যাত সাময়িক 
পত্রিকায় প্রকাশিত ভারত সম্পকাঁয় প্রবন্ধাদিও তাহার অধীত 
বিষয়ের অন্তভূক্ত ছিল। 

এইরূপে প্রফুর্লচন্দ্র অকাট্য যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বহু তথ্যপূর্ণ 
একটি সুচিন্তিত প্রবন্ধ লিখিলেন। যথাসময়ে প্রবন্ধ দাখিলও করিলেন ; 
কিন্ত ছঃখের বিষয় পরীক্ষকদিগের বিচারে উহা! সর্বোৎকৃষ্ট বলিয়া 





রী পরুন ৩৭ 





পিপি শাশী শশী শিট পা লট ০ শি এ শা শশীশাীপটাপসিপাশপাতপাপত পাটি শি 


বিবেচিত হইল ন|। তাহার ও অন্য আর এক জনের প্রবন্ধ আদর্শের 

কাছাকাছি বলিয়া! গণ্য হইয়াছিল। প্রবন্ধ পরীক্ষক প্রফুল্লচন্ত্রের 

প্রবন্ধের উপর মন্তব্য করিয়ছিলেন-__“ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ইহা! শ্লেষ- 
পুর্ণ আক্রমণে পূর্ণ ।” অথচ এই প্রবন্ধটি পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হইলে 
ইউরোপ ও ভারতের শিক্ষিত সমাজ এবং প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলি 

লেখকের ভারত সম্বন্ধে গভীর অন্ুসন্ধিংসা এবং স্বাধীন নিভীঁক 

মতবাদের জন্য ইহার ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছিলেন। এই স্ুচিস্তিত 
প্রবন্ধে বিলাতের বিশ্ববিগ্ঠালয়ের ছাত্রদের প্রতি নিবেদনে লিখিত হইয়া 
ছিল--“ভারতব্যাপারে ইংলপ্ের অবহেলা! ও ওদাসিন্যের ফলেই ভারতের 
বর্তমান শোচনীয় অবস্থার উৎপত্তি। ইংলও এই পর্যযস্ত ভারতের প্রতি 
তার পবিত্র কর্তব্য পালন করে নাই | তোমরা গ্রেট ব্রিটেন ও 
আয়র্লগ্ডের ভবিষ্যৎ বংশধর, ভারতে অধিকতর উদার, স্যায়সঙ্গত ও 
সহ্নদয় শাসন নীতি অবলম্বনের জন্য তোমাদের দিকেই আমরা চাহিয়া 
আছি। সেই শাসন নীতির উদ্দেশ্য কতকগুলি মামুলি বুলি হইবে না। 

তাহার উদ্দেশ্য হইবে ইংলও ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর মৈত্রীর বন্ধন 
স্থাপন। তোমাদেরই উপরে আমাদের সমস্ত আশা ভরসা, শীঘ্রই এমন 
একদিন আসিবে যে, তোমাদদিগকে সেই সামাজ্যের শাসন কার্ধ্য 
পরিচালনার ভার গ্রহণের জন্য আহ্বান করা যাইবে, যে সাম্রাজ্যে স্ূধ্য 

কখন অস্ত যায় না-_যাহা'র রাষ্ত্রীক বলিয়৷ আমরা গৌরবান্বিত। অদূর 
ভবিষ্যতে তোমরাই ২৫ কোটি মানবের ভাগ্যবিধাতা হইবে । আমরা 

আশা করি ষে, তোমরা যখন রাজ্যশীসনের ক্ষমতা পাইবে, তখন বর্তমান 

অব্রিটিশ নীতির অবসান হইবে এবং ভারতে এখনকার চেয়ে উজ্জল ও 

সুখময় যুগের উদয় হইবে”। 


৩৮ মনীষী প্রফুষ্লচন্দ্র 


উক্ত পুস্তিকার একখণ্ড বিলাতের স্তুপ্রসিদ্ধ রাজনীতিক 'জন্‌ 
ব্রাইটের নিকট প্রেরিত হুইলে, তিনি প্রফুল্লচন্দ্রকে একখানি দীর্ঘ পত্র 
লেখেন। উক্ত পত্রে তিনি প্রফুল্লচন্দ্রকে যাহা লিখিয়াছিলেন, বাংলায় 
তাঁহার মর্ম দেওয়া হইল £-_ 

“আমি আপনারই মত “লর্ড ডাঁফরিনের” বার্মাননীতির জন্য দুঃখিত 
এবং তাহার তীব্র নিন্দা করি। পুরাতন পাপ ও অপরাধের ইহা! 
পুনরাবৃত্তি-_সেনৌতি চিরদিনের জন্য পরিত্যক্ত হইয়াছে বলিয়। আমর! 
মনে করিয়াছিলাম। ভারতে আমাদের প্রকৃত স্বার্থকি? তৎসম্বন্ধে 
এখানকার জনসাধারণের মধ্যে গভীর অজ্ঞতা, সঙ্গে সঙ্গে ঘোর 
্বার্থপরতাও রহিয়াছে । সত্যকার রাজনীতি ও নৈতিক আদর্শ হইতে 
জষ্ট হইলে সর্বনাশ ও ধ্বংস অনিবাধ্য । আমাদের বংশধরগণের তাহা 
হয়তো! প্রত্যক্ষ করিতে হইবে; এবং তাহা দেখিয়া অনুতাপ করিতে 
হইবে ।% 

১৮৮৬ সালে লিখিত প্রফুল্পচন্দ্রের “ভারত বিষয়ক প্রবন্ধ”-”ও 
দেশবিদেশের স্তৃধীমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল। উক্ত চিত্বীকর্ষক 
পুস্তিক1 হইতে কিয়দংশ এখানে বাঙ্গালায় রূপান্তরিত করিয়া উদ্ধত 
করা হইল-- 

“ছুর্ডাগ্যক্রমে ইংলগু এখন অপরিরার্ধ্য যুক্তি ও তথ্য স্বীকার করিতে 
প্রশ্তুত নয় এবং ভারতের নব-উদ্বোধিত জাতীমুতাঁর ভাবকে সে পিষিয়া 
মারিতে চেষ্টার ক্রি করিতেছে না। বিদেশী শাসনের স্বার্থপর, কঠোর ও 
নিষ্ঠুর নীতির ফলে দেশবাসীর উপর নানাপ্রকার অযোগ্যতার ও 
অক্ষমতার ভার চাপাইয় দেওয়া হইয়াছে । যে মুহূর্তে কোন ভারতবাসী 
নিজেদের সম্বন্ধে চিন্ত করিতে আরম্ভ করে, সেই মুহূর্তেই সে 


মনীষী গ্রফু্লচন্দ্র ৩৯ . 


সপ সপস্পসপস্পলিসপালা স্ 


সম্ভবতঃ নিজেদের জন্য লঙ্ভা অনুভব করে। আদর্শ ও বাস্তবের মধ্যে 
যে আকাঁশ পাতাল প্রভেদ দেখে-_ত্রিটিশ রাজনীতিকদের কথা ও 
কার্যের মধ্যে সামর্ধস্ত স্থাপন র। তাহার পক্ষে কঠিন হুইয়। উঠে ।” 

প্রফুল্লচন্দ্রের এই সময়ে লিখিত প্রবন্ধগুলিতে আমরা যেন তাহার 
জীবনের খাঁটি স্থুরটুকুর পরিচয় পাই। নিভীক সত্যবাদীতা, অনাবিল 
দৃষ্টি দিয়! সত্যকে উপলব্ধি করিবার প্রয়াস, দুর্ভাগা দেশমাতৃকাঁর জন্ত 
গভীর মমতা-বোধ-_-সকলই তীহার লেখনী-মুখে ফুটিয়া' উঠিয়াছে। 
বর্তমান প্রফুল্লচন্্রকে দেখিয়া আমর! ভবিষ্যৎ প্রফুল্লচন্দ্রকে কতকটা যেন 
ধারণা করিয়া লইতে পারি। 

১৮৮৭ সালে প্রফুল্লচন্দ্র 'এডিনবরা বিশ্ববিষ্ঠ।লয় হইতে রসায়নশাক্ধে 
মৌলিক গবেষণার জন্য ডি, এস-সি, উপাধি লাভ করেন। তিনি এ. 
বসরই “হোপবৃত্তি' পাইয়া আরও এক বশসর তথায় অবস্থান করেন এবং 
জৈব রসায়ন শাস্থ অধ্যয়নে ও গবেষণ। কাধ্যে প্রবৃত্ত হন। 

১৮৮৮ সালের প্রথমে প্রফুল্লচন্দ্র দেশে ফিরিবার সংকল্প করেন। 
কিন্তু দেশে ফিরিবার পূর্বের স্কটলগ্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দেখিবার জন্য 
তাহার প্রবল ইচ্ছ। হইল। *ওয়ার্ডসওয়ার্থ'। “ক্কট' প্রভৃতি বিখ্যাত কবি- 
দিগের লেখনীতে 'হাইল্যাণ্ডের এই সকল দৃশ্ঠাবলী অমর হইয়া আছে। 
তিনি তীহার এক মুসলমান বন্ধুর সহিত ইহার এঁতিহাসিক স্থানগুলি 
এবং সকল সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই স্কটলগ্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী 
দেখিয়। দেখিয়া সমস্ত স্কটলগড পদব্রজে ভ্রমণ করিয়াছিলেন। ভারতে 
ফিরিবার পূর্ধে্ব তিনি ভারতীয় শিক্ষণ বিভাগে চাকরি পাইবার আশায় 
লগুনে কয়েক মাস অপেক্ষ। করেন। ব্রিটিশের বর্ণ-বৈষম্য মূলক নীতির 
ফলে অবশেষে তাঁহাকে হতাশ হইয়া দেশে ফিরিতে হয়। এবার তিনি 





৪৯ মনীষী প্ররসুল্চন্তর 


সরাসরি জাহাজে না আসিয়া, ইউরোপের মধ্য দিয়! ট্রেণে বৃন্দিসি' 
আসিয়৷ সেখান হইতে জাহাজে করিয়! দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। 

বিলাতে প্রফুল্লচন্দের জীবন যাত্রা প্রণালী সম্পর্কে জানিবার জন্য 
মনে কৌতুহল জাগ্রত হওয়৷ স্বাভাবিক । সুগঠিত ব্যক্তিত্ব এবং অভীষ্ট 
বিষয় সম্পর্কে গভীর অনুরাগ লইয়া তিনি বিলাত যাত্র। করিয়াছিলেন। 
জ্ঞানের মহিমায় তাহার অন্তর-লোক উজ্্বল হইয়া উঠিয়/ছিল। সেই 
ওজ্ঘবল্যে নিবদ্ধ-ৃষ্টিপ্রফুল্লচন্দের মন হইতে বাহ বস্তু সম্পর্কে সমস্ত 
আকর্ষণ একেবারেই খসিয়া পড়িয়াছিল" তাই বৈদেশিক সভ্যতার 
জাঁকজমক, এবং বিলাসিতা ও সহজ প্রলোভনের সহত্র উপকরণ 
তাহার চিত্তকে কোন দিনই বিভ্রান্ত করিতে পারে নাই। লক্ষ্যে দৃষ্টি 
নিবদ্ধ রাখিয়া সাধনার সৃন্মন পথ বাহিয়া লক্ষ্যের শেষ সীমায় পৌছিবার 
একাগ্র সাধনায় তীহার মন একান্ত ভাবে সমাহিত ছিল। বান্যকাল 
হইতেই প্রফুল্লচন্দ্র মিতব্যযিতা অভ্যাস করিয়া ছিলেন। যুক্তির নিকষে 
পরীক্ষা না করিয়া কোন আচারই তিনি গ্রহণ করিতেন না। তাহার মন 
প্রগতিশীল ছিল। কিন্তু বৈদেশিক আচার ব্যবহারকে কোনদিনই তিনি 
প্রগতিশীলতার লক্ষণ বলিয়া মনে করিতেন না। আচার ও পোষাক 
পরিচ্ছদে বাঙ্গালীর জাতীয় আদর্শকে তিনি অক্ষু রাখিয়াছিলেন-- 
. প্রফুল্লচন্্র কোন দিনই “সাহেব বনিয় যান নাঁই। 

বিলাতে তিনি চোগাচাপকান যুক্ত ভারতীয় পোষাকই পরিধান 
করিতেন। হ্বল্প মূল্যের অথচ পুষ্তিকর থাগ্ভ তাহার আহার্য্য ছিল। 
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার তিনি সর্বদাই পরিহার করিয়। চলিতেন। ইটালীর 
ফ্টেশনগুলিতে ততকালে জলের পরিবর্তে সন্ত হাঁলক। মগ্চের ব্যবস্থা 
ছিল। দেশে ফিরিবার পথে জলের অভাবে তাহাকে যথেষ্ট কষ্ট 


মনীষী প্রফুল্লচন্দ্র ৪১ 


4৮০৯৯ লাল লিল নল উল স্টিল পাসসখলি 


পাইতে হয়। প্রত্যেক সময়ই তাহাকে তৃষ নিবারণের জন্য জলের 
কলের অনুসন্ধান করিতে হইয়াছিল; তবু সহজলভ্য-হালকা৷ মগ্চের 
দ্বারা তৃষ্ণ| নিবারণের প্রবৃত্তি তাহার একবারও হয় নাই । বৈদেশিক 
সভ্যতার বাহ আড়ম্বরের দৃষ্টি বিভ্রমকারী দীপ্তি দেশের বনু যুবকের 
অপরিমেয় ভবিষ্যৎ সমূলে নষ্ট করিয়া দেয়। সেই সকল চঞ্চলমন৷ 
যুবকের পক্ষে প্রফুল্লচন্দ্রের বিলাতের জীবন-যাত্রা-প্রণালী আদরস্থানীয় 
হওয়া,উচিত। 


পলাশ ত শিস শিপসিশীিপীশীতাশি তা পিপি 


শিক্ষাত্রতী প্রফুল্লচন্দ 


১৮৮৮ সালের আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রফুল্লচন্দ্র স্বদেশে 
প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরিয়াই প্রফুল্লচন্দ্র মাতার সহিত দেখা 
করিবার জন্য স্বগ্রাম রাড়লীতে গমন করেন। তীহার অনুপস্থিতি 
কালে তীহার কনিষ্ঠ! ভগ্লীর মৃত্যু হয়! দীর্ঘ ছয় বৎসর অনর্শনের 
পর এই কন্যা-বিয়োগ-বিধুরা মাতার পুত্রের সহিত সাক্ষাতকার বিষাদ- 
আনন্দের সংমিশ্রনে বড়ই করুণ ও উচ্ছাসময় হইয়াছিল। বাড়ীতে 
কয়েকদিন অতিবাহিত করিয়া৷ প্রফুল্লচন্দ্র কলিকাতায় ফিরিয়। আসেন। 

প্রফুলচন্দ্র ভারতীয় শিক্ষাবিভাগে কর্মমপ্রাপ্তির আশ! পরিত্যাগ 
করিয়াই এদেশে ফিরিয়া আসেন । ১৮৮৮ সালের আগস্ট মাঁস হইতে 
১৮৮৯ সালের জুন মাসের শেষ পর্যন্ত তাহাকে একরূপ বেকার অবস্থায় 
থাকিতে হইয়াছিল। বিদেশে আহত জ্ঞান প্রয়োগক্ষেত্রে কাজে 
লাগাইবার জন্য তাহার মন ব্যাকুল হইয়াছিল; গবেষণাগারের নীরব 
আহ্বান তাঁহাকে প্রবল ভাবে আকর্ষণ করিতেছিল ; অথচ অবস্থার 
প্রতিকুলত! বশতঃ তাহার মত কর্ম্প্রয়াসী ব/ক্তিকে হাত প| গুটাইয়া 


৪২ মনীষী প্রফুল্লচন্দ্র 
বসিয়! থাকিতে হইয়াছিল। জীবনের এই অবস্থ। তাঁহার নিকট অত্যন্ত 
কষ্টদায়ক এবং অশান্তিকর হইয়াছিল। যাহা হউক, অবশেষে তিনি 
মাসিক ২৫০২ টাঁক! বেতনে প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী সহকারী: 
অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হইলেন। তাহার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়া 
সম্পর্কিত একটি ঘটনায় প্রফুল্লচন্দ্রের সবল, স্বাধান ও তেজন্বী মনের 
পরিচয় পাওয়া যাঁয়। ভারতীয়দিগের যোগ্যতায় তাহার গভীর আন্ছ। 
ছিল | জাতীয় স্বার্-সংরক্ষণ-বুৰ্ধি-পরিচালিত ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট 
এদেশী যোগ্যতাকে দ্বাবাইয়। রাখিতে চাঁহেন-__লগুনে থাকিতে 
প্রফুল্লচন্্র তাহ! উপলব্ধি করিয়াছিলেন তাঁহার কৃষ্ণচন্ম প্রতি- 
বন্ধকতা৷ সৃষ্টি করিয়া, ভারতীয় শিক্ষা বিভাগে তাঁহার ম্যায় গুণীলোকের 
পক্ষে ন্যাধ্যপ্রাপ্য পদ হইতে তীহাকে কি ভাবে বঞ্চিত করিয়াছিল, 
তাহার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁহার মন অত্যন্ত তিক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। 
এই অবিচাঁরের প্রতিবাদ করিবার জন্য তিনি দার্জিলিং যাইয়। শিক্ষা 
রিভাগের ডিরেক্টর 'ক্রফট' সাহেবের সহিত দেখা করেন। ব্রিটিশ 
জাতি সম্পর্কে দেশবাসীর তদানীন্তন অনুকূল মনোবৃত্তির কথা ম্মরণ 
করিয়। প্রফুন্তুচন্দের এই আচরণের কথা বিচার করিলে প্রফুল্লচন্দ্রের এই 
তেজন্থিতা আমর! সম্যক উপলব্ধি করিতে পারিব। “ক্রুফট* সাহেবের 
উক্তিও এখানে উল্লেখযোগ্য । তিনি প্রফুল্লচন্দ্রকে বলিয়াছিলেন__ 
“আপনার জন্য জীবনে অনেক পথ খোল। আছে; কেহ আপনাকে এই 
পদ গ্রহণ করার জঙ্য বাধ্য করিতেছে না। ********* “এডিনবরা' বিশ্ব- 
বিভ্ভালয়ের একজন ডি, এস-সি, কখনও প্রাদেশিক . শিক্ষা বিভাগে 
চাকরির অন্য লালায়িত হয় না ।” 

দৈবের ইঞ্জিত বুঝি ক্র্ফটের ভাঁষায় ফুটিয়া৷ উঠিয়াছিল; ক্রফটের 


মনীষী গ্রফুল্লচন্্র ৪৩ 


এই কর্কশ বাক্যই বুঝি প্রফ্্নচন্দ্রের জীবনে অমৃত বহন: করিয়া 
আনিয়াছিল। প্রফল্লচন্জ এই অন্তায়ের প্রতিবাদে অধপক পদ 
গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন নাঁই সত্য, কিন্তু কে জানে 
ক্রফটের এই জবালাময় শ্রেষ বাক্য দিনের পর দিন কার্য্ের অবসরে 
তাঁহার মনের মধ্যে জবলিয়া৷ উঠিয়া! তাহাঁকে উত্তরোত্তর ব্যবসায়মুখী 
করিতেছিল কিন! ? 

অধ্যাপক প্রফুল্পচন্্র 


১৮৮৯ খৃষ্টান প্রফুল্লচন্দ্র প্রেসিডেন্নি কলেজে অধ্যাপক পদে 
নিযুক্ত হন। ১৯১৬ সাল পধ্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। 
পরে কলিকাতা! বিশ্ববিষ্ভালয়ের অধীনে বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হইলে : 
হ্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি উক্ত কলেজে রসায়ন 
শান্সের অধ্যাপনার ভার গ্রহণ করেন। মৃত্যুকাঁল পর্য্যন্ত এই বিজ্ঞান 
কলেজই প্রফুল্লচন্দ্রের ঘরবাড়ী ছিল। 

সুদীর্ঘ সাতাশ বগসর পর্য্যন্ত প্রফৃললচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজে অধিষ্ঠিত 
ছিলেন। এখান হইতেই তাহার অধ্যাপনা ও মৌলিক গবেষণার যশো- 
ভাতি বিশ্বের দিকে দিকে ছড়াইয়৷ পড়িয়াছিল। তাহার স্জনশীল 
মনের সাহ্চর্ষ্যে এবং অনন্যসাধারণ অধ্যাপনা কৌশলে অসংখ্য ছাত্রের 
মনে স্বাধীন চিন্ত! ও মৌলিক গবেষণার প্রেরণ৷ জাগ্রত হইয়াছিল। 
তাহার দৃঢ় অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের সাহায্যে এখানে তিনি যে 
বিজ্ঞানের আলো জ্বালিয়াছিলেন, তাহাই ক্রমে ক্রমে সার। ভারতকে 
আলোকিত করিয়াছিল, এবং সেই আলোকে সঙ্জীবিত হুইয়। ভারতের 
লু জজীনচর্চা অলৌকিক সম্ভাবনায় বিকশিত হইয়। বিশ্ব সভার জ্ঞানের 





৪৪ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র 


পাপী সী সস পস্যপসপপপা সপা অপ ৫ 


আসনে ভারতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল । তীহারই নৈব্যক্তিক বিজ্ঞান- 
সাধনা অসংখ্য যুবকের মধ্যে সণরিত হইয়। ভবিষ্যতে বাঙ্গালায় একটি 
বৃহৎ বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠী গড়িয়! তুলিয়াছিল। আমর! ক্রমে ক্রমে তাহার 
. এই সাধনার বিশিষ্ট রূপটিকে উপলব্ধি করিতে চেষ্টা করিব। 

প্রফুল্লচন্ত্র বলিয়াছেন__“যাহার! রসায়ন শাস্ত্র প্রথম শিখিতেছে, 
এমন সব ছাত্রের শিক্ষকতায় সাফল্য-লাভ করিতে হইলে 
এক্স্পেরিমেন্ট বা পরীক্ষার কাজে নৈপুণ্য চাই।” পুনঃ পুনঃ অভ্যাস 
ব্যতীত পরীক্ষার কার্যে তৎপরতা লাভ হয় না। তৎপরতার অভাবে 
আলোচ্য বিষয় নীরস হইয়া পড়ে । তাহার ফলে ছাত্রের! যন্ত্রগালিতের 
মত কাজ করিয়া যায়; অন্তরের স্পর্শে সে কাজ কোন দিনই 
আনন্দজনক ও চিত্তাকর্ষক হইয়া উঠে না। 

প্রফুল্লচন্দ্র যখন প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার কার্য্যে যোগদান 
করেন, 'পেডলার সাহেব তখন রসায়ন শাস্ত্রের প্রধান অধ্যাপক 
ছিলেন। তাহার সহকারী হিসাবে চন্দ্রভৃষণ ভাছুড়ী পরীক্ষাগারের 
কার্ধ্যের তত্বাবধান করিতেন। ইহাদের উভয়েরই লেবরেটরীর কার্যে 
যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্য ছিল। প্রফুল্লচন্্র “হোপ প্রাইজ ক্বলার" 
হিসাবে অধ্যাপকের সহকারী রূপে কাধ্য করিয়াছিলেন। সুতরাং 
এ বিষয়ে তাহারও অভিজ্ঞতার অভাব ছিল না। তথাপি অধিকতর 
তৎপরতা লাভের জন্য তিনি লেবরেটরীর কার্য্যে পেডলার'2 ও 
চন্দ্রভূষণ ভাছুড়ীর সহায়তা গ্রহণ করিয়াছিলেন। অধ্যাপনার সফলতা 
লাঁভই তাহার জীবনের লক্ষ্য ছিল এবং তিনি সম্পূর্ণ নিরভিমান 
ছিললেন। বিদ্তাভিমানী বা অহমিকাঁপরায়ণ হইলে, “এডিনবরা' 
বিশ্ববিষ্ঠালয় হইতে ডক্টর উপাধিপ্রাপ্ত প্রফুল্লচন্দ্রের পক্ষে একজন 


মনীষী গ্রফুল্লচজ ৪৫ 


২ শাপিটিশশ শশা শি _ শশী িশীশীটি 


অধীনস্থের নিকট হইতে শিক্ষা জাভ করা কখনই সম্ভবপর হইত না। 
অন্যান্য অনেক অধ্যাপকের মত মাত্র যন্ত্রটি দেখাইয়া অথবা বোর্ডে 
তাহার চিত্রাঙ্কন করিয়া অনায়াসেই তিনি তাহার কর্তব্য সম্পাদন 
করিতে পারিতেন। 

কৃতী অধ্যাপক রূপে প্রফুল্লচন্দ্রকে সম্পুর্ণ উপলব্ধি করিতে হইলে 
অধ্যাপনার ব্যবহারিক কৌশল পর্যালোচনা না করিয়া আমাদিগকে 
তাহার অন্তর্লোকে দৃষ্টি সঞ্চালন করিতে হইবে। জ্ঞান আহরণে 
তাহার আনন্দ, জ্ঞান বিতরণেও তাহার আনন্দ, জ্ঞান আনন্দের 
উৎনরূপে শৈশব হইতে তাহার জীবনে যে আবেগ স্থপ্টি করিতেছিল, 
জ্ঞানের অনুকূলে তাহাই তাঁহার জীবনকে ছন্দায়িত করিয়া তুলিয়াছিল। 
এই আনন্দের উন্মাদনায় জীবন ছন্দের তালে তালে নাচিয়া 
চলিয়াছিল এবং পরিশ্রম, অধ্যবসায়, সাধনা, প্রয়োগকুশলতা-_সকলই 
এই জীবনছন্দের বাহক রূপ হিসাবে ফুটিয়া উঠিয়াছিল। আনন্দ 
হইতেই ইহাদের জন্ম, তাই ইহারা তাহার জীবনকে কোনদিনই ক্রিষ্ট বা 
অবসন্ন করে নাই। ছন্দের স্পন্দনে ইহারা ফুটিয়া উঠিয়াছিল, তাই 
যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, যেখানে যে রূপটি কার্য্যপ্রদ, সেখানেই 
ততটুকু সেই রূপেই প্রকটিত হইয়াছিল। প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন জ্ঞানের 
আনন্দে ছন্দায়িত বলিয়! তীহার অধ্যাপনা সফল হইয়াছে, এবং তাহার 
জীবন বহু জীবনে মূর্ত হইয়া ভারতে বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠীর আবির্ভাব 
সম্ভবপর হইয়াছিল। 

অধ্যাপকের কাজে নিযুক্ত হইয়া তিনি উৎসাহের সহিত কাজ 
করিতে লাগিলেন। তীহার নিযুক্ত হইবার তিনমাস পরে 'পেড্লার' 
সাহেব ছুটি লইলেন। সুতরাং রসায়ন বিভাগের সমস্ত ভার প্রফুল্প- 


৪৬ মনীষী গ্রযুল্লচন্্র 


চন্দ্রের উপর পড়িল। প্রফুল্লচন্দ্র বলিয়াছেন__শিক্ষক জীবনে ইহাই 
তাহার সর্বাপেক্ষা কর্্মবহুল সময়।” কখন কখন তীহাকে পর পর 
তিনটি ক্লাসে বক্তৃতা দিতে হইত । তাহার এই সময়ের উপলব্ধির কথা 
তাহার নিজের ভাষায় বলিতে গেলে “কাজেই ছিল আমার আনন্দ 
এবং যে হেতু আমি এই কাজে এক নৃতন উন্মাদন৷ বোধ করিলাম, 
সেই জন্য এই গুরুভার বহন করিতে আমার কোন ক্লান্তি হইল ন1।” 

অধ্যাপন! অধ্যয়নের পারিপুরক-_-উভয়ের যুগপৎ চচ্চায় জ্ঞান 
পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রফুল্রচন্দ্র অধ্যাপকপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া 
অধ্যাপনাকে তাহার জ্ঞান সাধনার অঙ্গ ঠিসাবেই গ্রহণ করিয়াছিলেন । 
যন্ত্ধন্মী মন নিখুত শিক্ষা পদ্ধতির অনুসরণে কারখানা হইতে সহস্র 
সহত্র পণ্যজাতের ন্যায় অসংখ্য ছাচে-ঢাল! জ্ঞানের বাহক গড়িয়া 
তুলিতে পারে, কিন্ত সেই জ্ঞানকে গবেষণা, উদ্ভাবন ও আবিক্রিয়ার 
মোহনীয় স্থজনশীলতায় বিচিত্র ও মনোহর করিয়া তুলিতে হইলে, 
প্রাণের স্পর্শে শিক্ষাকে প্রাণবন্ত করিয়া তুলিতে হয়। অধ্যাপনা 
কালে প্রফুল্লচন্দ্রের ভাবলোক আন্দোলিত হইত- প্রাণ আনন্দে 
মতিয়া উঠিত। তাই তাহার শিক্ষ! সকলের অন্তর স্পর্শ করিত। 
নীরস শুষ্ক কাষ্ঠ যেমন আগুনের সংস্পর্শে আগুন হইয়া উঠে প্রফুলল- 
চন্দ্রের জ্ঞানধন্মী মনের সংস্পর্শে আসিয়া সকল ছাত্রেরই মন তেমনিই 
জ্তানধন্মাঁ হইয়। উঠিত | 

কলেজের কোন ক্লাস বা শ্রেণীকে সমগ্টিগত অস্তিত্ব হিসাবে তিনি 
কোনদিনই বিবেচনা করেন নাই। তীহার কল্যাণকামী দরদী মন 
ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক ছাত্রের সম্পর্কে কৌতৃহলী ছিল । শিক্ষক ও 
ছাত্রের মধ্যে সৌহার্দিপূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক শিক্ষার পক্ষে যে কিরূপ 





মনীষী গ্রসুল্লচন্দ্র ৪৭ 


আমরা তাহ! জানিতে পারি। তিনি বিদ্যামন্দিরের চারিটি দেওয়ালের 
মধ্যে ছাত্র-অধ্যাপকের মিলন-ক্ষেত্রকে সীমাবদ্ধ রাখেন নাই। হিন্দু 
হোষ্টেলে তিনি বহু সময় ছাত্রদের মধ্যে কাটাইতেন। তিনি ছাত্রদের 
সহিত মিলিয়া মিশিয়। তাহাদের খুটিনাটি সুখ ছুঃখ, সুবিধা অসুবিধা 
জীবনের সকল, অবস্থার সহিত পরিচিত হইতেন-_-তাহাঁদের ছুঃখে 
সহানুভূতি দেখাইতেন, অন্ুুবিধায় সাহায্য করিতেন এবং তাহাদের 
সুখে প্রাণখোলা আনন্দ করিতেন। এইরূপ আনন্দময় পরিবেশের 
মধ্যে তাঁহার হাসিগল্প, অমায়িক ব্যবহার, ভাবপ্রদীপ্ত মুখচ্ছবি, আদর্শ- 
নিষ্ঠা সকলই অজ্ঞাতে ছাত্রদের মনকে প্রভাবিত করিত। এইভাবে 
্রফ্ল্লচন্জের জীবন হইতে জ্ঞানক্ফুলিঙ্গ ছড়াইয়া পড়িয়া ছাত্রদের হৃদয়ে 
হৃদয়ে জ্ঞানের আগুন জ্বালাইয়! দিত। 

কলেজে বক্তৃতা দানের প্রচলিত রীতিকে তিনি অতিশয় ঘ্বণার 
চক্ষে দেখিতেন। বক্তৃতা দ্বারা আলোচ্য বিষয় ছাত্রদের নিকট আদৌ 
সহজবোধ্য হয় না। ইহা ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ এবং 
হৃদয়ে গবেষণা প্রবৃত্তির উন্মেষ সাধনে কোন সহায়তা করে না। 
্রফুল্লচন্দ্র স্পষ্টই বলিয়াছেন_-“যদি কোন ছাত্র সময়ের সদ্যবহার 
করিতে চায়, তাহ! হইলে সে দেখিবে যে, এই সব বক্তৃতায় ক্লাস 
হইতে অনুপস্থিত থাকাই তাহার পক্ষে বেশী লাভজনক |” পুস্তক- 
নিবদ্ধ ব৷ অধ্যাপক-বিবৃত কোন সত্যকে ব্বয়ংসিদ্ধ বলিয়! মানিয়৷ না 
লইয়া ন্যায়শীস্ত্রামুগ বিচাঁর-বিতর্কের ছারা ছাত্র স্বয়ং যদি সেই সত্যকে 
সিদ্ধান্তরূপে গড়িয়। তুলিতে পারে, তবেই তাহার বুদ্ধির প্রকৃত অনুশীলন 
করা হয়। 


৪৮ মনীযী গ্রফুল্লচন্্র 





ক্লাসে নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তক অনুসরণ করিয়া চলার প্রথাকেও তিনি 
অত্যন্ত দূষণীয় মনে করিতেন। তিনি নিজেও তাহার পঠদ্দশীয় 
নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে কোনদিনই তাহার বুদ্ধিকে অবরুদ্ধ করিয়া! 
রাখেন নাই। পাঠ্য পুস্তকের বাহিরে যে সীমাহীন জ্ঞানভাণ্ার, 
. সেখান হইতেই আচার্ধ্যদেব তাহার মনের খোরাক সংগ্রহ 
করিয়াছিলেন। তা"ছাড়। একই বিষয় বিশ জনের মুখে শুনিলে বা 
বিশ জনের লেখায় অধ্যয়ন করিলে, সেই বিষয় সম্পর্কে বলিবার ও 
লিখিবার একটা স্বাধীন ও নিজন্ব ভঙ্গী গড়িয়া উঠে। পরন্ত সেই 
বিষয় একজনের মুখে শুনিলে, বা একজনের লেখায় অধ্যয়ন করিলে, 
সেই বাক্যের প্রত্যক্ষ অর্থ ও পরোক্ষে তাহার সহিত যে সকল তাংপর্য্য 
জড়াইয়া থাকে, তাহা সম্যক উপলব্ধি হয় না এবং ছাত্রকে ভূল করিবার 
আশঙ্কায় ভয়ে ভয়ে কথা বলিতে হয়। স্থতরাং প্রফুল্লচন্দ্র একই বিষয় 
সম্পর্কে বহু পুস্তক অধ্যয়ন করিবার পক্ষপাতী ছিলেন। 

এই মনোভাব লইয়া যিনি অধ্যাপনা কার্য্ে লিপ্ত হইয়া ছিলেন, 
অথবা! অধ্যাপন। কার্য্যে লিপ্ত থাকা কালে এই মনোভাব ধাঁহার মধ্যে 
গড়িয়া! উঠিয়াছিল, তিনি যে অধ্যাপনা রীতির বাধ্যতামূলক অঙ্গ 
অব্যাহত রাখিয়াও নিজের চিন্তার ও আদর্শের অনুকূলে ছাত্রদের 
মনোবৃত্তি গড়িয়া তুলিবার মত স্বাধীন পদ্ধতি অবলম্বন করিবেন__ 
তাহাতে বিচিত্রতা কি? তাহার “আত্মচরিতে” ছাত্রদের অধ্যাপনা 
সম্পর্কে তিনি বলিয়াছেন ২ | 

“্বয়ংপ্রভ ব্যক্তিত্বের মাহমায় ধাহার জীবন আপন! হইতে চারিদিকে 
ছড়াইয়। পড়ে, তিনি স্বভাবতই অভিমানশৃন্ত হন। প্রফুল্লচন্দ্র একই 
কারণে অভিমানশুন্য ছিলেন। অপরের জীবন সম্পর্কে তাহার যথেষ্ট 


'মনীষা, গ্রসুলচন্র ৪৯ 


মর্যযাদাজ্ঞান ছিল। সেইজন্য অপরের কার্য্ের উপযুক্ত মূল্য দিতে 
তিনি কোন দিনই কার্পণ্য করেন নাই। তাহার ছাত্রদিগেরমধ্যে 
বিজ্ঞানচচ্চার যে বিপুল প্রয়াস ও অভূতপূর্ব সফলতা পরিলক্ষিত-হয়, 
অন্তান্ত কারণের মধ্যে এই ছুইটি কারণেই 'তাহা বিশেষভাবেই সন্তব 
হইয়াছিল। তাহার আত্মকর্তৃত্বের মোহ তাহাদের স্বাধীন চিন্তার পথে 
বিদ্ব স্থ্টি.করে নাই। পরন্ত, মূল বস্টিকে লক্ষ্যে রাখিয়া ভাবিবার ও 
কাধ্যন্রম অনুসরণ করিবার অবাধ অধিকার তিনি তাহাদের 
দিয়াছিল্নেন। এই দুইটি কারণ বশতঃই তাহার সহকম্মীদিগের মনে 
'আত্মপ্রত্যয় ও দায়িত্বরোধ জাগ্রত হইত। আত্মপ্রত্যয় তাহাধিগকে 
স্বাধীন চিন্তায় উদ্ধদ্ধ করিত এবং গরেষণা কার্য্যে প্রেরণা দান 
করিত এবং "দায়িত্ববোধ বিষয়ান্তরে ভ্রমণশীল মনকে সংযত করিয়া 
কর্তব্য সম্পর্কে তাহাদিগকে নিষ্ঠাবান করিয়া তুলিত। তাহার 
পরিচালনাধীনে কলিকাতা বিশ্ববিষ্ঠালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা- 
কারী ছাত্রগণ যে অভূতপুর্বব সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন, প্রফুল্ল 
চন্দ্রের এই সকল চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যই তাহার অন্যতম কারণ রূপে ' 
বিগ্কমান ছিল। 

(প্রসিডেন্সি কলেজে অধ্)াপনাঁকালে রাসায়নিক আবিষ্কারের জন্য 
গ্রফুল্লচন্দ্রের নাম চারিদিকে ছড়াইয়। পড়িয়াছিল। তাহার অধ্যাপনা- 
গুণে মধুলুব্ধ ভ্রমরের ন্যায় বহু প্রতিভাবান ছাত্র তাহার পাদমুলে 
একত্রিত হইয়াছিল । তাহার দরদী মনের সান্নিধ্যে এই নকল তরুণের 
চিত্ব-লোক সহজে উন্মুক্ত হইয়াছিল । তাহার ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞাননিষ্ট! 
ইহাদের জীবনকে প্রভাবিত করিয়াছিল। তাহার অধ্)াপনা-কেশল 
ইহাদের সম্ভীবনাঁময় জীবনকে কৃতিত্বে ও গৌরবে বিকশিত ক্রিয়াছিল। 

৪ 





৫০ মনীষী এফুল্চন্্র 


শাক, শশপাস্টি সমাস 
০ সস সপ পিসপাপী পা পাকি 


এই জ্ঞানানন্দময় তপস্থীকে কেন্দ্র করিয়া এইভাবে ভারতে রাসায়নিক 
গোর্ঠী গড়িয়া উঠে। বাংলার যে সকল বৈজ্ঞানিক মৌলিক গবেষণা 
দ্বারা আজ্জ৬1৮ ৯ লাভ করিমাছেন, তাহাদের প্রায় সকলেই 
প্রফুল্লচন্দ্রের অধীনে শিক্ষাললীভ করেন এবং তীহাগই তন্বাধধানে 
গবেষণ] দ্বারা খ/াতি লাভ বলে! গাদন জল্লন।।এ কি 
পরিমাঁণে সফল হইয়াছিল, তাহা এই ব্যাপার হইতেই আমরা সম্যক 
উপলব্ধি করিতে পারি। 

বিদেশে শিক্ষালাভ ব্যতীত এ দেশের বিজ্ঞানাগারে গবেষণ দ্বারাও 
যে মৌলিক তত্ব আবিষ্কার সম্ভব, 11086%8 [9 এবং 9811878 
চ.0081০0. তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ | এই ভাবে তাহার কর্ম 
কুশলতা গুণে ভারত আজ বিজ্ঞান জগতে স্বয়ংপ্রতিষ্ঠ হইতে পারিয়াছে 
এবং কলিকাঁত। নগরী বিশ্বের বিজ্ঞীন আলোচনার অন্যতম কেন্দ্ররূপে 
খ্যাতি লাভ করিয়াছে । | 

এইভাবে আপনাকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিলাইয়া দিয়া প্রফুল্লচন্তর 
উহার অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে বহু হইয়। জ্ঞানময় অত্ায় ফুটিয়! 
উঠ্ঠিয়াছিলেন। তিনি কল্পনায় দেশমাতৃকার যে জ্ঞানগরিমাদীপ্ত মহৎ 
আলেখ্য গড়িয়। তুলিয়াছিলেন, তাহার অধ্যাপনা-নৈপুণ্যে তাহারই 
জীবদ্দশায় তিনি সেই কল্পনাকে বূপায়িত হইতে দেখিয়। গিয়াছেন। 
মেঘনাথ সাহা, নীলরতন ধর, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, সত্যেন্্র নাথ বন্থ এবং 
আরও অসংখ্য বৈজ্ঞানিকের গবেষণার দানে নিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখ। 
বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হইয়াছে এবং এই পরাধীন ভারতের বৈজ্ঞানিকদিগের 
আবিষ্কৃত তথ্য আজ্‌ বিশ্বের সর্বত্র সমাঁদরে পঠিত হইতেছে । প্রফুল্নচন্্ 
তাহার জীবদ্দশাতে এই সকল বৈজ্ঞানিকের সম্মিলনে ভারতীয় 





মনীষী প্রফুল্ল ৫১ 


সা প্টিও ইট উস 


রাসায়নিক গোষ্ঠীর (01190. 301100] 01 079771505) গোড়াপত্তন 
করিয়া যান এবং ভারতে প্রকাশিত ইহারই মুখপত্রে বৈজ্ঞানিকদিগের 
মৌলিক প্রবন্ধ প্রকীশ করিবার রীতি প্রবর্তন করেন । 

ব)ক্তিবিশেষের এখন বে র্‌ শিখি নট সময়ের কোন বিশিষ্ট পরিবেশ 
গঠনে খে ২০ অনংস।ত। ২৪০২৭ ৩৮ ৪ + ইতিহাসে তাহার তূরি তরি 
নি: 51,৯। এ।এ ॥ শ/সর 2 বেজ ১2৮ ফর্ব্িন 
দাশনিক চেতণ। [ক অপুধব গুবমায় না ফুটিয়া উযছিল | অতিকায় 
মন্থরানুড়ৃতি প্রাগৈতিহাসিক জীবের স্ভায় ইউরোপের স্থবির ধর্্মজীবন 
মার্টন লুথারের এক ধাক্কায় নৃতন করিয়। বাঁচিয়া উঠিল। কত নূতন 
ভাবধারায়, কত পবিত্র জীবনের আদর্শে ই ন| তাহ! সমৃদ্ধ হইয়া উঠিল | 
বস্তুতঃ, প্রফুল্লচন্্র গতান্থগতিক ভাবের ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে আবর্তিত 
বাঙ্গালীর মলিন ও মৃতপ্রায় চিন্তাধারাকে বৈজ্ঞীনিকতার নৃতন খতে 
প্রবাহিত করিয়া তিনি বাঙ্কালীর তথা ভারতীয়ের ৪ সজীব ও 
স্থজনশীল করিয়। তুলিয়াছেন। 

শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক হওয়! তাঁহার জীবনের বড় কথা নহে। তাঁহার 
জীবনের যে প্রভাব দেশে বিজ্ঞান অনুশীলনের আবহাওয়া সি 
করিয়াছিল, তাহাই জাতিকে তাহার সর্বশ্রেষ্ঠ দান। তাহার 
আত্মবিতরণকে সম্যক উপলব্ধি করিতে হইলে রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য 
ভাষায় বলিতে হয়-_- 

“উপনিষদে কথিত আছে, যিনি এক তিনি বল্লেন, আমি বহু ' 
হব। স্থষ্টির মূলে এই 'আত্মবিসর্জজনের ইচ্ছা । আচার্ধ্য প্রফুল্লচন্দ্রে 
স্থ্টিও সেই ইচ্ছার নিয়মে ৷ তীর ছাত্রদের মধ্যে তিনি বহু হয়েছেন, : 
নিজের চিত্তকে সঙ্তীবিত করেছেন বহু চিত্তের মধ্যে। নিজেকে 


€২ মনীবী গ্রকুলাচন্র 


০ সপ পাসিতাস্টি সিসি 





শাসন 


অকৃপণভাবে সম্পূর্ণ দান না করলে এ কখনো সম্ভবপর হোত না। 
'এই যে আত্মদানমূলক স্ষ্টিশক্তি এ দৈবীশক্তি। আচার্ষ্যের এই 
শক্তির মহিম। জরাগ্রস্ত হবে না । তরুণের হদয়ে হৃদয়ে নব নবোম্মেষ- 
শাঙ্গিনী বুদ্ধির মধ্য দিয়ে তা দূরকালে প্রসারিত হবে। ছুঃসাধ্য 
অধ্যবসায়ে জয় করবে নব নব জ্ঞানের জম্পদ। আচার্য নিজের 
জয়বীন্তি নিজে- স্থাপন করেছেন উদ্চমশীল জীবনের ক্ষেত্রে, পাথর 
দিযে নয়, প্রেম দিয়ে । আমরাও তীর জয়ধ্বনি ক্রি ।” 


গ্রবেষণ! ও রসায়নশান্ত্রের ইতিহাস প্রণয়ন 


প্রফুল্পচজ্জের গবেষণাকার্ধ্য অধ্যাপনার সহিত একযোগেই 
চলিয়াছিল। 'অধ্যাপনার পর 'অবসর সময়ে তিনি গবেষণায় 'মগ্ন 
থাকিতেন। বাজারে ক্রয়লন্ধ ঘৃত ও তৈল বিশুদ্ধ ছিলন!। তাহাদের 
সহিত কতট! পরিমাণে ভেজাল দ্রব্য মিষ্ভিত আছে, তাহ। নির্ণয় করিবার 
জন্ত তিনি এদেশজাত ঘৃত ' এবং তৈল লইয়া প্রথমে গবেষণ! কার্ধ্য 
আরস্ত করেন। তিন বৎসর প্রভূত পরিশ্রমের পর তাহার গবেষণার 
ফলাফল তিনি ১৮৯৪ খুঃ অবে' 'জার্ণাল অফ দি এসিয়াটিক সোসায়িটি 
'অব বেঙ্গল' নামক পত্রিকায় প্রকাঁশ করিয়াছিলেন। 

এই সময় দেশীয় ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের অভাব তাহার দৃষ্টি 
আকর্ষণ করিয়াছিল। শিক্ষার্থী যদি বাল্যকাল হইতে বিজ্ঞান 
সম্পবাঁয় গ্রন্থাি পাঠ করিবার সুযোগ পায়, তাহা! হইলে তাহাদের 
মধ্যে বিজ্ঞান আলোচনার অনুকুল মনোভাব গড়িয়া উঠে। হী 
বিবেচনা রিয়া প্রফুল্লচন্দ্র প্রাণীবিজ্ঞান সম্পর্কীয় এবখানি প্রাথমিক 
গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থ লিখিবার জন্য তাহাকে প্রাণীবিজ্ঞান 


মনীষী গ্রফুল্লচ্্. €৩ 


সম্পর্কে বহ প্রামাণিক গ্রন্থ পাঠ করিতে হইয়াছিল। এই সময়, 
বিভিন্ন প্রাণীর অস্থি ও পেশী সংস্থান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভের জন্য 
তিনি তাহাদিগের দেহব্যবচ্ছেদ করিয়াছিলেন । ডাঃ নীলরতন সরকার, 
হেরম্বচন্্র মৈত্র প্রমুখ কয়েকজন বিশিষ্ট বন্ধু লইয়া এই সময় তিনি 


একটি “নেচার ক্লাব” প্রতিষ্ঠা করেন। 
প্রফল্লচন্দ্র যখন প্রেসিডেন্ি কলেজে অধ্যাপন৷ কার্যে নিযুক্ত হুন, 


তখন উক্ত কলেজের রসায়ন বিভাগ একটা পুরাতন একতলা বাড়ীতে 
অবস্থিত ছিল । উহার গবেষণাগারে উপযুক্ত বায়ু সথালন ও দুষিত গ্যাস 
নিষ্ধাশনের ব্যবস্থা ছিল না! । প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ 
টনী সাহেবের দৃষ্টি সেই দিকে আকৃষ্ট করেন। ফলে প্রেসিডেন্সি 
কলেজের রসায়নাগার তৎকালীন ইউরোপীয় বড় বড় গবেষণাগারের 
আদর্শ লইয়া উন্নত প্রণালীতে নির্মিত হইয়ুছিল। 

১৮৯৪ খুঃ অব্রে রসায়ন বিভাগ এই নৃতন গৃহে স্থানান্তরিত হইল। 
এখন হইতে প্ররফুল্লচন্দ্র নৃতন উৎসাহে গবেষণা কার্য্যে আত্মনিয়োগ 
করিলেন। কতকগুলি দৃশ্্াপ্য ভারতীয় ধাতু লইয়া তিনি গবেষণ 
আরম্ত করেন। এ সকল ধাতু বিশ্লেষণ দ্বারা ছুই একটি নূতন পদার্থ 
আবিষ্কার কর! যায় কি না-_তাহাই তিনি পরীক্ষা করিতেছিলেন। কিন্তু 
একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় তাহার গবেষণা ভিন্ন দিকে নিয়ন্ত্রিত হইল । 
তিনি আকশ্মিকভাবে “মাকিউরাস নাইভ্রাইট, আবিষ্কার করিয়া 
বসিলেন। এই আবিষ্তিয়া সম্পূর্ণ অচিস্তিতপূর্বব ! 

রসায়ন ক্ষেত্রে “মাকিউরাস নাইট্রাইট” তাঁহার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার । 
পারদ শ্রেণীর পদার্থ বিন্যাসে একটি অবকাঁশ বুদিন হইতে পৃথিবীর 
বৈজ্ঞানিকদিগের উদ্বেগের কারণ হইয়াছিল। বু অনুসন্ধানেও 





৫8 মনীষী গ্রফুল্লচন্্ 


সপ 


তাহারা এ অবকাশ পুরণ করিবার মত কোন পদার্থ আবিষ্কার করিতে 
পারেন নাই। সুতরাং “মাফিউরাস নাইট্রাইট” আবিষ্কারের সঙ্গে 
সঙ্গে প্রফ্ল্লচন্দ্রের যশ পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক সুধী সমাজে ছড়াইয়! 
গড়িল। “মাকিউরাস নাইট্রাইটের” আনুষঙ্ষিক নূতন নৃতন মিশ্র 
পদার্থ আবিষ্কার হইতে লাগিল। তিনিও মহানন্দে পরম উৎসাহে 
দিনের পর দিন গবেষণায় মগ্ন হইয়! রহিলেন। তাহার এই সময়ের 
গবেষণার বিবরণ শতাধিক নিবন্ধে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সাময়িক 
পত্রিকাতে প্রকাশিত হইয়াছিল । 

গবেষণ! মানুষের উচ্চ চিন্তাবৃত্তির পক্ষে নেশান্বরূপ। গবেষণা-মগ্ন 
সাধকের সন্মুখে কখন কোন্‌ বৈজ্ঞানিক তথ্য সিদ্ধির মনোহর মুদ্তিতে 
দেখ! দিবে_ সেই ছুূর্ববার কৌতুহল বৈজ্ঞানিককে অনন্ত নিষ্ঠার সহিত 
দিনের পর দিন আত্মভোল! আনন্দে কাজের মধ্য দিয়া ঠেলিয়! লইয়া 
ষায়। তাহার মগ্ন চিত্ত প্রাত্যহিক স্বাভাবিক প্রয়োজনগুলির কথাও 
অনেক সময় ভূলিয়। বসিয়া থাকে । নিউটন ও গ্যালিলিওর জীবন চরিত 
পাঠে এইরূপ বনু আখ্যায়িকার কথ! আমরা জানিতে পারি । প্রফ্ল্লচন্দ্রে 
জীবন সম্পর্কে এরূপ কোন আখ্যায়িকার সংবাদ আমরা রাখি ন|। সেই 
সম্পর্কে কোন কথা জানিবারও স্রযোগ আমাদের নাই। তবে গবেষণা 
কার্য্যে তিনি কি বিপুল আনন্দ পাইতেন, তাহার উল্লেখ করিয়! তিনি এক 
স্থানে বলিয়াছেন_এই নবোন্মক্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিচরণ করা এবং 
তাহার অজ্ঞাত স্থান সমূহ আবিষ্কার করা__ইহাতে প্রতি মুহুর্তে উৎসাহ 
ও উদ্দীপনার স্থষ্টি হইত। তিনি অন্যাত্র “আযামেনিয়াম নাইট্রাইটের” 
গবেষণা সম্পর্কে লিখিয়াছেন-_“এই গবেধণায় প্রায় ছুই মাঁস সময়- 
'লাগিয়াছিল। কোন কোন সময় একাদিক্রমে, ১০১২ ঘণ্টা পরীক্ষ 





মনীষী গ্রুল্লচন্ত্র ৫৫ 


কার্যে ব্যাপৃত থাকিতে হইত। কিন্তু বিষয়টি এমনই কৌতুহলপ্রদ 
যে, কাজ করিতে করিতে সময়ের জ্ঞান থাকিত না । প্রত্যহ পরীক্ষা- 
কারধ্যের পর নীলরতন ধর যখন ফলাফল হিসাব করিতেন আমি 
অধীর আনন্দে প্রতীক্ষা করিতাম।” 

এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল, পদমর্ধ্যাদার গৌরব ধাহাঁদের চিত্তকে 
অভিভূত না করে। কিন্তু প্রফুল্লচন্দ্রের নিকট গবেষণার আনন্দের 
সহিত তুলনায় পদমর্ধ্যাদাঁজনিত গৌরব নিতান্ত অকিঞ্চিংকর মনে হইয়া- 
ছিল। জুনিয়র গ্রেডে অধ্যাপক নিযুক্ত হইলেও, প্রফুল্লচন্দ্র ক্রমে 
সিনিয়র গ্রেডে উন্নীত হন এবং কর্তৃপক্ষ রাজসাহী কলেজের অধ্যক্ষের 
পদ গ্রহণ করিবার জন্য তাহাকে আহ্বান করেন | কিন্তু এ পদ 
গ্রহগ করিলে তাহার গবেষণা! কাঁধ্য ব্যাহত হইবে__এই আশঙ্কায় তিনি 
এঁ পদ গ্রহণে অনিচ্ছ। প্রকাশ করেন। সেদিন দুর মফঃম্বলে বনু- 
মানাম্পদ ক্ষমতাগবর্বী অধ্যক্ষের পদ অপেক্ষা কলিকাতায় বিদ্ার 
আবেষ্টনীর মধ্যে গবেষণার অনুকূল পরিবেশে একজন জুনিয়র 
অধ্যাপকের পদও তাঁহার নিকট অধিকতর লোভনীয় মনে হইয়াছিল: 
এই সম্পর্কে প্রফুল্লচন্দ্র তদানীন্তন শিক্ষা বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ" 
মার্িনকে জানাইয়াছিলেন __“আমি প্রেসিডেন্সি কলেজ ত্যাগ করিতে 
অনিচ্ছক। এখানে বরং আমি জুনিয়র অধ্যাপক রূপে সানন্দে কাজ 
করিব।” বলা! বাহুল্য, এই ব্যাপারে প্রফুল্লচন্দ্রকে অবশ্য জুনিয়র গ্রেডে 
অবনমিত হইতে হয় নাই। 

প্রফুল্নচন্দ্রে সাহিত্যিক কঝৌঁক কোনদিনই তাহাকে ত্যাগ 
করে নাই। কৈশোরে আঁপনা হইতেই এই ঝৌক তাহার ভিতর 
গড়িয়া উঠিয়াছিল। . তাহার টেষ্ট টিউব নিয়ন্ত্রণে নুদক্ষ হস্ত লেখনী 


৫৬ মর্নাষী গ্রভুষ্চ্ 


এ শপ সপাস্পিপপাসিপা এ অপ পি সা পসপিপিা পসরা? 4, সপ পা ৮ 


চালনাতেও কম দক্ষ ছিল" ন। বিলাতে অবন্ীন কালে তাহার 
লিখিত ভারত সম্পর্কীয় প্রধন্ধগুলি তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইতিহাস, 
জীবনী ও ভাষান্তর অধ্যয়নের ফলে তীহার মন এঁতিহাসিক গবেষণার 
জন্য প্রস্তুত হইয়াছিল। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক অনুসদ্ধিৎসা তাহাকে 
পাইয়া বসিয়াছিল। রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস তাঁহার অত্যন্ত প্রিয় 
ছিল। তিনি কপস্‌, বার্থেলে! প্রভৃতি বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিকদিগের 
প্রণীত রসায়ন শাস্ত্রের প্রামাণ্য ইতিহাসগুলি মনোযোগের সহিত পাঠ 
করিয়াছিলেন.। আরব, গ্রীন প্রভৃতি দেশের এযালকেমিষ্টদের আবিষ্কার- 
কাহিনী ইহাদের গ্রন্থে তিনি পাঠ করিয়াছিলেন । 
কুয়াসাচ্ছন্ন অতীত দিনের ইতিহাসের ছিন্ন পত্র সংযোজনা করিয়। 
. ভারতের রাসায়নিক এঁতিহোর তথ্যাবিষ্কারের আকাঙ্খা তাহার বদেশ- 
প্রেম মুগ্ধ চিত্তকে সম্পূর্ণভাবে পাইয়! বসিয়াছিল ৷ পর্ব্বতোদগমনের 
ম্যায় এই কার্ধ্য অত্যন্ত ছুরহ ছিল | যুক্তিবাদী নিরপেক্ষ মননশীলতা, 
সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ অধিকার, এবং রসায়ন শাস্ত্রে প্রগাঢ পাণ্ডিত্য 
ব্যতীত এই কার্ষ্য সম্পাদন করা একরূপ অসম্ভব ছিল। এই কার্ধ্য 
আুসম্পন্ন করিতে দীর্ঘকালব্যাপী ধারাবাহিক পরিশ্রমেরও একান্ত 
প্রয়োজন, ছিল। প্ররফুল্লচন্দ্ের জীবনে প্রথম তিনটি গুণের সমাবেশ 
থাকিলেও, তাহার রোগজীর্ণ দেহের পক্ষে আয়াসসাধ্য কার্য্যভার গ্রহণ 
করা, সাধারণ বুদ্ধিতে, আদৌ সম্ভব বলিয়! মনে হয় না। আমার্দিগকে 
মনে রাখিতে হইবে-_অধ্যাপন! ও গবেষণায় তাহার অধিকাংশ সময় 
অতিবাহিত হইত এবং অনিদ্রা ও অজীর্ণ রোগ বশতঃ সন্ধ্যার পর তিনি 
কোনরূপ মানসিক- পরিশ্রীম করিতে পারিতেম ন1। 
অপ্রত্যাশিত দিক হইতে প্রেরণা আসিয়া তাহার মনকে ' কারর্না্দী- 





মনীষা প্রনুল্নচন্্র ৫৭ 
পনায় চঞ্চল করিয়া তুলিল। ফ্রান্সের তৎকালীনু শ্রেষ্ঠু রাসায়নিকু একটু, 
প্রসিদ্ধ ইতিহাসকার 'বার্ঘেলো" অতীত ভারতের, রসায়নচর্চ। সম্পর্কে 
কৌতৃহল প্রকাশ করিয়া তাহাকে একখানি পত্র লিখেন। তত্যতীত 
00119] 06 98%8/768 নামক সাময়িক পত্রের একটি প্রবন্ধে বার্থেলে। 
38%8110 বা মনীষী বলিয়া প্রফুল্লচন্দ্রের নাম উল্লেখ করেন। সুদীর্ঘ 
পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়! রাসায়নিক তথ্যাবিষ্কার এবং অসংখ্য মৌলিক 
রচনা দ্বারা ষিনি বিশ্বের জ্ঞানভাগ্ডার নব নব সম্পদে পূর্ণ করিয়াছিলেন, 
সেই বৃদ্ধ রসায়নবিদের নিকট এই জাতীয় সম্মান লাভ একজন 
নবীন এবং তাহার তুলনায় অখ্যাতনাম! অধ্যাপকের চিত্তকে কিরূপ 
উল্লসিত করিয়াছিল, তাহা! সহজেই অনুমেয় । এই সম্পর্কে প্রফুল্লচন্্র 
বলিয়াছেন-_“আমার মনে ধারণ! হইল যে, কোন উচ্চতর স্থষ্টি কার্্যের 
জন্ত আমার জীবন বিধাতা কর্তৃক নির্দিষ্ট হইয়াছে ।” প্রফুল্লচন্্র কার্য্যের 
গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করিয়াও বিপুল আগ্রহে রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস 
রচনায় আত্মনিয়োগ করিলেন। 

রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ করিতে তাহাকে 
যথেষ্ট বেগ পাইতে হইয়াছিল। তীহার পুর্র্ষগামী কেহই ইহার জস্ত 
ক্ষেত্র প্রস্তত রাখিয়া! যান নাই। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টার উপর নির্ভর 
করিয়া তাহাকে অগ্রসর হইতে হইয়াছিল। রসায়ন বিষয়ে হস্তলিখিত 
পুঁথি হইতে তাহাকে তথ্য সংগ্রহ করিতে হইয়াছিল। ভারতবর্ষের 
বিভিন্নস্থান ও ইংলগু হইতে এই সকল পুথি সংগ্রহ করিতে হইয়াছিল । 
কোন পুথি তূমিকাশূন্য, কোন খানির উপসংহার ছিন্ন হইয়াছে, কোন 
খানিতে পাঠীস্তর সঙ্নিবিষ্ট হইয়াছে,_-এইরূপ একই বিষয়ের বিভিন্ন পুথি 
মিলাইয় গ্রন্থের পাঠোদ্ধার করিতে হইয়াছে । এই কার্ষ্যে পণ্ডিত নবকাস্ত 


জাপা 





৫৮ মনীষী প্রুষ্লচন্তর 
কবিভূষণ প্রত্যহ ডাহাকে &। ৪1৫ ঘণ্ট। সাহায্য করিতেন। যাহ! হউক, 
এই ভাবে রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হইল। 
ইহাতে প্রাচীন কাল হইতে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্য্যস্ত ভারতে 
রসায়ন আলোচনার ইতিহান লিপিবদ্ধ হইয়াছে । এই গ্রন্থ প্রণয়ন 
দ্বারা তিনি বিপুল যশের অধিকারী হইলেন। ইউরোপ ও আমেরিকার 
বিভিন্ন সংবাদ-পত্রে তাহার পুস্তকের বিস্তৃত সমালোচন! প্রকাশিত 
হইল। স্বয়ং বার্থেলে! “] ০0:08] 09 3%%8169 নামক সাময়িকীতে 
এই গ্রন্থের পনের পৃষ্ঠাব্যাগী সমালোচনা প্রকাশ করিলেন। পরবর্তী 
কালে বনু মনীষী তাহাদিগের রচিত প্রামাণ্য গ্রন্থে হিন্দু রসায়ন শাস্বের 
ইতিহাস হইতে অংশ সকল উদ্ধত করিয়াছেন। 

হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস ১ম খণ্ড প্রণয়ন করিবার সময় নব্য 
রসায়ন শাস্ত্রের অগ্রগতির সহিত তাহার যোগাযোগ কিছু পরিমাণে 
ব্যাহত হইয়াছিল। সেইজন্য তিনি কিছুদিন ইতিহাস প্রণয়ন কার্ষ্যে 
বিরত ছিলেন. এই সময় তিনি একবার ইউরোপ ভ্রমণের সক্কল্প করিলেন। 
বিশেষজ্ঞদিগের দ্বার পরিচালিত গবেষণাগার পরিদর্শন করিয়। 
আধুনিকতম গবেষণা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাই তাহার উদ্দেশ্য ছিল। 
ভারত সরকারও এ বিষয়ে তাহাকে সাহায্য করিলেন। ১৯০৪ 
সালে আগষ্ট মাসে তিনি ইউরোপ যাত্র/ করেন। ইউরোপে তিনি 


ইংলও, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি স্থানের বিখ্যাত গবেষণাগারগুলি 


পরিদর্শন করেন; আধুনিকতম গবেষণার ধারা ও তদানুষঙ্গিক সুক্ষ 
যন্ত্রপাতির সহিত পরিচিত হন এবং এই উপলক্ষে তিনি বিশেষজ্ঞ 
বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতদিগের সংস্পর্শে আসিবার স্থুযোগ লাভ করেন। 
প্রত্যেক স্থানেই স্ুধীমণ্ডলী আন্তরিক সমাদরে তাহাকে আপ্যায়িত 


মনীষী প্ররফুষ্লচন্দ্ ৫৯ 


ভ্পপস্মক্ির সস িক্তি্্প্্্িলস্ কার পো কাজ শষ লি পর ্টিস্ইপসম্িসম শসপ রস সি_পোিস 


করিয়াছিলেন। প্যারি সহরে বৌদ্ধ সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত ভারত- 
বন্ধু দিলভ্য। লেভির সহিত তাহার প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটে, তাহার 
মধ্যস্থতায় প্রফুল্লচন্্র ফরাসী বিজ্ঞানাচা্ধ্য বার্থেলোর সহিতও পরিচিত: 
হইয়াছিলেন। এইভাবে স্বদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনার জন্য 
নবীন প্রেরণা ও উৎকৃষ্টতর অভিজ্ঞতা লইয়া প্রফুল্লচন্দ্র দেশে 
ফিরিয়।৷ আসেন । 

১৯০৮ সাল হইতে প্রফুল্লচন্দ্র পুনরায় রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস 
প্রণয়নে মনঃসংযোগ করিলেন এবং কিছু দিনের মধ্যে হিন্দু রসায়ন 
শীল্সের ইতিহাস ২য় খণ্ড প্রকাশিত হইল । এই সম্পর্কে বিখ্যাত 
দার্শনিক ডাঃ ব্রজেন্দ্র লাল শীল তাহাকে বিশেষভাবে সাহায্য 
করিয়াছিলেন । দীর্থ পনের বৎসর কঠোর পরিশ্রমের পর তাহার 
হিন্দু রসায়নের ইতিহাস সম্পূর্ণ হইল। রসায়ন ক্ষেত্রে তীহাঁর দানের 
কথা বিবেচনা করিয়া ১৯১২ সালে ডারহাম বিশ্ববিগ্ভালয়ের ভাইস 
চ্যান্সেলার প্রফুল্লচন্দ্রকে 7). 36. উপাধিতে ভূষিত করেন। এই 
উপলক্ষে “হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস” সম্পর্কে তিনি সস্তব্য 
করিয়াছিলেন-_কেবল বিজ্ঞানের দিক দিয়া নয়, ভাষা জ্ঞানের দিক 
দিয়াও এই গ্রন্থে তাহার প্রভূত ক্ষমতার পরিচয় প্রকাশ পাইয়াছে; 
এবং গ্রন্থ সম্বন্ধে এই কথা ব্ল! যাইতে পারে যে, ইহার সিদ্ধান্তগুলিতে 
কোন অস্পষ্টতা নাই এবং শেষ কথা বলা হুইয়াছে।; 

এই গ্রন্থ রচনায় প্রফুল্লচন্দ্রকে দীর্ঘকাল ধরিয়া কঠোর পরিশ্রম 
করিতে হইয়াছিল। বিধাতা অপরিমেয় কর্মশক্তি দিয়া তাহাকে 
জগতে পাঠাইয়াছিলেন সত্য, কিন্তু এই বিপুল পরিশ্রমের চাপে তাহার 
: রোগজীর্ণ দেহ যে ভাঙ্গিয়া পড়ে নাই__ইহাই বিশ্ময়ের বিষয়। ইহার 


পির পিাশিপশিপাসিপিসি 





৬০ মনীষী গ্রফুল্পচন্জ 


পা পপি অস্থি 


রহস্থা প্রফৃল্পচন্্র নিজেই বিবৃত করিয়াছেন-_“কাজে যখন আনন্দ পাওয়া 
যাঁয়, তখন তাহাতে স্বাস্থ্যের হানি হয় না। বরং উৎমাহ বন্ধিত হয়।” 
নেপোলিয়।ন সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি একাদিক্রমে কয়েক দিবস 
দিনে ৫1৭ মিনিটের বেশী দিদ্রা-ন্থখ উপভোগ করিতে পান. নাই। 
অথচ তাহার বিশ্রাম বঞ্চিত দ্রেহে গ্লানি অথবা! মনে শিথিলতা 
পরিলক্ষিত হয় নাই। এখানেও, আনন্দ তাহার কর্মের প্রেরক- ছিল। 
জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে ই'হাদের কর্মমধার। নিয়ন্ত্রিত নহে। কার্য্যের 
জম্যই ইহারা জীবন ধারণ করিয়াছিলেন; তাই কার্য্যের আনন্দ 
তীহাদের জীবনীশক্তিকে সমুদ্ধি ও স্থিতিশীলতা দান করিয়াছিল। 

কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির মন্তব্য অনুয়ায়ী প্রফুল্লচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক, 
জীবন ধারাকে চারিটি অংশে ভাগ করা যায় ;:১.। তাহার আবিষ্কার, ' 
২। তাহার রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস প্রণয়ন; ৩। তাহার ভারতীয় 
রাসায়নিক গোষ্ঠী গঠন ও বিজ্ঞান সম্পর্কে জাতির আত্মচেতন৷ ও 
আত্ম-প্রত্যয়ের উন্মেষ সাধন ৪। বেঙ্গল কেমিক্যাল ও ফার্ম্মাসিউটি- 
ক্যাল ওয়ার্কসের প্রতিষ্ঠা । 

প্রথম তিনটি সম্পর্কে তাহার জীবন ধারা আমরা অলোচনা 
করিয়াছি; পরবর্তাঁ অধ্যায়ে আমরা দেখিতে চেষ্টা করিব কেন্‌ সংগঠন 
শক্তি ও ব্যবসায় বুদ্ধির বলে তিনি গোটা কয়েক শিশি বোতল লইয়া 
আরদ্ধ ব্যক্তিগত 'নগণ্য কারবারকে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রাসায়নিক 
কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গড়িয়া তুলিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। 

ব্যবসায়ী প্রফু্চনদ্ 

_ বৈজ্ঞানিক প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন আমরা পর্যালোচনা করিলাম। 
এইবার আমরা! ব্যবসায়ী প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন বুঝিতে চেষ্ট। করির। 





সিটি 





মনীষী, শ্রফুযনচজ ৬১ 


এসসি সস সমস সম সস প্রি সি পোস্ট পর্ব পা লি সস টপস পর শি 


প্রফুল্লচন্দ্রকে অবিশেধিত ভাবে ব্যবসায়ী বলিলে তাহাকে ছোট করিয়া 
দেখা হয়। সাধারণতঃ, ব্যবসায়ীরা আত্মন্থখের জন্য এশ্বর্্য গড়িয়া 
তুলিতে চেষ্ট/'করেন। দরিদ্র নিজের ও পরিজনবর্গের জীবন যাত্রায় 
প্রাচুর্য কামনা করিয়া ব্যবসায়কে বৃত্তিরূপে গ্রহণ করিয়া থাকেন। 
কিন্তু প্রফুল্লচন্দ্রের সুখ সাধারণ মানুষের সুখ হইতে স্বত্ত্ব ছিল। 
তিনি দরিদ্র ছিলেন না,_তিনি যাহ] উপার্জন করিতেন, 'রাঙ্জার 
'হালে' বাস করিলেও তাহাকে কোনদিনও অভাবে পড়িতে হইত না। 
' পরিজন বলিতে তাহার নিকট কেহ ছিল না। ধাহার! ছিলেন, স্টাহার 
খুক্ত হৃদয়ের গ্রীতি প্রবাহ ব্যাপ্তিতে সমস্ত বাজালী জাতিকে আচ্ছন 
করিয়াছিল এবং তাহাতে সেই স্বজন ও পরজন সকলই একাকার 
হইয়। গিয়াছিপ। : 
.. ধপ্রফুল্লচন্দ্র কাহার “আত্মচবিত'-এ. একস্থানে বলিয়াছেন “আমি 
এপিক-টেটাসের শিষ্য এবং ডাইওজিনিসের অনুরাগী ; কৌগীনধারী 
মহাত্মা গান্ধী আমার শ্রদ্ধার পাত্র_-অনাড়ম্বর সরল জীবন এবং 
ফ্টানচর্চাই আমার জীবনের আদর্শ” । এই সংসার-বিরক্ত জ্ঞানতপন্বী-_ 
বন্তর দৈন্ ধাহার অঙ্গের পরিচ্ছদ হইয়াছিল--ঠাহার পক্ষে একটি 
বিরাট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোল! সত্যই বিম্ময়কর ব্যাপার । 
কোন্‌ বিশিষ্ট লক্ষ্য াহার জীবনের কেন্দ্রে থাকিয়া ঠাহাকে এই কার্যে 
প্রেরণা দান করিয়াছিল, তাহাই আমাদের লক্ষ্য করিতে হইবে। 
মহ মন কখনও ক্ষুদ্র চিন্তার দ্বারা চালিত হয় না। প্রফুল্লচন্দ্র 
নিজের লাভের বুদ্ধি দ্বারা চালিত হন নাই। যাহাতেই তিনি হাত 
দিয়াছেন, তাহাই বিরাট মহৎ জাতীয় কল্যাণে পরিসমাপ্ত হইয়াছে__ 
তাহাই জাতির আত্মপ্রত্যয় গড়িয়া তুলিয়াছে__তাহাই জাতির 


৬২ মনীষী প্রফুল্পচন্্র. 


১ স্টি পিই পাটি সপ স্মিত পর পপর সর পরস্পর পাপসিশতিস্পিপাস্িণী সলিল পাসাছি লী সালা পাঁছি পরী রস পপি 





পদ পা পাকি পাত সম 


স্থবৃহৎ সম্ভাবনাকে তাহার চোখের সম্মুখে প্রোজলভাবে কলিয়া 
ধরিয়াছে। 

নিশ্চি স্পা গণনা ও শান্ত অবসর জাতির জীবনে সংস্কৃতি 
গড়িসা নে! বাঙ্গালীর জীবনে এই ছুইটির অসপ্ভাব কোনদিনই 
ছিল না। ফলে, বাঙ্গালী এমন এক শিক্ষার ও সংস্কৃতির বিচিত্র 
পরার এডস। উদিত যা্ঠা সারা ভারতেৰ ঈর্ধার কারণ 
হইয়াছিল। কিন্ত ছাঁদ্দন ঘনাহ্য়। আ।সিতেছিণ বাঙ্।”] ভাহা 
বুঝিতে পাঁরে নাই। বন্দরে নোঙ্গরকরা জাহাজের ন্যায় আপনাকে 
নিরাপদ ভাবিয়া বাঙ্গালী ঘুমাইয়। ঘুমাইয়া পথ চলিতেছিল। চরম 
দুর্দশ] পচনশীল ক্ষতের মত তাহার অর্থনৈতিক জীবনকে তলদেশ 
হইতে খাইয়৷ চলিয়াছে__তাহা! সে কোন দিনই উপলব্ধি করিতে 
চাহে নাই। সর্বগ্রাসী অন্নের বুভুক্ষার মুখে বাঙ্গালীর 
সমস্ত গৌরবের বস্ত যে কবলিত হইতে যাইতেছে, বাঙ্গালী যে ক্ষয়শীল: 
জাতি হইতে চলিয়াছে,_ভবিস্বাতরষ্টার দিব্য দৃষ্টিতে প্রফুল্লচন্দ্র বুঝি 
' তাহার বীভৎস করুণ দৃশ্য দেখিতে পাইয়াছিলেন। সেই ভবিষ্যৎ চরম 
দুর্দিনে সম্পর্কে তিনি বংসরের পর বৎসর রচন! ও বস্তুত দ্বার! 
বাঙ্গ'লীকে সাবধান করিয়া! আদিয়াছেন। 

সেই ছুদ্দিন প্রতিরোধকল্পে বাঙ্গালীর কলেজী শিক্ষায় মোহগ্রস্ত 
মনকে ব্যবসায়মুখী করিবার জন্য তিনি মৃত্যুকাল পর্ধ্যস্ত চেষ্টা করিয়! 
গিয়াছেন। তিনি দেখিয়াছিলেন প্রত্যেক প্রগতিশীল জাতির জীবনে 
' শিল্প ও ব্যবসায় অসামান্য প্রভাব বিস্তার করে। শির ও 
বাণিজ্য জাতির এই্বর্ধ্য বৃদ্ধি করে, বন্ধিত এশ্বর্ধ্য জাতির জীবন-যাত্রার 
মান উন্নত করিয়া তুলে, আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য ব্যবহারিক প্রয়োগ- 


মনীষী প্রফুল্পচন্ত্র ৬৩ 


আপ শশাপপাটি তি ৯ ৩ পািপাীপিসপীপাসপিপাসপপাসপাতপীশাস্সশাসপিপী পিস্পাসিশি সপ পানি শিলাসপিপস্পাস্পা পিসী শি 


কুশলতা দ্বারা রূপাঁয়িত হইয়! মানুষের অশেষ কল্যাণ ও সুখস্বাচ্ছন্দ্য 
বিধান করে। তিনি সভয়ে দেখিতেছিলেন-_-বৎসরের পর বৎসর বিশ্ব 
বিচ্ভালয় হইতে সহস্র সহস্র গ্রাজুয়েট বাহির হইতেছে । তাহাদের শত- 
করা দশ্লনও কোন আত £ চাকুরি পাইতেছে না । এই ভাবে শিক্ষিত 
বেকারের সংখ্যা দিন দিনই বাড়িয়া চলিতেছে । জীবন যাত্রা সম্পর্কে 
আত্মনির্ভরশীল না হওয়ায় এন সংসার সম্পর্কে অভডি৬৬!ন অঙ্বে 
ইহা নম) 1৩৮০০।০। ত৭ জিনানা হলনা উকি হাহিক দেব ১%হ্য। 
নিশ্চে্ট বসিয়া! থাকিতেছে। এইভাবে বাঙ্গা ৰা রি দুর ও গন্ধ 
হইয়া পড়িতেছে। অপর দিকে বাঙ্গালীর আরাম প্রিয়তা ও অবহেলার 
সুযোগে বাংলার ব্যবসায়-কেন্দ্রগুলি মাড়োয়ারী, গুজরাটি, বাণ্মিজ 
প্রভৃতি উৎসাহী ও পরিশ্রমী জাতিগুলি অধিকার করিয়া! বসিতেছে: 
এবং বাঙ্গালী তাহার নিজস্ব শিল্পগুলি হইতে চীনা, হিন্বৃস্থানী কারিগর- 
দিগের দ্বারা বিতাড়িত হইতেছে। এইভাবে বাংলা হইতে বৎসরে 
কোটি কোটি টাকা বাংলার বাহিরে চলিয়া যাইতেছে । অথচ বাঙ্গালী 
ক্ষীয়মান সম্পদ পরিপূরণের কোনই ব্যবস্থা করিতে পারিতেছে না। 
সে মনিবের “হাত তোলা” নির্দিষ্ট অন্নমু্টি পাইবার জন্য দ্বার হইতে 
দবারাস্তুরে ঘুরিয়া বেড়ীয়। 

অর্থনৈতিক ছ্রদৃষ্টের অনিবার্য ফলস্বরূপ বাঙ্গালীর প্রতিভায় 
ঘুণ ধরিয়াছে। বাঙ্গালীর 'অগ্যতনের চিন্তা! ভারতের পরাহের উপজীব্য" 
আর হইতেছে না। রাষ্্রীক ও সামাজিক অগ্রগামী প্রতিষ্ঠানগুলি 
নিঃস্ব বাংলার বুক হইতে প্রদেশাস্তরে চলিয়া যাইতেছে । অর্বব 
ভারতীয় ব্যাপারে বাঙালীর প্রভাব দিন দিনই ক্ষুণ্ন হইয়া পড়িতেছে। 

প্রফুল্লচন্্র তীক্ষ দূরদৃষ্টির দ্বারা উপলব্ধি করিয়াছিলেন__বাঙ্গালীকে 








৬৪ মনীষী স্প্রফাপচজ্জ 


পাশা পাশপাশি ০০ 


বীচিতে -হইলে, তাহার বিশিষ্ট গৌরবে তাহাকে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকিতে 
হইলে, শিল্প প্রতিষ্ঠান সংগঠন ও ব্যবসায় বাণিজ্য দ্বারা তাঁহার জাতীয় 
সম্পদের শশ্রীবৃদ্ধি সাধন করিতে হইবে। তাই পথদ্রষ্টা ও পথ 
প্রদর্শক রূপে তিনি ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। এইভাবে 
শুদ্ধ জাতির কল্যাণ-চিন্ত! দ্বারা! চালিত হইয়। ব্যবসায়ী হওয়া-_ 
জগতের ইতিহাসে প্রফুল্লচন্্র বোধ হয় ইহার একক দৃষ্টান্ত স্থল। 
ধনিকের 'অছিব্যবস্থা ও অভিভাবকত্বের আদর্শ পরিকল্পনায় গ্রফুল্নচন্দ্ের 
জীবনই কি নেপথ্যে থাকিয়া গান্ধীজীর উপর প্রভাঁব বিস্তার 
করিয়াছিল? 

 প্রফুল্লচন্দ্ের ব্যবসায়ী জীবনকে ছুই দ্রিক দিয়া আামাদের বিচার 
করিতে হইবে-_ব্যবসাঁয় সম্পর্কে তাহার মননশীলতা, এবং ব্যবহারিক 
ক্ষেত্রে তাহার প্রয়োগ । চিন্তাশীল গ্রফুল্লচন্র এবং কন্মা ও সংগঠক 
প্রফুল্নচন্দ্রকে তাহার ব্যবসায় জীবনে আমরা একাধারে দেখিতে পাই। 
উহার মননশীলতা ও পরিকল্পনার ব্যাপকতা যেমন তাহার ব্যবসায়ের 
শ্রীবৃদ্ধি সাধনে সহায়ক হইয়াছিল, তেমনি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, 
অনুবিধার আঘাত-লব্ধ 'অভিজ্ঞতা, তথ্যপূর্ণ যুক্তি ও বিচার দ্বারা 
পরিকল্পিত তাহার প্রত্যেক ব্যবসায়-পরিকল্পনাকে বাস্তব ক্ষেত্রে 
প্রয়োগের উপযোগী রূপ দান করিয়াছিল। স্ুুবিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের 
স্টায় বাংলার সুবিস্তৃত অঞ্চলে যেখানে যতটুকু লাভজনক ব্যবসায়ের 
সম্ভাবনা বিষ্যমান,_-তাহা তিনি আবিষ্কীর করিয়াছেন এবং অভিজ্ঞ 
ব্যবসায়ীর মত উৎপন্নের পরিমাণ, সন্তাব্য ব্যয় ও লাভের পরিমাণ 
মিলাইয়া এক একটি মুব্যবস্থিত ব্যবসায়ের পরিকল্পনা গড়িয়া তুলিয়া 
ছিলেন। বাঙ্গালী যুবকের চিত্ত সেই দিকে আকৃষ্ট করিতে তীহার 





মনীবী পররুচজ ৬৫ 


বাশি পলিপ লি সি সি সিল সি পো পিতা পাস্তা পা তাসমিমা পতি লা্পিশী পি পাটি পাস পিসি পলি ই 


চেষ্টার অবধি ছিল না। রংপুরের তামাক এবং বরিশালের সুপ রী 
ব্যবসায়ে- অবাঙ্গালীরা কি প্রস্তুত অর্থ উপাজ্জন করে, তাহা তিনি 
দেখাইয়াছেন। এখানকার উর তাহাদের অধীনে কেরাণীগিরি 
করিয়া গ্রাসাচ্ছাদন করিবে, তবুও নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসায় গড়িয়া 
তুলিবার ভরসা কোন দিনই তাহাদের উৎসাহিত করে না। 

বিশ্ববিখ্যাত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদিগের জীবন-চরিত তিনি অধায়ন 
করিয়াছিলেন। যে অসাধারণ আত্মনিঞরশীলতা, উদ্যম, অধ্যবসায়, 
পরিশ্রম ও বিলাস-বিমুখতা৷ বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তাহাদের পৌঁছিয়া 
দিয়াছিল, তাহা এদেশের যুবকদের চরিত্রের বিশেষত্ব হউক ইহাই 
তিনি একান্তভাবে কামনা করিয়া গিয়াছেন । শুধু যে মুখেন, 
কথায় তিনি বাঙ্গালীকে উদ্ধদ্ধ করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহাই 
নহে । কার্য্যের দৃষ্টান্ত দ্বা। তিনি তাহাদের প্রত্যয়-শূন্ত অবশ 
মনকে আত্মবিশ্বাসী এবং ব্যবসায় সম্পর্কে উদ্যোগী করিয়া তুলিতে 
চাহিয়াছিলেন | পরবর্তী কালে অন্যান্য বু ব্যবসায়ের সহিত সং্রিষ্ট 
থাকিলেও, প্রধানতঃ তিনি তাহার জ্ঞান, শিক্ষা ও সাধনার অনুকূল, 
একটি শিল্পকে ব্যবসায়রূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন | তাঁহার ক্ষুত্রাকাবে 
আরব্ধ এই শিল্পই পরে 73608] 01790198] & 77180900108] 
ভব ০ নামক বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠানে রূপায়িত হইয়া উঠে। 

প্রফুল্লচন্দ্র তাহার “আত্মচরিতে' বলিয়াছেন--বাংলার সর্বত্র 
প্রকৃতির যে অজত্র দান ছড়াইয়। আছে, তাহাকে কিরূপে শিল্পের 
উপাদান রূপে ব্যবহার করা যায়? মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অনাহার- 
ক্রিষ্ট যুবকদের মুখে অন্ন যোগাইবার ব্যবস্থা করা যায় কিরূপে ? 
বন্তুত; এই উভয় চিন্তাই তাহাকে বিচলিত ভ্রজজিদছিল। এই উভক 


৫ 


উঃ মনীষী প্রসু্নচন্ 


সস্পস্পসপপর্সা পপ সপানা করপ ০ শা বপপ্পপানপ সাপাসাসপসাপালাশাপ। 


চিন্তাদ্ধারা পরিচালিত হইয়া তিনি বিভিন্ন বস্ত লইয়! রাসায়নিক 
পদার্থ প্রস্তুত করিতে লাগিলেন। এই সময় প্রফুল্লচন্ত্র তাহার 
স্বগ্রামবাসী যাঁদবচন্দ্র মিত্র নামক এক ভদ্রলোকের নিকট হইতে 
একটি সাঁলফিউরিক এসিডের কারখানা এক হাজার টাকায় ক্রয় 
করেন। পরে উহা লাভজনক না হওয়ায় কারখানা! সংশ্লিষ্ট 
সীসার পাত চারিশত টাকায় বিক্রয় করিয়া! ফেলেন। যাহা হউক, 
অবশেষে তিনি একটি ওষধের কারখানা খুলিবার মনস্থ করেন এবং 
3670081 011670108] : 00 [211817779,06061091 ঘা 010 নামে উহার 
নামকরণ করেন। 

প্রত্যেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ছুইটি বিভাগ আছে-_একটি উৎপাদন 
বিভাগ এবং অপরটি বিক্রয় বিভাগ । নূতন কারখানায় প্রস্তুত পদার্থ 
বাজারে প্রচলিত সমজাতীয় পদার্থের সমকক্ষ অথবা! তাহা হইতে 
উত্কৃষ্টতর না হইলে বাজারে চলে না। ক্ুতরাং কোন পদার্থ প্রপ্তত 
সম্পর্কে বিশেষ সাবধানতা প্রয়োজন । বাজারে চালু মাল স্থানচ্যুত 
করিয়া নিজের কারখানায় প্রস্বত মালকে সেখানে গ্রতিষ্টিত করা-_ 
শিল্পের ব্যবসায় দিক সম্পর্কে ইহাই বড় কথা । এই উভয়দিক হইতেই 
পরফুল্চ্দ্রে স্ুবিপুল বাধা বিদ্বের সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। দেশে 
তথকালে বিশেষ কৌন শির প্রতিষ্ঠান ছিল না। স্ৃতরাং পর্ব্বের 
অভিজ্ঞতা হইতে তিনি কোনও সাহাষ্য পান নাই। “বিলাতী" নামধেয় 
সকল জিনিসের সর্বববিষয়ে স্ুনিশ্চিশ 'উতকর্ষ এবং স্বদেশীয় তাবৎ ' 
পদার্থেরই অপকর্ষ_-আপনাঁকে ছোট করিয়া দেখার এই দীন মনোবৃত্তি 
জনসাধারণের চিত্তকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছিল। তাছাড়া এদেশে 
বিলাতী ও্যধের'*ধাঁখ্ণায় ধহাদের দ্বার! পরিচালিত হইত, তাহাদের - 





মনীষী প্রফুল্লচন্্র ৬৭ 


অধিকাংশই পশ্চিমা মুসলমান। দেশীয় শিল্পকে পোষণ করিবার মত 
স্বদেশ-গরীতি তাহাদের ছিল না। তৃতীয়তঃ অল্প পুঁজি লইয়া 
প্রফুল্নচন্দ্রকে কার্ধ্য আরস্ত করিতে হইয়াছিল । 

কিম্ু কোনও বাধাই প্রফুল্লচন্দ্রকে নিরুগ্ধম বা ভগ্নোৎসাহ করিতে 
পারে নাই। তিনি পুর্ণোগ্ধমে কাজ আরম্ত করিলেন। বাজার হইতে 
শিশি বোতল কিনিয়া, ওষধ ভর্তি করিয়া, লেবেল আটিয়া তিনি 
ওধধগুলি বিক্রয়ার্থ দালাল দ্বারা বাজারে পাঠাইতে লাগিলেন । এদেশে 
প্রস্তুত বিলাতী ওধধ !-_ব্যবসায়ীদের নিকট ইহা একটি অভূতপূর্বব 
ব্যাপার.বলিয়া মনে হইল । মাল বাজারে বিশেষ ধরিল না। এই 
সময় তাহার এক পৃরাতন সতীর্থ আসিয়া তাহার সহিত এই কার্যে 
যোগদান করেন। ইহার নাম ডাঃ অমূল্যচরণ বন্থু। ইনি কলিকাঁতার 
একজন প্রসিদ্ধ চিকিৎসা ব্যবসায়ী ছিলেন। ইহার সাহায্য তাহাদের 
কারখানায় প্রস্থত ওষধ কাটতির পক্ষে বিশেষ কার্য্যকরী হইয়াছিল । 
তিনি সমসাময়িক চিকিংসকদিগের নিকট এই কারখানায় প্রস্তত 
গুধধের অনুকূলে প্রচার করিতে লাগিলেন। তীহার প্ররোচনায় 
অনেকে তাঁহাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই সকল ওঁষধের বিশেষ ব্যবস্থা 
দিতে লাগিলেন। ক্রুমে তৎকালীন বিখ্যাত ওষধ ব্যবসায়ী বটকৃষ্ট পাল 
এবং অগ্যান্ত অনেকে তাহাদের খরিদ্দীর হইলেন। 

্রফুললচন্ত্র ডাঃ অমূল্যচরণ বন্থুর প্রস্তাব ক্রমে দেশীয় ভেষজ হইতে 
তরল সার প্রস্তুত করিতে আরম্ভ করিলেন। দেশীয় ভেষজের রোগ 
প্রতিরোধক শক্তি সম্পর্কে তৎকালীন চিকিৎসকেরা বিশেষ আস্থাবান 
প্রাকিলেও এলোপ্যাথি চিকিৎসায় তাহার কোন প্রচলন ছিল না। 
তখন হইতে ডাক্তারের এই সকল ওুধধের ব্যবস্থা দিতে লাগিলেন 


এবং তাহার ফলও বিশেষ সন্তোষজনক হইল । এ সময় এ দেশীয় 
ডাক্তারদিগের চেষ্টায় এদেশের ভেষজজাত অনেক গুঁধধ বিলাতী 
বধের তালিকায় (3116191) [)9000900790918) স্থানলাভ করিয়াছিল । 
অশ্বগন্ধা, বাসক, কালমেঘ, কুরচি প্রভৃতি বন্ছু দেশীয় ভ্ষেজের তরল 
সারে আজ বাজার ছাইয় গিয়াছে। আীর্ধ্য প্রফুল্লচন্দ্রই ইহাদের 
আদি প্রবর্তক ছিলেন। 

এই কারখানাটিকে লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠান রূপে গড়িয়া 
তুলিবার জন্ত প্রফুল্লচন্দ্রকে অপরিসীম পরিশ্রম করিতে হইয়াছিল। 
এখানেও আনন্দ তাহাকে কর্ম্শত্তি যোগাইয়াছে-_আনন্নই তীহার 
রোগজীর্ণ দেহকে এই নুপ্রচুর কাজের মধ্যেও অবসাদশুম্ ও সুস্থ 
রাখিয়াছিল। কলেজ লেবরেটরী হইতে ফান্মেসীর লেবরেটরীতে 
যাওয়া তীহার পক্ষে বিশ্রামের মতই ছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ নৃতন 
কাজে প্রবৃত্ত হইতেন এবং অপরাহ্ন ৪॥ টা হইতে সন্ধ্যা ৭টা পর্য্যন্ত 
খাটিয়া কাজ শেষ করিতেন। কাজের সঙ্গে আনন্দ থাকিলে তাহাতে 
স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় না। 

কিছু কালের জন্য প্রফুল্লচন্দ্র একজন উপযুক্ত সহকারী পাইয়া- 
ছিলেন । তিনি ডাঃ অমূল্যচরণ বনু তগ্্রীপতি। ইহার নাম সতীশ 
চন্দ্র সিংহ। সতীশ চন্দ্র রসায়ন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করিয়াছিলেন । 
দেড় বৎসর যাবৎ তিনি পূর্ণোগ্যমে প্রফুল্লচন্দ্রকে কারখানা সংশ্লিষ্ট সমস্ত 
ব্যাপারে সাহায্য করিয়াছিলেন। ' একদিন রসায়নাগারে পরীক্ষা কার্ষ্যে 
নিষুক্ত থাকা কালে দৈবাৎ হায়ফ্বৌসায়ানিক বিষে তীহীর মৃত্যু হয়। 
ফলে, কারখানা সম্পকাঁয় সমস্ত দায়িত্ব প্রফুল্লচন্রের নিজের স্কন্ধে 
আসিল। কিন্তু তিনি ইহাতে বিন্দুমাত্র অবসন্ন হইলেন না। . তিনি 


মনীষী প্রফুল্লচন্ ৬৯ 


এপি পিপাসা পাস পাস পপ স্পা স্পস্ট পাপে শিপ 


পূর্ণোছমে কাজ করিয়! যাইতে লাগিলেন। এই সময় কোন কোন দিন 
তাহাকে একাদিক্রমে ১০১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করিতে হইত। কিন্তু বড় 
বড় অর্ডার এবং কারখানার সম্ভাবিত বিস্তৃতির স্বপ্র তাহার কর্মে 
উৎসাহ দিন দিনই বাঁড়াইয়া দিতেছিল। তাই কঠোর পরিশ্রম 
করিয়াও কোন দিন তাহার স্বাস্থ্যহানি ঘটে নাই। ইহার কিছুকাল 
পরে তাহার সতীর্থ এই কারখানার অন্যতম উদ্যোগী পুরুষ ডাঃ অমূল্য 
চরণ বন্ধু প্লেগ রোগে মার! যান। ইহাতে প্রফুল্লচন্দ্র অবর্ণনীয় শোক 
পাইয়াছিলেন। কিন্ত তিনি দমিবার পাত্র ছিলেন না। আরব্ধ কার্য্য 
সফলতার পথে লইয়া যাইবার দৃঢ় সংকল্প ও অধ্যবসায় তাহার মনকে 
কোনও বিপং-পাতেই ঘ্রিয়মান হইতে দেয় নাই। তিনি একাই এই 
কারখানার কর্ণধার রূপে ইহাকে বিরাট পরিণতির দিকে চালাইয়া 
লইতে লাগিলেন। এইভাবে হার চেষ্টা, যত্ব ও অধ্যবসায়ের ফলে 
কয়েকটি শিশি বোতল লইয়া কলিকাতার একটি ছোট ঘরে আরব 
একটি ক্ষুদ্র কারখানা বর্তমানে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রাসায়নিক 
কারখানায় রূপান্তরিত হইয়াছে। তীহার কার্ধ্যারস্তের পাঁচ বংসরের 
মধ্যে উহা একটি লিমিটেড. কোম্পানীতে পরিণত হয় । কলিকাতার 
৩ মাইল দূরে ১৬ একর জমির উপর ইহার প্রথম কারখানা নির্টিত 
হয়। পরে পাণ্ি ৫০ একর জমির উপর আর একটি শাখা 
কারখানা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । এই কোম্পানীতে বর্তমানে ২০০০ 
শ্রমিক কার্ধ্য করে এবং ইহার মোট সম্পত্তির মূল্য বর্তমানে অর্ধকোটি 
টাকার উপর। 

7397089] 017610109] 8100. 70091009,0606108] ভা 0০ প্রধানতঃ 
তীহার কর্মক্ষেত্র হইলেও অন্যান্য বনু ব্যবসায়ের সহিত তিনি সং্লিষ্ট : 


ণও মনীষী প্রফুল্লচন্দ্র 


লী পণ” লী লা পাপী 


এতিহা গড়িয়া তুলিতে তিনি তাহার অর্থ, সামধ্য ও চিন্তাশক্তি 
অকাতরে বিতরণ করিয়াছেন। বাঙ্গালীর ব্যবসায়-বিস্তার তাহার 
অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবনের একমাত্র উদ্ধারের উপায়-_এই সত্য 
উপলব্ধি করিয়া! অনেক ধনী পুষ্ঠপোষক ব্যবসায় ও শিল্প গড়িয়! তুলিতে 
প্রভৃত অর্থনিয়োগ করিয়াছেন। কিন্তু ইহা অনেক ক্ষেত্রে তাহাদের 
বদান্যতারূপ উচ্চতর মনোবৃত্তির বিলাসেরই পরিচায়ক-_যথার্থ 
ব্যবসায় বুদ্ধির পরিচায়ক নহে। অনেক সময় প্রাথমিক বাধা 
বিপত্তি কাটাইয়া উঠিতে পুঁজির মোটা অংশ নিঃশেষ হইয়া যায়। 
ফলে ব্যবসায়ের "প্রধান উদ্যোক্তাকে অসাধুতার ছূর্নাম ভোগ করিতে 
হয় এবং পৃষ্ঠপোষকের উন্মুক্ত হস্ত সন্কুচিত হইয়া পড়ে। ব্যবসায়ের 
সাময়িক দুরবস্থা সম্পর্কে তথ্যের অনুসন্ধান লইয়! ব্যবসায়টিকে 
সঞ্জীবিত রাখা বা তাহার শ্রীবৃদ্ধি সাধন করার কোনরূপ আগ্রহ আর 
তীহার মধ্যে দেখা যায় না । কিন্তু প্রফুল্লচন্ত্র সর্বক্ষেত্রে খাঁটি ব্যবসায়ী 
মনোবৃত্তি দ্বারা চাল্সিত হইতেন। ব্যবসায়ের অবনতির সহিত 
অসাধুতার নিত্য সন্বন্ধ-_-একথা তিনি মানিতেন না। হয়তো কোন 
কোন ক্ষেত্রে তাহার বিশ্বাসের অসদ্যবহার হইয়াছে; কিন্তু ব্যাপক 
ভাবে' দেখিতে গেলে ব্যবসায়ের এতিহ্য গড়িতে হইলে অভিজ্ঞতা 
সঞ্চয়ের প্রথম মুখে এরূপ আধিক ক্ষতি অনিবাধ্য-_-একথা তিনি 
বিশ্বাস করিতেন । তীহার “আত্মচরিত”-এ ছু'একটি ব্যবসায় 
প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করিয়া তিনি দেখাইয়াছেন-_অসাধুতা 
ছাড়া লোকসানের অন্য সঙ্গত কারণ থাকিতে পারে। ইহাদের মধ্যে 
“বেঙ্গল পটারিস্”-এর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য. প্রাথমিক বাধাবিস্ব 


মনীষী গ্রসুল্নচন্ত্র ৭১ 


পা ৬ লিউ টি 


অপসারণ ক্রিতে পুঁজির একটি বৃহৎ অংশ বসিয়! গেল, এবং কারবা 
যখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান রূপে গড়িয়া উঠিল, তখন দেশবাসী 
কারবারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিরাশ হইয়া লোৌকসানী কারবারে ঘরের 
টাকা বাহির করিয়া দিতে বিমুখ হইয়া পড়িল । এইভাবে বনু 
ব্যবসায় তাহার লাভের মুখে অবাঙ্গালীর হস্তগত হুইয়৷ পড়িতেছে ; 
আর বাঙ্গালী সেই ব্যবসায়কে গড়িয়া তুলিবার জন্য অপরিসীম যত, 
চেষ্টা! ও প্রভূত অর্থব্যয় করিয়া ব্যর্থতার বেদনা লইয়া, আত্মবিশ্বাস 
হারাইয়া, শুষ্ষ মুখে ও রিক্ত হস্তে ব্যবসায়ের ক্ষেত্র হইতে হটিয় 
আসিতে বাধ্য হইতেছে। 

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার মোহগ্রস্ত বাঙ্গালী যুবকদের বেকার 
সমস্তার কথা চিন্তা করিয়। তিনি এতদূর বিচলিত হইয়াছিলেন যে, 
অবাঙ্গালীর দ্বার বাংলার শোষণের প্রকৃতি ও পরিমাণ সম্পর্কে তিনি 
বিস্তুত ভাবে আলোচন! করিয়াছেন এবং শত বংসর পূর্বের 
বাঙ্গালীর ব্যবসায় ও জাতীয় শিল্প কেমন করিয়া! ধীরে ধীরে 
শ্রমবিমুখ বাঙ্গালীর হস্তচ্যুত হইতেছে, কেমন করিয়। সে ক্রমে ক্রমে 
তাহার জীবিকা হইতে বিচ্যুত হইতেছে, বাংলার শত বৎসরের 
ব্যবসায়ের ইতিহাস আলোচনা করিয়া তিনি বাঙ্গালীকে তাহা চোখে 
আহ্গুল দিয়া বুঝাইতে চাহিয়াছেন। যে কোন যুবক €করাণীবৃত্তি বা 
ওকালতি প্রভৃতি তাহার চিরাত্যন্ত জীবিকার পথ ত্যাগ করিয়া 
ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করিয়াছে, তাহাকে তিনি সর্ববাস্তঃকরণে 
আশীর্বাদ করিয়াছেন এবং প্রয়োজনামুসারে অর্থ বা পরামর্শ 
দ্বারা তাহাকে সাহায্য করিয়াছেন। বেঙ্গল পটারিজ, বেঙ্গল মিস্লেনি, 
বেঙ্গল ট্যানারি, খাদি প্রতিষ্ঠান, প্রফুল্লচন্্র কটন মিলস, আধ্যস্থান 





৭ মনীষা প্রফুল্ল চন্ত্র 
পাপন শর্ট জপ ৯ পা পোস্টে পাতি ৩৭ চি পচ পা পা সমল মপস্টি পি পিপি পোসটিপিমপসপিিশীসিতি সি ৮ 


ইনসিওরেন্স কোং, বঙগপ্রীী কটন মিল্স-__এরূপ বহু প্রতিষান ভীহার 
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়িয়া উঠিয়াছে। কত বাঙ্গালী যুবক 
তাহার চিন্তাধারায় পরিচালিত, এবং তাঁহার উপদেশে অনুপ্রাণিত 
হইয়া ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ. করিয়াছিলেন, তাহার ইয়ত্ত। নাই। 

বর্তমান যুগের প্রয়োজন প্রফুল্লচক্দ্রে মধ্যে যেন পরিপূর্ণ রূপ লাভ 
করিয়াছিল। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী আজ সভয়ে দেখিতেছে--ভূমি হইতে 
দে বিচ্ছিন্ন, তাহার পুকষান্ুক্রমিক বৃত্তি__গাতিদারী, তালুকদারী 
প্রস্তুতির ভিত্তি যুগধর্্ম প্রভাবে শিথিল হইয়! পড়িয়াছে। ওকালতি, 
ডাক্তারী প্রভৃতি পেশ! জনবহুল হইয়া উঠিতেছে এবং চ1করির ক্ষেত্রে 
অবাঙ্গালীর প্রতিদ্বন্দ্িতা দিনদিনই বাঁড়িয়৷ চলিয়াছে। আর তাহার 
অন্তরের সমস্ত মাধুর্য, দরদ ও ভাঁবশীলতা৷ দিয়া বহু যুগ ধরিয়া গড়িয়া! 
তোলা সংস্কৃতির মনোহর সৌধ ধুলায় ধ্বসিয়৷ পড়িতেছে। তাহার 
ক্ষীয়মান জীবনী শক্তি তাহাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলিয়৷ লইয়া চলিয়াছে। 
এই ধ্বংস হইতে অব্যাহতি লাভের উপায় কি ? প্রফুল্লচন্দ্রই অক্লান্ততাবে 
তাহ! বাঙ্গালীকে গুনাইয়! গিয়াছেন। নিজের কর্মজীবন দিয়া বাঙ্গালীর 
মনে আদর্শের প্রেরণা জাগাইতে চাহিয়াছেন এবং বাঙ্গালীর বিলাসী, 
বিভ্রান্ত, . পৌরুষহীন, জীবনভঙ্গীকে উৎসাহে, অধ্যবসায়ে এবং উন্তাবনী 
শক্তিতে বলিষ্ঠ করিয়! তুলিতে চাহিয়াছেন। 

বৈজ্ঞানিক প্রফুল্লচন্দ্র সারা বিশ্বের, জনসেবক ' প্রফুন্চন্র সমস্ত 
মানুষের, ( কারগ, সেবাধর্শের পশ্চাতে রহিয়াছে একটা চিরম্তন, 
সার্বজনীন, দেশ কাল দ্বারা অপরিচ্ছিন্ন আদর্শের প্রেরণা ); কিন্ত 
ব্যবসায়ী প্রফুন্লচন্দ্র কেবল বাঙ্গালীরই । বাঙ্গালী বৈজ্ঞানিক প্রফুষটচস্্রকে 
বুঝিতে পাঁরে, জনসেবক প্রফুল্লচন্দ্রকে শ্রদ্ধ। করে,'কিন্তয আরাম প্রিয়তার 


মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র ৭ 


অনুকূল বৃত্যন্বেষী শ্রমবিমুখ বাঙ্গালী “ব্যবসায্মী প্রফুল্লচন্্রকে' ষেন ঠিক 
মত বুঝিতে চাহে না। অথচ বাঙ্গালীকে ব্যবসায়ের বাণী গুদাইতে 
যাইয়্াই এই ভারতীয় নেতা! সর্বভারতীয় নেতৃত্বের প্রসরতর ক্ষেত্র হইতে 
সরিয়া আসিয়া বাঙ্গালীর মধ্যে চিরদিন বাঙ্গ।লী হইয়াই বাঁচিয়া রহিলেন। 
ফরাসী বিপ্লবের পূর্বেব রুশো! ফরাসীজাতির ভাবলোকে বিপ্লব আনিয়া" 
ছিলেন | গ্রফুল্লচন্দ্রও বাঙ্গালীর অর্থনৈতিক বিবর্তনের সন্ধিক্ষণে 
বাঙ্গালীর জীবনের পথ নির্দেশ করিয়াছেন। ফলতঃ যুগমানবের স্যায় 
বাঙ্গালীর আশা আকাঙ্খা! ও বৃহত্তর সম্ভাবনার প্রতীক রূপে প্রফুল্লচন্দ্রের 
অভ্যুদয় হুইয়াছিল। বাঙ্গালী যুবকের মধ্যে ব্যবসায় সম্পর্কে ষে সাড়া 
পড়িয়া গিয়াছে, ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়া বাঙ্গালীর 
প্রতিভা যে আত্মবিকাশের পথ খঁজিয়! ফিরিতেছে, তাহার পশ্চাতে 
্রফুল্লচন্দ্রের প্রভাবই যে ক্রিয়াশীল-_একথা আমাদিগকে স্বীকার 
করিতেই হইবে । 


স্বদেশ প্রেমিক ও সমাজ সেবক প্রফুল্পচড্র 


এইবার আমরা স্বদেশ প্রেমিক ও দরি্রবন্ধু গ্রফুল্লচন্দ্রকে বুঝিতে 
চেষ্টা করিব। মহাপুরুষদিগের চরিত্র আলোচন! করিবার সুফল এই 
যে, মহৎ চরিত্র ও বিস্তৃত মনের কথা চিন্তা করিতে করিতে আমাঁদের 
মনও তদাকার প্রাপ্ত হয় এবং মানবজীবনের মহত্তর ও বিস্তৃততর 
সম্ভাবনা অন্ততঃ সাময়িক ভাবেও আমরা অনুভব করিতে পারি। 
যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তিগত মনের মধ্য দিয়! বিরাটি মানব মনের এঁক্যের 
সূত্র প্রীসারিত, 'সেইজন্য কুঁচকানো! আড়ষ্ট মন মহাপুরুষদিগের চরিত্র 
অনুধ্যান করিতে করিতে একটা ন্খকর প্রসারতা অনুভব করে এবং 


৭৪ মনীষী প্রচ 


সেই মনের অধিকারী মানুষটি নিজের অজ্ঞাতেই জীবনের কল্যাণমন্ত্রে 
দীক্ষিত হইয়া উঠে। 

প্রফুল্পচন্দ্রকে সম্যগ্ভাবে উপলব্ধি করিতে হইলে, সর্ববপ্রথমে তাহার 
মনের গঠন আমাদের লক্ষ্যীভূত হইয়! উঠে এবং যে বংশ-গত বৈশিষ্ট্য ও 
অনুকুল পরিবেশের সম্মিলনে সেই মনের গঠন সম্ভব হইয়াছিল, তাহাই 
আমাদের আলোচনার বিষয়ীভূত হয়। মাঁনবমনের গহন গুহায় 
কোথায় কোন্‌ গুগ সুপ্ত হইয়া আছে এবং প্রকৃতির কোন্‌ অজ্ঞাত হস্ত- 
ষ্পর্শে লোকচক্ষুর অওরালে প্রফুল্লকমলের সহত্রদলবিকাশের পরিপূর্ণ 
নুষমাঁয় উহার! জাগিয়া উঠিতে থাকে-_তাহ। মানুষ দেখিতে পাঁয় না। 
কিন্তু এই বিচিত্র বিকাশের কথা ভাঁবিয়৷ আমরা বিশ্বয়ে মুগ্ধ হই। 
জগতে মহাপুরুষ হইয়াই কেহ জন্মগ্রহণ করেন না, এবং মহাপুরুষ 
হইবার পরই মানুষের জীবনী লেখার প্রয়োজন হয়। ম্বৃতরাঁং তাহাদের 
গঠনমুখী মনের বৃদ্ধির অনুকূলে ঘটনা পরম্পরার প্রভাব সম্পর্কে অল্প 
কথাই আমর! জানিতে পারি। যাহ। আমাদের চক্ষুর সম্মুথে ঘটে, 
তাহাই ভিত্তি করিয়৷ অনুমান সাহায্যে দৃশ্যমান চরিত্রের অনুগত একট! 
যুক্তির বনিয়াদ আমর! গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করি। 

উদার পিতার সন্তান প্রফুল্লচন্্র-_ঙাঁহার সংস্কার-প্রয়াসী চিত্ত 
প্রাচীন সংস্কারের নিগড় কাটিয়া, স্বাধীন চিন্তা দ্বারা সংকল্প করিয়! 
তেতবস্থী ব্যক্তিত্ব দ্বার উদ্দেশ্য সাধনে যত্বুপর হইতেন। বালক প্রফুল্লচন্্ 
ছুঃস্থ প্রতিবেশীর বাড়ীতে মায়ের ভাণ্ডার হইতে সাগু'ও মিছরী বহিয়া 
লইয়া যাইতেন। পিতার সাহচর্ষ্যে সংস্কৃতির উদার মুক্ত আবহাওয়ার 
মধ্যে তাহার বালক মন বাঁড়িয়! উঠিয়াছিল। কৈশোরে আলর্বু্ঠ স্কুলের 
শিক্ষকদিগের প্রভাব এবং উন্নত শ্রেণীর বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রগতিশীল 


মনীষী প্রয়ুল্নচ্ চি 


ংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রিকাদি অধ্যয়নের ফলে স্বাধীনভাবে চিন্তা 
করিবার মত মনের গঠন তাহার হুইয়াছিল। অশ্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহ 
ও বৈধব্য প্রভৃতি সামাজিক রীতি সম্পর্কে একটা ঘ্বণার, এবং সামাজিক 
ছূর্গতদিগের সম্পর্কে একটি গভীর সহানুভূতির মনোভাব তাহার মধ্যে 
গড়িয়া উঠিয়াছিল। ইংলণ্ডে অধ্যয়ন কালে তিনি ইংলগ্ডের ভারত 
সম্পর্কীয় রাষ্ট্রনীতি নিরঙ্কুশ সমালোচন। প্রকাশ করিয়াছিলেন অধ্যয়ন 
সমাপ্তির পর সিনিয়র গ্রেডে অধ্যাপকের পদ লাভের আশায় ইংলগ্ডে ও 
ভারতে তাহাকে উমেদারী করিতে হইয়াছিল। কিন্তু উপরওয়ালা* 
দিগের পক্ষপাতমূলক নীতির ফলে যোগ্যত৷ সব্েও প্রথমে তিনি উক্ত পদ 
লাভ করিতে পারেন নাই। তীহার এই ব্যক্তিগত অসফলতার মধ্যে 
জাতির অসহায়তাঁর ব্যাপক প্রতিচ্ছবি তিনি বোধ হয় দেখিতে পাইয়া 
ছিলেন। মহত অস্তঃকরণের স্বভাবই এইরূপ । অজ্ঞাত কুটিরে অবহেলায় 
জলা প্রদীপ যেমন ক্ষেত্র বিশেষে বৃহৎ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করে, তেমনি 
ব্যক্তিত্বের ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে উপচিত বেদন। মহৎ মনের স্পর্শে 
জাতির-বৃহত্তর পটভূমিকাঁয় সার্বজনীন বেদনায় রূপায়িত হইয়। উঠে এবং 
ব্যক্তিও তখন নিজের পৃথক অস্তিত্ব হারাইয়া জাতির ব্যাপক সত্তার সহিত 
একাকার হইয়া যায়। 
প্রফুল্লচন্দ্র তাহার বিরাট চিত্ত দিয়া জাতির সমুদয় অঙ্গকে যেন স্পর্শ 
করিয়৷ ছিলেন। তাই জাতির যে অঙ্গ যখনি অভাবে, দৈন্যে, প্রাকৃতিক 
বিপর্য্যয়ে বেদনাতুর হইয়াছে, তখনি তাঁহার চিত্তও সমানুভূতিতে ক্লিট 
হইয়াছে। সামাজিক রীতিনীতির ফলে জাতির অঙ্গ যেখানে ছূর্ববল 
এবং পঙ্গু, তাহার মমতাভর! অন্তর একমুখী হুইয়। সেই দিকেই ছুটিয়া 
গিয়াছে, এবং স্বাধিকার প্ররবুদ্ধ মনুহ্ত্বের সজীবতায় তাহাকে সবল 


৭৬ মনীষী প্রফুল্লচন্্র 


খাসির সব সী পাতির্সিশা্পসিাসিতাস্পস্স সিসি পাপা নপিপাসিিসসিপ পাপা িতিিপাস্সিপিসস্টিটি 


করিয়! তুলিবার জন্য তাহার পরম আকুলতা কখনও সমাজকে কশাঘাঁতে, 
কখনও ব! সমাজ নির্ধ্যাতিত সম্প্রদায়কে উৎসাহদানে সর্বদাই আত্মপ্রকাশ 
করিয়াছে । জাতির ব্যাপক হূর্গতি তাহার অন্তরকে ব্যাপক ভাবেই 
মাড়! দিয়াছিল। তাহার বিপথচাঁলিত মনকে ভ্রান্তি দর্শাইয়! কল্যাণমুধী 
করিবার জন্য তাঁহার চেষ্টার ক্রি ছিল ন|। মুক্তি আন্দোলনের ভাবের 
বন্যায় জাতির হাদয় যখন উচ্ছুসিত হইয়াছিল, ত'হাঁর তরঙ্গাভিঘাত 
স্তাহার চিত্েও আলোড়ন স্্টি করিয়াছিল। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক 
খধির উচ্ছ(সিত অন্তর ও কঠোর সংযমের কথা৷ জনসাধারণের নিকট 
অজ্ঞাত রহিয়! গিয়াছে । ভাবের আলোড়ন ভেদ করিয়। একটি মাত্র বাক্য 
আমরা! তাহার ক হইতে ধ্বনিত হইতে গুনিয়াছি_:3019706 0% 
মম210, 006 9818] 082 22০৮ অত্যই প্রফুল্লচন্দ্রের হদয়ের বিস্তৃতি 
জাতীয় চিত্তের বিশালত্বের সহিত উপমেয়। 

এই প্রসঙ্গে মহাত্মা! গান্ধীর সহিত প্ররফুল্লচন্দ্রের পরিচয় বিশেষ 
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯০১ সালে গান্ধীজী প্রফুল্লচন্দ্রেরে সহিত 
সাক্ষাৎ করিতে আসেন। গান্ধীজীর চুস্বকৎন্মী ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে 
আসিয়া প্রফুল্লচন্দ্র তাহার দিকে বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। 
এই আকর্ষণ পরে প্রগাঢ় বন্ধুত্বে পরিণত হইয়াছিন্স। এই সাক্ষাৎকারের 
ফলে প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তিত হইয়াছিল । 
গান্ধীজীর মধ্যে প্রফুল্লচন্দ্র বুঝি নিজের জীবনেরই স্প্তর প্রতিচ্ছবি 
দেখিতে পাইয়াছিলেন। তাহার হ্যায়নিষ্ঠা, তাহার সত্যপ্রিয়তা 
তাহার নিরাভরণ নগ্ন মনুষ্ত্ব বুঝি প্রফুল্পচন্দ্রের মহৎ জীবনকে মহত্তর 
সার্থকতার পথে আগাইয়! দিয়াছিল। 

কোন বৈদেশিক সাংবাদিক বলিয়াছেন-প্রফুল্পচন্্র ভাবারেগ- 


মনীষা অফুল্লচন্জ ৭ম 


প্রধান প্রকৃতির লোক ছিলেন ।, উাহার সকল্গ কর্মের ধারা উচ্চ ভাবলোক 
হইতে প্রবাহিত হইত ) ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের অতীত আদর্শ নিষ্ঠা 
সকল কাধে তাঁহাকে অনুপ্রাণিত করিত। বাঙ্গালী জীবনের ব্যাপক 
দৈগ্য তীহার হৃদয়ে যে ক্ষোভ ও বেদনার সৃষ্টি করিয়াছিল, তীহাঁর 
বৈজ্ঞানিক সাধনা, ব্যবসায় ও শিল্প সংগঠন সকলই সেই ক্ষোভ ও 
বেদনার প্রতিক্রিয়ার বাস্তব রূপ। 
ভাবাবেগ বাঙ্গালী চরিত্রের বিশেষ ধন্ম। যখনই কোন বাহিরের 
ব্যাপার তাহার ভাবলোকে কম্পন জাগাইয়াছে, তখনই তাহার সমস্ত 
চেতন! বিদ্যুৎ বিকাশের ন্যায় উদ্দীপিত হইয়া উঠিয়াছে। সেই 
উদ্দীপনার মুখে বাঙ্গালী তাহার আদর্শের পায়ে জীবনের সব কিছু প্রিয় 
বস্ত অকাতরে উৎসর্গ করিয়া দিয়াছে। কিন্তু আকন্মিক উত্তেজনার 
অনিবা্ধ্য প্রতিক্রিয়। স্বরূপ তাহার সমস্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনা .শীজই 
তাহার শান্ত ও স্বাভাবিক জীবন যাত্রার সন্ীর্ণ খাতে যেন বিমাইয়া 
পড়ে। কিন্তু প্রফুল্লচন্দ্র আকস্মিক উত্তেজনায় আপন কন্ম: শক্তিকে 
ব্যয়িত হইতে দেন নাই। তাহার বৈজ্ঞানিকের হিসাবী বুদ্ধি ও পরিমাণ 
বোধ সর্ববদাই তাহার ভাবের মুখে রাশ কষিয়! রাখিয়াছে এবং সংযত 
ভাবধারা অন্তরে অহনিশ ক্রিয়াশীল থাকিয়া ধারাবাহিক কল্যাণ প্রচেষ্ঠায় 
নিরস্তর আপনাকে উৎসারিত করিয়! দিয়াছে। আকম্মিক বৈরাগ্য 
একদিনেই তাহাকে পথের ভিখারী সাজায় নাই, কিন্তু একটা অবিচ্ছেদী 
বৈরাগ্যের সুর তাহার জীবনকে দিগস্ত হইতে দিগ্ত পর্য্যস্ত' ষেন 
ছাইয়া রাখিয়৷ ছিল এবং তাহারই তম্ময়তায় তিলে তিলে তিনি বুঝি 
আপনাকে চিন্তায় বাক্যে ও কার্যে জাতির কল্যাণ সাধনায় উৎসর্গ 
করিয়াছিলেন । 





৭৮, মনীষা গ্রফুল্লচন্র 





০০ শি পরী পি 


সাধারণ ভাবে প্রসুল্পচন্দ্রের জীবন জাতির কল্যাণে উৎসর্গাকৃত 
হইলেও, প্রত্যক্ষত: ছু:স্থের সেবায় এবং জাতির মঙগলানুষ্ঠানে তাহার 
জীবনের যে অংশটুকু ব্যয়িত হইয়াছিল, তাহাকে চারিভাগে ভাগ 
করা যায়-_-১। খুলন! ছুভিক্ষ ও উত্তর বঙ্গের বন্যা, ২। খদ্দর 
প্রচার ও চরক! প্রচলন, ৩। অক্পৃশ্যতা বর্জন, ৪। বিভ্রান্ত ও 
মোহগ্রস্ত জাতিকে স্ুপথে নিয়ন্ত্রিত করিবার জন্য তাঁহার অসংখ্য 
রচনা ও বক্তৃতাদান। এই সমস্ত কাঁধ্য তাহার তীক্ষানৃতৃতিশীল 
মনেরই বহিঃ প্রকাশ। কিন্তু এই কার্য্যগুলির দ্বারা তাহার 
অসামান্য কাধ্যকুশলতা ও সংগঠন শক্তির পরিমাপ হইলেও, 
উহার দ্বারা তাহার বিরাট আবেগশীল মনের প্রচণ্ড বিক্ষোভের 
পরিমাপ কখনই সম্ভব নহে। তাহার ব্যক্তিগত, আচরণ, পত্র ও 
উচ্ছসের মুখে উচ্চারিত বক্তৃতায় সময় সময় তাহা! আংশিক ভাবে 
ফুটিয়! উঠিয়াছে। 

১৯২১ সালের খুলনার ছুতিক্ষের পর হইতে প্রফুল্পচন্ত্র একান্তভাবে 
“সাধারণের সম্পত্তি” হইয়! পড়িয়াছিলেন। তাহার বন্ুপূর্বব হইতেই 
তিনি অশিক্ষিত দেশবাসীর মধ্যে শিক্ষা প্রচারের মহ ব্রত গ্রহণ 
করিয়াছিলেন । অজ্ঞানতা ও শিক্ষার অভাব যে জাতীয় উন্নতির 
সর্ববগ্রধান অস্তুরায়_ইহা। তিনি জীবন-প্রীরস্তেই অনুভব করিয়াছিলেন; 
সেই জন্ঠ দেশের বুকে জ্ঞানের আলো! জ্বালিবার জন্য তিনি তাহার 
উপাঞ্জিত অর্থের অধিকাংশ দান করিয়া গিয়াছেন। অসংখ্য দরিদ্র 
ছাত্র তাহারই অর্থ সাহায্য লাভ করিয়! বিগ্ঠাভ্যাসে সমর্থ হইয়াছে। 
তাহার ্বগ্রাম রাড়ুলির উচ্চ ইংরাজী বিদ্ালয় তাহারই প্রতিষ্ঠিত। 
বাগেরহাট কলেজ এবং খুলনার অন্তর্গত সীইহাটি ও বুধহাটার উচ্চ 


মনীষী গ্রফুল্লচন্্ ৭৯, 
ইংরাজী বি্ভালয় তাঁহার সাহায্য-পুষ্ট । সারা! ভারতের বন্থ শিক্ষা- 
প্রতিষ্ঠান তীহার অর্থ সাহায্য লাভ করিয়াছে। 


5 দুর্ভিক্ষ ও বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে তাহার সেবা 


অনাবৃষ্ট, বন্যা, ঘূ্ণবাত্য প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় বাঙ্গালীর 
জীবন-যাত্রার প্রায় নিত্যসঙ্গী। বাঙ্গালার কোন না কোন অঞ্চল 
প্রায়ই ইহাদের নিষ্ঠুর আক্রমণে উপক্রত হয়! থাকে। মানুষের 
বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ইহাদের প্রতিরোধে কোন দিনই নিয়োজিত 
হয় নাই। উৎপীড়িতের দুর্দশা মোচনের জন্য কোন স্থায়ী 
প্রতিষ্ঠানও দেশে গড়িয়া! উঠে নাই। প্রাকৃতিক বিপর্ধ্য় যখন 
আসে- দেশের অসহায়, নিরক্ষর, মূর্খ, মুক জন সাধারণ ভগবানের . 
দেওয়া শাস্তি অথবা ভাগের নিষ্ঠুর পরিহাস মনে করিয়! নীরবে তাহা 
মানিয়া লয়। 

বিজ্ঞান কলেজের প্রাচীরের অন্তরালে সাধনানিরত ধ্যানমগ্র এই 
বৈজ্ঞানিক একদিন আকম্মিক ভাবেই দেশবাসীর এই নিদারুণ 
ছর্দেবের সম্মুখে আমিয়! দাড়াইলেন। ১৯২১ সালের গ্রীক্মকাল। 
্রফুল্লচন্দ্র তাহার চিরাচরিত প্রথা মত গ্রীষ্মাবকাশে তাহার প্রিয় পল্লী 
রাড়ূলী আসিয়াছেন। পরপর ছুই বদর অনাবৃষ্টির ফলে খুলনায় 
হ্ভিক্ষ দেখা দেয়। তাঁহার স্বগ্রাম রাড়ুলির নিকটবর্তী বিল অঞ্চল 
সমূহে এই দৃ্িক্ষের প্রকোপ সর্বাপেক্ষা অধিক হইয়াছিল । প্রফুচ্্র 
দূর হইতে এই ছু্তিক্ষের সংবাদ পূর্বেবেই পাইয়াছিলেন, কিন্তু অবস্থার 


ভয়াবহত| সম্যক উপলব্ধি করিতে পারেন নাই। 
খুলনায় আসিয়া তিনি দেখিলেন-_দেশের বুকে দীর্ঘ পার ছায়া 


৮ | মনীষী গ্রকুল্চন্্র 


চি 


ফেলিয়া ছুর্ভিক্ষ আমিয়াছে-_সহত্র সহস্র অনশন ক্ষ বৃতূক্ষ নরনারী__ 
আসন্ন মৃত্যুর কালো ছায়া তাহাদের চোখে মুখে- চামড়ায় ঢাকা চলমান 
কঙ্কাল শ্রেণী ; যাহাদের লাঙ্গলের মুখে ধাম্যারূপিনী লক্ষ্মী হরিতের সমা- 
রোহে আবিভূতা হন, তাহারাই আজ অঙ্গের কাঙ্গাল-_কাতর দৃষ্টিতে 
ভিক্ষুকের মিনতি জানাইয়া একমুষ্টি অন্নের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া 
বেড়াইতেছে ! এই মর্শাস্দ বেদনার দৃশ্য তাহার প্রাণকেন্দ্রে যে 
আলোড়ন স্থ্টি করিল, তাহারই ফলে তাহার মানবহিতৈষণার অন্তগৃ'চ 
আোতোতধারা যেন সংযমের পাষাণ ভেদ করিয়। জনকল্যাণের সহস্র 
খারায় বাহিরে উৎসারিত হইল্প। প্রফুল্লচন্ত্র বিজ্ঞান সাধনার উচ্চ মান- 
দিক শুর হইতে নামিয়া আসিলেন মাটির পৃথিবীতে--অনাহার;মহামারী, 
অত্যাচার ও অবিচারে দেশের বুক যেখানে বেদনায় মথিত হইতেছে । 

এই ছুতিক্ষে রাজসরকার ওদাসীন্য ও অবহেলাই প্রকাশ করিয়া- 
ছিলেন। 'খালবিলে প্রচুর মাছ মিলে, দুধ ভলের দরে বিবাইতেছে। 
অর্থাৎ এই রূপ প্রাচুর্ষে;র অবস্থা মোটেই ছুতিক্ষের অনুকূল নহে-_রাজ 
কণ্মমচারী এই মন্তব্য করিয়া ছুভিক্ষ সম্পর্কে তাহার কর্তব্য শেষ 
করিলেন। অবশ্য রাজকন্মচারীকে আমরা অপরাধী করিব 
না। জনসাধারণের জীবনের স্বাভাবিক মান ও ছুভিক্ষের অবস্থা--এই 
'ছুইয়ের মধ্যে ব্যবধান এত ক্ষীণ যে, ছুত্তিক্ষের অবস্থার গুরুত্ব এই 
বিদেশী রাজকর্ম্মচারী অনুভব করিতে পারেন নাই। প্রাচুর্য্যের কোলে 
আসীন বিদেশী রাঁজকর্মমচারীর নিকট-_জনসাঁধারণের স্থানে দীড়াইয়! 
তাহাদের অবস্থা অনুভব করিবার মত মনের বিস্তৃতি আমর! .আশ। 
করিতে পারি না); বিশেষতঃ গভর্ণমৈপ্ট যেখানে জনসাধারণের ইচ্ছার 
উপর প্রতিষ্ঠিত নহে। 


মনীষী গ্রহু্চন্জ ৮১ 
্রফুল্পচন্্র দেশবাসীর এই ছুর্দশা মোচনের জদ্ ভিক্ষাপাত্র হবে 
দেশবাসীর দ্বারে আসিয়! দাড়াইলেন। এইখানে আমর! প্রফু্লাটন্টের 
ব্যক্তিত্রে অসামান্য প্রভাব লক্ষ্য করি? তাহার আবেদনে দেঁশধাসী 
অপ্রত্যাশিত ভাবে সাঁড়া দিলগ। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে অর্থ ও 
বন্ত্র সংগৃহীত হইল। মহাত্ঝা গান্ধী আর্ত দেশবাসীর জন্য উদ্বেগ গ্রর্কাশ 
করিয়া প্রফুল্পচন্ট্রকে পত্র দিলেন। তাহার আহবানে ধনী মাঁড়োয়ারী 
সম্প্রদায় প্রতৃত সাহায্য করিলেন। অল্পদিনের মধ্যে বস্টে ও নগর্দ 
টাকায় প্রায় তিন লক্ষ টাকা সংগৃহীত হইল। খুলনার পর্ক 
গ্রতিষ্ঠ ব্যবহারজীবী জ্োতিষচজ্জ ঘোষ ও কুঞ্জলাল খোষ প্রভৃতি 
কতিপয় দেশপ্রেমিক স্বদেশসেবক এই হ্ংস্টের সেবা-কার্য্য ভাহার 
সহায় ইইয়াছিলেন। বরিশাল হইতেও বহু যুবক আপিয়! “গুদিতের 
অক্গদান” সেবার মহান্‌ দায়িস্ খ্বেচ্ছায় বরণ করিয়া লইলেন। প্রেফুটচজী 
যাহার উদ্যোক্তা, তাহার যৌক্তিকতায় সঙ্গেহ করিতে দেশবাসী কোন 
দিন শিখে নাই। দের্শবাঁসীর কি বিপুল আস্থাই না প্রফু্চন্ লী 
করিয়াছিলেন ! 

১৯২২ সাপে ভীষণ প্লাঁবনের ফলে উত্তরবঙ্গে চরম ছুর্দশা দেখা দেয়। 
বৈদেশিক সাংবাদিকদিগের হিসাব মত ক্ষতির বিবরণ এইরূপ £_- 
: প্ৰস্থা বিধ্বস্ত অঞ্চলের আয়তন প্রায় ছুই হাজার বর্গমাইল, লোক 
সংখ্যা দশলক্ষেরও অধিক । ঘনবসতিপূর্ণ প্রায় ৭০০ বর্গমাইল পরিমিত 
স্থানের অর্দের্কের বেশী গৃহই ধ্বংস হইয়াছে, গবাদি পশুর সমুদয় 
খাস্ঠ নষ্ট হইয়াছে । অন্ততঃ পক্ষে ১২ হাঁজার গবাদি পশুর মৃত্যু হইয়াছে 
৫০* বর্গমাইল স্থানের ধানের ফসল নষ্ট হইয়! গিয়াছে ।” | 

দেশের এই. নিদারুণ ছুর্দিনে দেশবাসী পরম নির্ভরতায় প্রফুল্প- 

ঙ 


৮২ মনীষা প্রফু্লচজ্জ 





চন্্রকে জাকড়াইয়া ধরিল। খুন! রিলিফের কার্ধ্য সবে মাত্র শেষ 
হইয়াছে । এইবার ক্ষেত্র ব্যাপকতর, দেশবাসীর প্রয়োজনও বন্ছমুখী ; 
কিন্তু প্রফুল্লচন্দরের কর্নশশক্তিও অসাধারণ । গৃহহীন মুমুষূ- ছুর্গতদিগের 
আর্ত ক্রন্দন প্রফুল্লচন্দ্রের কণ্ঠেই যেন ধ্বনিত হুইয়! উঠিল। তাহার 
'আহ্বাঁনে সমবেদনার আবেগে কোটিপ্রাণ যেন একটি প্রাণের মতই সাড়া 
দিল। একমাসেরই মধ্যে তিন লক্ষ টাকা উঠিল। স্্রীলোকের৷ গাত্রের 
অলঙ্কার, পরিধেয় বস্ত্রাদি দান করিতে লাগিলেন। বন্যাপীড়িতের সাহাঁয্য- 
কলে স্থানে স্থানে যে সকল সেবা! প্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিয়াছিল, “বেঙ্গল 
রিলিফ কমিটি" নামে একটি কেন্দ্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে তাহাদের 
সকলকে সংযুক্ত করিয়া একটি দেশব্যাপী বিরাট সেবা-সংগঠন গড়িয়া 
তুলিলেন এবং বিচ্ছিন্ন, বিশৃঙ্খল ও অব্যবস্থিত আহার্ষ্যের পরিবর্তে কেন্দ্র 
হইতে উৎসারিত সুনিয়ন্ত্রিত সাহায্য ছুর্গতদিগের মধ্যে নিয়মিত ভাবে 
ছড়াইয়। পড়িতে লাগিল । এই সেবা-প্রতিষ্ঠানের অফিস ও গুদামের জদ্য 
বিজ্ঞান কলেজের একাংশ ছাড়িয়া দেওয়া হইল। সুভাষচন্দ্র বসু, 
সতীশচন্্র দাসগুণ্ত, ডাঃ ইন্দ্রনারায়ণ সেনগুপ্ত প্রভৃতি মহাগ্রাণদিগের 
চেষ্টায় এবং শত শত উদার চরিত্র যুবকের কার্ধ্যের দ্বারা ছর্গতদিগের 
সমস্ত প্রকার অভাব শী্রই বিদুরিত হইল। 

প্রফুল্পচন্্র এই সেবাকার্ধ্যের জন্ত তাহার সহকণ্ম্ীদিগকে গৌরব- 
'ভাগী করিয়াছেন। সত্যই সুভাষচন্দ্র বনু, ডাঃ ইক্জনারায়ণ সেনগুপ্ত 
এবং অন্ান্ত সংগঠন-শক্তিসম্পন্ন ও একনিষ্ঠ জনকল্যাণকামীর অরুন্ত 
চেষ্ট। ও যত্বে এইরূপ সুশৃঙ্খল ও কর্ম্মতৎপর প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোল 
সম্ভব হইয়াছিল। তবে একথাও আমাদের মনে রাখিতে হইবে__ 
প্রফুল্নচন্দ্রকে অবলম্বন করিয়াই এই প্রতিষ্ঠান রূপায়িত হইয়াছিল 


মনীষী গ্রসুল্লচন্দ্ ৮৩ 


স্পা 


এবং তাহার ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্রে রাখিয়াই এই সেবা প্রতিষ্ঠানের চাকাটা 
আবর্তিত হইতেছিল । 

পুনরায় ১৯৩১ সালে ভীষণ বন্তা ও ঘুর্ণীবাত্যায় পূর্ববঙ্গের 
অনেকগুলি জনপদ বিধ্বস্ত হইল। যে দেশে প্রাকৃতিক বিপর্ধ্যয় 
লাগিয়াই আছে, সরকার যেখানে জনসাধারণের হুঃখছূর্দশায় একান্ত 
উদাসীন, সেখানে দেশবাসীকে রক্ষা করিবার জন্য দেশবাসীকেই অগ্রসর 
হইতে হইবে। দেশবাসীর এই ছুদ্দিনে জনসেবা! প্রণোদিত হইয়! বাংলায় 
*সংকট-ত্রাণ সমিতি" নামে একটি স্থায়ী সেবা প্রতিষ্ঠান গড়িয়! উঠিল। 
সতীশচন্দ্র দাসগুপ্ত তাহার পরিচালক হইলেন। দেশের আধিক অবস্থা 
বিশেষ ভাল ছিল না, তাহা হইলেও প্রফুল্লচন্দ্রের আবেদনে দেশবাসী 
যথাসাধ্য সাহায্য করিল। দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও অর্থ 
সংগ্রহ করিয়! আর্তের সেবায় প্রফুল্লচন্দ্রকে দান করিয়াছিল। 

দুভিক্ষ-উপদ্রত অঞ্চল ভ্রমণ করিতে যাইয়া, জনসাধারণের 
বিশেষতঃ চাষীশ্রেণীর ( ইহারাই দুভিক্ষের ফলে সর্বাধিক বিপন্ন 
হইয়াছিল ) জীবন যাত্রার সহিত প্রফুল্লচন্দ্রের সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটে । 
চরম ছুঃখছুর্দশায় দেশবাপী তাহার সাহায্যের হস্ত প্রসারিত করিয়াছে 
সত্য ; কিন্ত নিত্য উপবাসীকে কে দেখিবে? ইংরাজ আমলে দেশে 
যতবারই ছুতিক্ষ দেখা দিয়াছে, তাহাকে অন্নাভাব না বলিয়! অন্নের 
মহীর্ঘত৷ বলাই সঙ্গত হইবে। নিজ জমিতে অজন্মা এবং ছুর্মল্য খা্- 
ক্রয়োপষোগী অর্থের অন্বচ্ছলতা_এই উভয় কারণের যুগপদ 


বিদ্ধমানতার ফলে প্রত্যেক বারই বাংলায় বিপুল-প্রনার লোকক্ষয়কর 


ছুভিক্ষ সম্ভব হইয়াছে । 
প্রফুল্নচন্দ্র সোদ্বেগে লক্ষ্য করিয়াছিলেন ভাগ্যের অবশ্য- 


পাস 


৮৪ মনীষী গ্রফুল্লচজ 


স্তীবিতায় বিশ্বীসের ফলেই হউক, অথবা অশিক্ষাজজনিত মানসিক 
উৎকর্ষের অভাবেই হউক, আমাঁদের দেশের চাষীদের মনের উত্তাবনী 
বৃত্তি একেবারে নষ্ট হইয়া গরিয়াছে। কাজেই তাহাদের এক মাত্র 
জীবনোপায়, চাষের পরিপূরক কোন সংগঠিত কুটার শিল্প তাহাঁদের 
ভিতর প্রচলিত নাই, যাহা অজন্মার ছুর্দিনে অনটন হইতে তাহাদের 
রক্ষা করিতে না পারিলেও, অনাহার অক্টোপাসের বজ্জ আবেষ্টনে 
নিম্পিষ্ট হইয়। মৃত্যুমুখে পতন হইতে অন্ততঃ তাহাদের রক্ষা করিতে 
পারে । প্রফুল্লচন্দ্রে' প্রত্যক্ষ-লব্ধ অভিজ্ঞতা দুভিক্ষ-জনিত কষ্টের 
আশু গ্রতীকারে তাহাকে যেমন সচেষ্ট করিয়াছিল, তেমনি ভবিষ্যৎ : 
দুর্দিনের প্রতিরোধ কর্পে এবং কৃষক জনসাধারণের জীবনের অর্থ নৈতিক 
ভিত্তি দুঢ়তর করিবার জন্য তাহাদের মধ্যে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় 
তাহাকে উদ্ভোগী করিয়াছিল । খুলনা ছু্ভিক্ষের জন্য বুধহাঁটা, 
আশাশুনি, মিত্রর্েতুলিয়া, প্রতীপনগর, খুলনা সদর, কাটিপাড়া, 
খেশরায় যে সমস্ত সাহায্য কেন্দ্র খোল! হয়, সেখানে স্ুৃতাকাটা, 
কাপড়বোনা, বেত ও বাঁশের নানা প্রকারের জিনিষ তৈয়ারী শিক্ষা 
দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রাষ্ট্রের যে জাতীয় পৃষ্ঠপোঁধকতায় এই 
সকল শিল্প সগ্ভীবিত থাকিয়া শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে, তাহার অভাবে 
শিল্পগুলি প্রসার লাভ করে নাই সত্য, কিন্তু ইহারা সেই চরম ছুর্জিনে 
জনসাধারণের পরম নির্ভরস্থন হইয়াছিল। এই উপলক্ষে চরকা, ও 
খদর প্রফুল্লচন্দ্রের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়াছিল । 

| চরক! ও খন্দর 

বর্তমান যুগে যন্্রচালিত মোটর গাড়ী, মোটর বাইক, ও ট্রামের 
গমনাগমনের মাঝখানে বিমাইয়া চলা গোযান যেমন আমাদের নিকট 


মনীষী গ্রফুয়চন্ত্র ৮৫ 





কী পাস ক 


বিসদৃশ ও দৃষ্টিকটু ঠেকে, তেমনি গোযান সভ্যতার সমসাময়িক এই 
চরকা আজ বিংশ শতাব্দীর যন্তরসভ্যতার পটভূমিকায় নিতান্ত বেমানান 
ও অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। যে সময়ের মধ্যে কারখানার বিরাট গর্ভ 
হইতে হাজার হাঁজার গজ ম্ৃতা বাহির হইয়া আসিতেছে, সেই একই 
সময়ে গৃহের কোণে হস্তচালিত চরকা “ঘ্যানোর ঘ্যানোর' শবে 
“ারিনে পারিনে' করিতে করিতে এক শত গজ স্ৃতা পাঁকাইয়! উঠিতে 
পাঁরে না। সুতরাং আধুনিক সভ্যতার কেন্্স্থলে বসিয়া আধুনিকতম 
ভাবের আলোকে জাতীয় জীবনের সমস্যা আলোচনা করিতে যাইয়াঁ_ 
চরকা এযুগে অচল-_এ ধারণা নিঃসন্দেহে আমাদের মনে জাগিতে 
পারে। এই ধারণার বশবর্তী হইয়া বৈজ্ঞানিক প্রফুল্লচন্দ্রও একদিন 
চরকার প্রতিকূলেই মত পোষণ করিয়াছিলেন। 

আমর! ভুলিয়া যাই-_-আমাঁদের জাতীয় জীবনযাত্রা-প্রণালী 
প্রায় গোযান সভ্যতাঁর সমসাময়িক রহিয়া গিয়াছে। আজও আমাদের 
স্বদেশী যাঁন গোশকট ও নৌকা, হাজার বছর আগেও যা আমাদের 
ছিল। এখনও বটতলার কুঁড়ে ঘরে আমাদের গ্রাম্যকন্মনকার নেহাইএর 
উপর হাতুড়ি পিটাইয়া লৌহ বাঁকাইয়! আমাদের কাটারি, কুড়ালি, 
খোস্ত। প্রভৃতি তৈয়ার করিয়! দেয়। হাজার বছর আগের লাঙ্গল চাষীর 
হাতে আজও অবিকৃত রহিয়! গিয়াছে । আধুনিক সভ্যতার অঙ্গ হিসাবে 
যাহাই আমরা ব্যবহার করি, আমরা তাহার .ক্রেতা_ নির্মাতা! বা 
বিক্রেতা নহি ; শুধু তাহাই নহে, কার্যত, তাহা! নির্মাণ ও বিক্রয়ের 
অধিকার আমাদের নাই । গত ৩1৪ শত বৎসর ধরিয়া পশ্চিমের মহাদেশ 
গুলিতে রাষ্্রীয় ও সামাজিক বিবর্তনের ফলে তাহাদের জাতীয় জীবনে 
যে নূতন নৃতন সত্য রূপায়িত হইয়াছে, তাহা তাহাদের সমাজ-ও রাষ্ট্রে 


৮৬ মনীষী প্রফুষ্লচন্ত্ 


পরিণতি পথে ফুটিয়া উঠিয়াছে। তাহা আমাদের দেশের কতিপয় 
উচ্চশ্রেণীর চিন্তাশীলের মননশীলতীয় ধরা পড়িলেও, আমাদের জাতীয় 
জীবনে প্রাণময় স্বতঃ-ন্ফুর্ত সত্যরূপে তাহা ফুটিয়া উঠে নাই। 
জাতির মন্থর-গতি জীবন ধারার সহিত ধাঁহার প্রত্যক্ষ পরিচয় 
আছে, সমস্তার সমাধান করিতে হইলে তীহাকে জাতির অস্থিমজ্জীয় 
মিশিয়া আছে যে সকল সংস্কার, তাহাদিগকে যুগোপযোগী নৃতন- 
রূপে পুনর্জীবিত করিয়া সংহত চেষ্টাদ্ারা তাহাদিগকেই সার্থক 
করিয়া তুলিতে হয়। তাই মহাত্মা গান্ধী দেশবাসীকে অহিংসার বাণী 
শুনাইলেন, দেশবাসীর ঘরে ঘরে চরকা ও খদ্দরের বাণী প্রচার 
করিলেন। ছুভিক্ষ পীড়িতের চরম দৈন্যের মাঝখানে দীড়াইয়া চরকার 
সত্যরূপ প্রফুল্লচন্দ্রের চক্ষেও প্রকট হইয়া উঠিল। দেশের অর্থনৈতিক 
মুক্তির একটি প্রধান অবলম্বন রূপে চরকা ও খদ্দরের বাণী প্রচারের 
মহৎ ব্রত তিনি জীবনে বরণ করিয়া লইলেন। 

১৯২১ সালে শু'ড়া সেবাসমিতির বাৎসরিক অধিবেশনে তিনি 
স্পষ্টই স্বীকার করেন যে, যখন মহাত্ঝা গান্ধী চরকার বাণী প্রচার 
করিলেন, তিনি ইহার কার্য্যকারিতায় সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছিলেন । 
কিন্তু খুলন। ছুতিক্ষের অভিজ্ঞতার ফলে তিনি স্বীকার করিতে বাধ্য যে, 
চরকাই এই সকল ছুঃস্থ নরনারীর ছুঃখমুক্তির একমাত্র উপায়। এ 
বংসরই খুলনা রিলিফ কমিটির সমক্ষে চরকা ও তীতের কার্ধ্যকাঁরিতা 
সম্পর্কে তিনি বলিয়াছিলেন“হুিক্ষ-গীড়িতের মধ্যে চরকা ও তাত 
প্রচলন করা হইলে তাহাদের যথার্থ স্থায়ী উপকার করা হইবে । দেড় 
বংসর যাঁবৎ চরকার বিষয় বিশেষ চিন্তা করিয়া এই সিদ্ধান্তে উপনীত 
হইয়াছি যে, বঙ্গের প্রায় বার আন! লোক অধিকাংশ সময় আলঙ্যে 


মনীষী গ্রফুম্নচ্জ ৮৭ 


০4-2৫-5525 
কাটায় ; তাহাদের পক্ষে চরকা সপ্তীবনী স্ুধা-্বূপ। যে কোন লোক 
অবসর সময়ে চরক! কাটিয়া মাসিক দুই টাকা! আয় করিতে পারে। 
ফলে চরকা আমাদের মহোপকারী জিনিষ, তাহাতে আর কোন 
সন্দেহ নাই ।” 

্রফুল্লচন্দ্রের সহিত মহাত্মা গান্ধীর গভীর বন্ধুত্বের কথা আমরা 
পূর্ব্বেই বলিয়াছি। প্রফুল্লচন্দ্র তাহার “আত্মচরিতে” একস্থানে 
বলিয়াছেন__কৌগীনধারী মহাত্মা গান্ধী আমার শ্রদ্ধার পাত্র । বস্তুতঃ 
মহাত্মা গান্ধীর বিরাট ব্যক্তিত্ব চরকা ও খদ্দর প্রচার সম্পর্কে প্রফুল্ল- 
চক্্রকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দান করিয়াছিল। ১৯২২ সালের ১৫ই 
জানুয়ারী বোম্বাই নগরীতে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের আহ্বানে 
“মালবীয়া কনফারেন্স” নামক যে বৈঠক বসিয়াছিল, উহাতে প্রফুল্লচন্্ 
উপস্থিত ছিলেন । সেই সময় তিনি গান্ীজীকে এই প্রতিশ্রুতি 
দিয়াছিলেন যে, তিনি দেশে চরকা ও খদ'র প্রচলনের জন্য যথাসাধ্য 
চেষ্টা করিবেন। অসাধারণ সংগঠন শক্তি ও গঠনমূলক কর্মপন্থা 
সম্পর্কে মনের বিশেষ আকর্ষণ-_চরিত্রে এই ছুইটি বৈশিষ্ট্য থাকার 
ফলে খন্দর ও চরকা' প্রচারে সেদিন বাংলাদেশে প্রফুল্লচন্দ্রই বোধ হয় 
যৌগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন । গান্ধীজীকে প্রদত্ত এই প্রতিশ্রুতি 
সাধ্যাতীতভাবেই তিনি রক্ষা করিয়াছিলেন । 

এই মিলনের পূর্ব হইতেই প্রষুল্চ্্রচরকার উপকারিতা উপলক্ধি 
করিয়াছিলেন। ছুততিক্ষ-উপপ্রত অঞ্চলের স্থানে স্থানে তিনি কাটুনি সংঘ 
গড়িয়া তুলেন। এখন হইতে তাঁহার কর্মধারা নৃতন গতিবেগ লাভ 
করিল । খুলনার বিভিন্ন পল্লীতে নিঃস্বার্থ কম্মীদলের পরিচালনায় কা্ুনি 
দংঘ গঠিত হইল। সত সংগ্রহ ও খদ্দর প্রচারের জন্ত কর্মকেন্্র খোল 


৮৮ মনীষী গ্রফুচজজ 





সাপ সপ পাপী পপি সিকি 


হইল। তাহার উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও অর্থসাহায্যে বাংলার ছুইজন 
কৃতী সম্তান প্রফুল্চন্দ্রের প্রিয় ছাত্র ডাঃ প্রুল্লচন্্র ঘোষ ও হরিপদ 
চট্টোপাধ্যায় ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, প্রীনগর, সিরাজদিয়া 
প্রভৃতি থানায় চরক৷ প্রচলন দ্বারা শুদ্ধ খাদি উৎপাঁদনের কার্ষ্যে 
আত্মনিয়োগ করিলেন। সতীশচন্দ্র দাশ গুপ্তের নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গে 
আত্রাইতে একটি বিশাল খাদি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হইল। বিভিন্ন স্থানে 
না প্রদর্শনী ও সুতাকাটা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হইতে লাগিল । নৃতন 
উৎসাহ) নব উদ্দীপনার একটি প্রবল আত জাতির উপর দিয়! প্রবাহিত 
হইল। পল্লীর শাখাকেন্দ্রগুলি জেলা-প্রতিষ্ঠানের সহিত যুক্ত হইয়া 
বঙ্গদেশে একটি কেন্দ্রীয় খাদিপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিল। প্রফুল্লচন্্র উক্ত 
প্রতিষ্ঠানের সাহায্য কল্পে “প্রফুল্লচন্্র রায় ই্রাষ্ট নামে একটি ট্রাষ্ট গঠন 
করিয়া উহার হস্তে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেন । 

সেদিন সংগঠন শক্তিতে বাংলা অন্য কোন প্রদেশ অপেক্ষা পশ্চাংপদ 
ছিল না। প্রফুল্পচন্্র যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করিতে জানিতেন। তাই 
সমস্ত কেন্দ্রেই খাদি প্রচার-কার্ধ্য পরিচালনা-গুণে ঘড়ির কীটার মড় 
চলিতে লাগিল। আর এই কার্য্যের পশ্চাতে রহিল তাহার ব্যক্তিত্বের 
প্রভাব ও বিপুল অর্থ সাহাষ্য। তাহার অজীর্ণ রোগগ্রন্ত ক্ষীণদেহ 
লইয়া তিনি যে শুধু বাংলাদেশে খদ্দরের বাণী প্রচার করিয়াছেন, তাহাই 
নছে। তিনি খাদির বার্তা লইয়। প্রায় সমগ্র ভারত পরিভ্রমণ করেন। 
মাছুরা, কোকনদ, উৎকল, অন্ধ, বোম্বাই প্রভৃতি স্থানে খাদির শুভ বার্তা 
উদ্দান্তকঠে তিনি ঘোষণা। করিয়াছিলেন । . 

১৯২৪ সালে কারামুক্ত হইয়! মহাত্মা গান্ধী প্রফুল্পচন্দ্রকে যে তার 
কিরৈম,. তাহার উত্তরে প্রফুল্পচন্তর অন্যান্য কথার মধ্যে এ কথা.স্পষ্টই 





মনীমী প্রহচজ ৮ 
"স্বীকার করিয়াছিলেন যে, যতই তিনি খদ্ধর প্রচার সম্পর্কে কার্ধ্ে 
অগ্রসর হইতেছেন, ততই তাহার এই ধারণা বদ্ধমূল হইতেছে যে, 
চরকাই জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির একমাত্র উপায়--[19 10016, 
100%7০5%01 ] জ01] 11) 01119 0179061010১ 009 17016 001011)060 


1800 109090717)€ 090 101 000911:8, 1163 0139 90018027010 
891%8/0101) 01 101)09,. 


অস্পৃশ্তত৷ সম্পর্কে প্রফুল্লচন্্র 

আমাদের চামার, জোলা, তাঁত, নাপিতেরা আবহমানকাঁল হইতে 
সেই একঘেয়ে পৈতৃক ব্যবসায় করিয়া আসিতেছে । তাহাদের জীবনে 
কোন পরিবর্তন নাই_-আনন্দ নাই। আমাদের কতকগুলি শ্রমশিল্পী 
অস্পৃশ্য জাতীয়, এবং তাহারা যে ভাবে দিনের পর দিন পৈতৃক ব্যবসায় 
চালায়, তাহাতে তাহাদের অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা 
নাই."*আমাদের মধ্যে যে চামার, সে চিরকালই চামার থাকিবে, এবং 
তাহার সন্তান সম্তুতির সমাজে কোন কালে মর্যাদা লাভের সম্ভাবনা 
নাই- প্রফুল্লচন্দ্র তাহার “আত্মচরিত” এ এই কথ বলিয়াছেন। 

অ্পৃশ্ত জাতি জাতির একটি বিরাট অংশ ব্যাপিয়৷ অনড় অচল ভাবে 
ইহার! অবস্থান করিতেছে । ইহাদের জীবনের গতিপথ রুদ্ধ, মানসিক 
বিকাশের ক্ষেত্র অত্যন্ত সীমাবদ্ধ--উন্নতির সম্তাবন! বৈচিত্র্যহীন ও 
্থপরিসীম। যদিই ব৷ ছুই একজন বৈচিত্র্যময় জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে 
'ছিটকাইয়! পড়ে, ভাহার! স্বজাতীয়ের আনুগত্য স্বীকার করিতে লজ্জা ও 
অগৌরব অনুভব করে। হাজার হাজার বৎসর পূর্বে যে সামাজিক ও 
অর্থ নৈতিক বনিয়াদের উপর তাহারা দীড়াইয়াছিল, ছুই একটি ব্যতিক্রম 


৯ মনীষী প্ররসুষ্লচন্্র 


বাদে, নৃতত্ব ও সমাজতত্বের গবেষণার বিশুদ্ধ উপাদান হিসাবে আজও 
তাহারা একই স্থানে ও প্রায় একই অবস্থায় দীড়াইয়া৷ আছে। জাতির 
একটি প্রগতিশীল অংশ যখন পৃথিবীর দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থা ও 
ভাবধারার সহিত আপনাকে মানাইয়া লইয়া আগাইয়া চলিবার জন্য 
ছটফট করিতেছে, তখন এই স্তব্ধ নিশ্চল জড়-প্রকৃতি মানুষের 
বিরাট দল জাতির অগ্রসর অংশটিকে ছুরনিবার আকর্ষণে পিছনে টানিয়া 
রাখিয়! তাহার অগ্রগামীগতিকে কেবলই মন্থর করিয়। দিতেছে । 

অন্যদেশে ধানকাট! দীড়টান! মজুর একদিন ফাদার আব্রাহাম 
লিঙ্কনের গৌরবময় পদমর্যাদা লাভ করে। গরুর রাখাল ভূতত্ববিদ 
হয়, মুচি ধর্মমগ্রচারক হয়, জুতা সেলাইকার রাষ্ট্রনায়ক হয়, ব্যাঙ্কের 
ঝাড়ুদার উল্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পদলাভের আশ! পোষণ করে। 
কিন্তু সাধারণভাবে আমাদের দেশে শিক্ষা, মানসিক উৎকর্ষ, রুচি ও 
শালীনতা যাহাই হউক ন| কেন, মুচি মুচি থাকিয়া! যায়। একজন 
পেরিয়ার জীবনের পরিসর কখনই বিস্তুততর হইতে পারিবে না। 
ঝাড়,দ্রার সারা জীবন ঝাড়, দিয়া, জীবনভোর বাড়ুর স্বপ্ন দেখিয়া 
মরিবার সময় পুত্রকে এ ঝাড়রই ওয়ারেশ রাখিয়া যাইবে । এরা যেন 
মক্ষি জগতের নপুংসক শ্রমিক-গোষ্ী-_-পরিশ্রমের ক্লান্তিতে এদের জীবন 
ঝিমাইয়া আসে, কিন্তু নব নব রসের আন্বাদনে--নব নব স্থৃপ্টিতে 
ইহাদের জীবন বৈচিত্র্যময় ও সার্থক হইয়। উঠে ন!। 

বস্তুতঃ অশ্পৃশ্যত৷ বুদ্ধি ও ক্ষমতার অপচয় ঘটাইয়া পরোক্ষে 
সমাজের যে প্রভূত ক্ষতি করিয়াছে, তাহ! প্রফুল্লচন্দ্রকে ব্যঘিত 
করিয়াছিল। অশ্পৃশ্ততার ব্রিরাট অংশ ব্যাপিয়া কত সম্তাবিত 
বৈজ্ঞানিক ও রাজনীতিক তাহার সন্তাবনাশৃন্ত জীবনের গ্লানি 


পাপা শীট শিল্পি 





মনীষী গ্রফুল্লচন্দ্র ৯১ 


বহন করিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলিয়! পড়িয়াছে, কত সাহিত্যিক প্রতিভা 

অবজ্ঞ! ও অবহেলার হিমবায়ু স্পর্শে শুকাইয়া গিয়াছে-_তাহার 
সংবাদ আমরা রাখি না। কিন্তু অন্য জাতির জীবন ' দৃষ্টে এই ক্ষতি যে 
আদৌ কাল্পনিক নহে, -তাহা! আমরা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। 
প্রফুল্লচন্দ্র বলিয়াছেন__একজন পিট আল” অব চ্যাথাম হইতে পারেন । 
সাহিত্য জগতে একজন কসাইএর পুত্র “রবিনসন ক্রশোর” প্রসিদ্ধ 
গ্রন্থকার হন, জেলের একজন হীন ব্যবসায়ী “পিলগ্রিমস প্রোগ্রেস” বই 
লিখিতে পারেন, কিন্তু আমাদের চামার, জোলা, তাতী-_ এর! যে 
তিমিরে সেই তিমিরে। 


প্রফুল্লচন্দ্র স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করিয়া ছিলেন যে, অশ্পৃশ্ঠতা জাতীয় 
জীবনের সর্বপ্রকার উন্নতির পরিপন্থী । অজ্ঞ, মূর্খ, দীনতার মৌতাতে 
বিমধরা, অত্যাচার ও নিপীড়নে অবসন্ন ও স্তম্ভিত জাতীয় জীবনের এই 
বিরাট অংশটিকে সচল, সক্রিয় এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করিতে না 
পারিলে, মুষ্টিমেয়ের চীৎকার, আন্ফালন ও অন্য সর্বপ্রকার লঘু প্রচেষ্টা 
জাতির কল্যাণ সাধনে একেবারেই নিরর্৫থক হইবে । ১৯১৮ সালের 
ডিসেম্বর মাসে ভারতের জাতীয়তাবাদীদিগের সমাজ সম্মেলনে (100190 
19610081188 90019] 00219197006) তিনি স্পষ্ট ভাষায় তাহার 
অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলিয়াছিলেন আমরা যখন এক 
জাতিত্বের বনিয়াদে ভারতের রাজ-নীতিক পুনর্গ ঠনের স্বপ্ধে বিভোর 
হইয়া আছি, তখনই জাতির বিভিন্ন স্তর ও সম্প্রদায় হইতে অনৈক্যের 
সুর ধ্বনিত হইতেছে । রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্তা ওতপ্রোত 
জড়িত। তাই সামাজিক সমস্া অবহেল! করিয়া রাজনীতিক সমস্যার 
সমাধান করিতে যাইয়! রাজনৈতিক প্রগতি সামজিক বাধায় ঠেকিয়া 


৯২ মনীষী গ্রসু্নচ্তর 
অচল হইয়া পড়িতেছে। আজও আমাদের দেশে বার রাজপুতের 
তের হাড়ী'। ৫০* কংগ্রেস প্রতিনিধির জন্য ৫০০ রান্না ঘর দরকার 
হয়। ব্রাহ্মণের অগ্নিপক্ক খান্ে কোন নীচ জাতীয় লোক দৃষ্টি দিলে, 
তাহা অপবিত্র হয়। আমরা বরফ খাই, লেমনেড খাই, সমাজে কেহ 
বিশেষ সম্মান লাভ করিলে সব জাত মিলিয়া ভোজের সভায় আসর 
জমাই, অশ্পৃশ্যের হাতে খাবার খাই। কিন্তু একজন অস্পৃশ্য চৌকাঠ 
মীড়াইলে ঘরের জল ফেলা যায়, বিবাহ শ্রাদ্ধ প্রভৃতি সামাজিক অনুষ্ঠানে 
মুসলমান বা নীচ জাতীয় হিন্দুর সহিত একত্র আহার করিলে, তখনই 
আমাদের জাতিচ্যুত করা হইবে। 
_ অশ্পৃশ্ঠতা মানবতার অপমান-_এ সত্যও প্রফুল্লচন্দ্র দেশবাসীকে 
বুঝাইতে চাহিয়াছিলেন। একটি কুকুর বিড়াল আমাদের গৃহে ষে 
ম্যাদাটুকু পায়, এক জন অশন্পৃশ্য মানুষ হইয়াও তাহ! পায় না। 
তীহার অসংখ্য বক্তৃত। ও বনু প্রবন্ধে এই অ্পৃশ্য জাতি সম্পর্কে তাহার 
গভীর সমবেদনা, এই নির্ধ্যাতিত অধঃপতিত মুক জনসাধারণের উন্নতির 
জন্য তাহার আন্তরিক ব্যাকুলতা সুন্দরভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে। 
একস্থানে তিনি বলিয়াছেন__“মান্ুষ মানুষকে ছয় না। ইহার চেয়ে 
যে আর কিছু পাপ থাকিতে পারে, তাহা আমার কল্পনাতীত। 
ইহ। অপধর্্, অধর্ম, কুধর্্ম। বিড়াল কুকুর ঘরে ঢুকিতেছে, তাহাতে 
দোষ হয় ন; কিন্তু যদি একজন তথাকথিত অশ্পৃশ্ত গৃহে প্রবেশ 
করে অমনি হাড়ি ফেলিতে হইবে ; যেন অশ্পশ্ততারপ বিষ অঞ্জুনের 
শরের হ্যায় ভাতের হাঁড়ি ও জলের কলসীর ভিতর আসিয়! প্রবেশ 
কুরিল।”& তাহার জীবনের সর্বেবাত্তম অস্তিম কামনা এই অধঃপত্িত 
* আচার্য্য বাণী--২য় ভাগ পৃঃ ১৩৭। 





মনীষী প্রফু্চন্জ ৯৩ 


প্্িপস্ 


জাতিকে অবলম্বন করিয়াই অভিব্যক্ত হইয়াছে । কি গভীর সমবেদনায় 
তিনি বলিয়াছিলেন £_- 

“যখন আমার দিন ফুরিয়ে যাবে, তখন আমি যুগ যুগ ধরে বেঁচে 
থাকতে চাইব তাদেরই মাঁঝে, যারা অন্যায়, অত্যাচার, দারিদ্র্য ও 
অশিক্ষার বিরুদ্ধে চলবে সংগ্রাম করে, যতদিন না আমার নির্যাতিত 
দেশ জননীর ললাট থেকে মুছে যায় কলঙ্ক-কালিমা 1” 


জাতীয়তাবাদী প্রফুনপচন্দ্ 


অধ্যয়ন-অধঠাপন! রত বিজ্ঞানের সাধনায় ধ্যানমগ্ন বৈজ্ঞানিক 
প্রফুল্পচন্দ্রকে আমরা দেখিয়াছি । ছূর্দাশামগ্ন -বাঙ্গালীর হূর্গতির কথা 
ভাবিতে ভাবিতে বৈজ্ঞানিক প্রষুগ্লচন্্রকে আমরা ব্যবসায়ী হইয়া 
উঠিতে দেখিয়াছি। সমাজের অপাংক্তেয় নিগীড়িত অশ্পৃশ্য জাতির 
অত্যাচারের প্রতিবাদে তাহার কণ্ঠকে উদ্দাতত হইয়! উঠিতে আমরা 
দেখিয়াছি। আবার ছুভিক্ষে, জল প্লাবন, ঘূর্ণীবাত্যায় বিপর্ধ্যস্ত হুর্গত 
জনসাধারণের অশেষ ছুর্দশীর মাবখানে ঠাড়াইয়া তাহার কল্যাণহক্তে 
তাহাদের সমস্ত ছুঃখের গ্লানি মুছাইয়া দিতেও প্রফুন্তচজ্জ্রকে 
আমরা দেখিয়াছি। আজ বিংশ শতাব্দীতে জাতীয় চেতনার পুর্ণ 
পরিণতির ফলে আন্তর্জীতিকতার বিরাট ক্ষেত্রে মানব সমাজ যখন 
মিলিত হইতে চলিয়াছে, তখনও আত্মনিয়ন্ত্রীধিকার-শুন্য, নাবালক এবং 
পরকল্পিত ও পরের হাতে বাঁটিয়া দেওয়া মঙ্গলের বোঝা বহিয়া পরের 
অভিভাবকত্বে ঝিমাইয়া' ঝিমাইয়া মরিতেছে যে জাতি, তাহার বেদনা 
কি প্র্রফুল্লচন্দ্রের হৃদয় স্পর্শ করে নাই? জাতীয় আন্দোলনের 
পুরোভাগে প্রফুললচন্দ্ের স্থান তো আমরা দেখিতে পাই না! তাহার 


৯৪ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র 


জীবনের এতদ্সম্পকাঁয় তাৎপর্ধ্টটুকু বুঝিতে চেষ্টা করা_এখানে 
মোটেই অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। 
কেন তিনি জাতীয় আন্দোলনে সম্পূর্ণ ভাবে জড়াইয়া পড়েন নাই, 
তাহা তাহার নিজের কথায় ব্যক্ত হইয়াছে । ১৯২৯ সালে দেশবন্ধু 
চিত্বরঞ্জন দাস গ্রেপ্তার হইলে প্রফুল্লচন্দ্র তাহার পত্বী বাসস্তী দেবীকে 
সমবেদন! জ্ঞাপন করিয়। এক খানি পত্র লিখেন। এ পত্রে একস্থানে 
তিনি লিখিয়াছিলেন_-“আমার উদ্দোশ্ঠ ছিল্স, আমার প্রিয় আলোচ্য 
বিষয়ের মধ্য দিয়াই আমি আমার দেশের সেবা করিব। আমাদের 
জীবনের উদ্দেশ্য এক। ভগবান জানেন আমার আর কোন উদ্দেশ্য 
নাই।”, বাংলার প্রসিদ্ধ কংগ্রেসকম্মী ডাঃ প্রফুল্লকুমীর ঘোষ ও হরিপদ 
চট্টোপাধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের জন্য তাহার অনুমতি চাহিতে 
আঁসিলে তিনি বলিয়াছিলেন_-“৩০ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ৩০ জন 
উপযুক্ত রাসায়নিক এখনও হয় নাই। দেশের কাজ দেশের নানা 
বিভাগে নীন৷ জনের দ্বারা করিতে হইবে । তোমাদের মত প্রতিভাসম্পন্ন 
কৃতবিদ্ধ যুবকের উপর দেশের খ্যাতি নির্ভর করিতেছে ।” 
্রফুল্লচন্দ্রের উপরোক্ত মন্তব্য হইতে তাহার জীবনের মহত্তম 
আদর্শ আমর সম্যক উপলব্ধি করিতে পারি। স্বদেশে জাতীয় 
সমৃদ্ধি বিজ্ঞানের ভিত্তির উপর গড়িয়া উঠিয়াছে। দেশকে বিজ্ঞানে 
সমুন্নত করিয়া না তুলিলে অগ্রসর জাতিগুলির লাগাল ধরিয়া 
তাহাদের সহিত সমান তালে চলা! আমাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব । 
এই ধারণার বশবর্তাঁ হইয়া প্রফুল্লচন্দ্র জীবন আরম্ভ করেন। আর 
তাহার মৃত্যুকাল পর্ধ্যস্ত ঠাহার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল বিজ্ঞান-সাধনা। 
তিনি বহু জন-মঙ্গলকর কার্যে ষোগদান করিয়াছেন সত্য ; কিন্তু' তাহ 


মনীষী প্রসুষ্লাচন্্র ৯৫ 


তাহার বিজ্ঞান-সাধনাকে অব্যাহত রাখিয়!। কিন্তু জাতীয় আন্দোলন ? 
নিরস্কুশ তাহার দাবী-_অত্যন্ত অসহিষু ও নিষ্ঠুর তাহার আহ্বান। জাতির 
মুক্তিকামীকে তাহার প্রাত্যাহিক জীবনের প্রতিমুহূর্তে ধ্যানে ও কর্মে 
দেশ মাতৃকার এঁ্য্যময়ী মুদ্তিকে অন্তরে ফুটাইয়া তুলিতে হয় এবং. 
জীবনের সকল কামনা _সকল প্রয়োজন তাহার পায়ে নিবেদন করিয়া 
একান্ততাবেই দেশেরই সেবক হইয়! উঠিতে হয়। ন্থৃতরাং বৈজ্ঞানিক 
প্রফুল্লচন্দ্রের পক্ষে জাতির রাজনৈতিক মুক্তির প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ 
দেওয়া সম্ভব হয় নাই। প্রথম জীবনে বিজ্ঞান দেবীর নিকট তিনি 
আত্মনিবেদন করিয়াছিলেন। তীহাকে কখনও তিনি পরিত্যাগ করিতে 
পারেন নাই। 

অধ্যাপকের শাস্তিপুর্ণ জীবন তিনি যাপন করিয়াছিলেন । কোলাহুল- : 
মুখর সংসারের ক্ষেত্র হইতে দুরে বিজ্ঞানের সাধনায় জীবনের 
অধিকাংশ কাল তিনি অতিবাহিত করেন। তাহার ফলে তীহার মনের 
গঠন জাতীয় আন্দোলন ও তদানুসঙ্জিক হাঙ্গামা ও গণ্ডগোলের ঝরি 
পোহাইবার সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হইয়া পড়িয়াছিল। তিনি নিজে একস্থানে 
বলিয়াছেন_-“আমি কখনও মনে করি নাই যে, আমার স্বভাব ও 
প্রবৃত্তিতে রাজনীতিক হইবার যোগ্যতা আছে।” 

কিন্তু গঠন-মূলক কর্মপন্থা চিরদিনই তাহার মনকে আকৃষ্ট 
করিয়াছে। ভারতের জাতীয় হ্হাসভা কতৃক বিঘোষিত গঠন মূলক 
কাজগুলি তিনি স্বয়ং উদ্যোগী হইয়া গ্রহণ করিয়! ছিলেন। অশ্পৃশ্যতা 
বঙ্জন, সাম্প্রদায়িক মিলন, এবং খদ্দর ও চরকা প্রচলন-__এই 
তিনটি গঠনমূলক কর্মপস্থাকে গান্ধীজী স্বরাজের তিনটি স্তস্তরূপে বর্ণন| 
করিয়াছিলেন। খন্দর ও চরক! প্রচার এবং অন্পৃশ্যতা বজ্জন সম্পর্কে 


৯৬ মনীষী - প্রফুল্ল 
্রফুল্পচন্জের আগ্রহ, উদ্ভম ও প্রচেষ্টার কথা আমরা পূর্বেই বলিয়াছি। 
সাম্প্রদায়িক সমস্যা! সম্পর্কে প্রফুল্লচন্দ্র বেশী কিছু বলেন নাই। তিনি 
বোধ হয় লক্ষ্য করিয়াছিলেন- হিন্দু মুসলমান বিভেদ আমাদের জাতীয় 
জীবনে কোনদিনই স্বয়ংক্রিয় ছিল না। সক্কীর্ণ রাজনৈতিক কাঁরণে উহা 
যেন মূলহীন গাছের মত আকস্মিকভাবে আমাদের সমাজদেহে চাপিয়া 
বসিয়াছে, এবং ঈর্ষা অনুয়া প্রভৃতি হীনবৃত্তির রসে পুষ্ট হইয় জাতির . 
বুকে শিকড় ছাড়িতে আরম্ভ করিয়াছে। ভারতের নিজন্ব ধারায় সর্বব 
জাতির মিলনক্ষেত্র এই ভারতে একটি মহাজাতি সম্ভাবনার যে বিরাট 
ডিন্বে জঙ্গের প্রতীক্জা করিতেছিল, বিভ্রান্ত নেতৃত্বের অসহিষ্ণুতা অসময়ে 
তাহাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া সেই অপরিপুষ্ট মহাজাতির অঙ্গগুলিকে' 
সন্গ্রদায়গত আংশিক চেতনার ভিত্তিতে উদ্বোধিত করিতে চাহিয়াছে। 
পনি গভীর বেদনার সহিত আরও বোধ হয় লক্ষ্য করিয়াছিলেন__ত্যার্গ 
উদ্দারতা, মানসিক বিস্তৃতি, বীর্ধ্যবস্তা প্রভৃতি যে সকল গুণের সমাবেশ 
মানুষকে নেতৃতের বরদীয় আসমে প্রতিষ্ঠা করে, তাহার অভাব বশতঃ 
কতকগুলি লোকের মধ্যে অজ্ঞ জনসাধারণের অমার্জিত মনে ঈর্ধযা, হিংসা, 
জিঘাংসা প্রভৃতি হীনবৃত্তিকে উদ্ানি দিয়া মেতৃত্বরক্ষার অপচেষ্টা প্রবঙ্গ 
হইয়া উঠিয়াছে। বিভ্রান্ত জননায়কদিগের অপচেষ্টায় মানুষ যেখানে 
ঈর্ঘ্যা-বিছিষ্ট এবং হিংসা ও জিঘাংসাঁপরায়ণ হইয়া উঠিয়াছে, সেখানে 
তাহার মত শান্তিপ্রিয়, সমঘর্শী বৈজ্ঞানিকের কথা বলা বিডুম্বনাই 
হইবে। বস্তুতঃ সাম্প্রদায়িক সমস্যা সব্রিয় রাজনীতির অন্তভূর্ত। 
প্রফুল্লচন্দ্র সক্রিয় রাজনীতি বজ্ঞন করিয়া চলিতেন। 

কিন্তু যখনই কোন রাজনীতির মঞ্চ হইতে অপ্রত্যাশিত ও আবস্থিক 
ভাবে তাহার নিকট আহ্বান আসিয়াছে, সে আহ্বানে প্রফু্লচ্জ 


মনীষী গ্রফুল্চন্্র ৯৭ 


তৎপরতার সহিতই সাঁড়। দিয়াছেন। ১৯৯৯ 'সালে ফেব্রুয়ারী মাসে 
'রাউলাট আইনের' প্রতিবাদে কলিকাঁত| টাউন হলে এক বিরাট সাধারণ 
সভার অধিবেশন হয়, এই সভায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতি 
. ছিলেন। প্রফুল্লচন্ত্র শ্রোতা হিসাবে সেই জনতার পশ্চাতে দীড়াইয়! 
ছিলেন। সকলে তাহাকে দেখিতে পাইয়া সম্মুখে পাঠাইয়া দিল । 
দেশবন্ধু দাশের পাশেই ঠিনি আসন গ্রহণ করেন। সকলের বিশৈষ 
আগ্রহে প্রফুল্লচন্দ্র বিপুল হর্ধধ্বনির মধ্যে উঠিয়া দড়াইলেন। 
প্রফুল্লচন্দ্র ভাবের অতিশয্যে কিছুক্ষণ কথ! বলিতে পারিলেন না। 
তাহাকে অভিনন্দিত করিয়া চারিদিকে বিপুল আনন্দোচ্ছাস ও' অবিরত 
বন্দেমাতরম্‌ ধ্বনি হইতে লাগিল । সেই সভায় তিনি বলিয়াছিলেন__ 
“] 1195%0110% 0116 101008986 1008, 0112] স1]111956 60 8801985 
11619 609 07696106০৮9. 107 8) 8170019 1770106176, [1799 
0010709 89 9 10)616 91990086011 8100 8 118) .01 009 
[19001860000 11991 61780 01)616 876 00908910178 10101) 
00177800 0190 1 81111 19950 1777 6০86 6096 60 ৪669100. 6০ 
0100 091] 01100 00011). 
১৯২৫ সালে কোকনদে জাতীয় মহাসভার বাধিক অধিবেশন হয়। 
মহম্মম আলি এ সভায় নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। দর্শক ও 
প্রতিনিধি হিসাবে প্রফুল্লচন্দ্র এ সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। সভাপতির 
অন্ন্পস্থিত কালে তাহার ইচ্ছায় এবং প্রতিনিধিদিগের সমর্থনে প্রফুল্ল 
চন্দ্রকে কিছু সময়ের জন্য এ রাষ্থীয় মহাসমিতির অধিবেশনে সভাপতিত্ব 
করিতে হইয়াছিল। প্রফুল্লচন্্র রাষ্্ীয় সমিতির কয়েকটি জেল! সম্মেলনে 
যোগদান করেন। ১৯২৩ সালে খুলনায়, ১৯২৪ সালে উৎকলে, এবং 


১৯২৭ সালে সাতক্ষীরা রাষ্রীয় সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। 
৭ 


৯৮ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র 





প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনীতিক ধারণ! যাহাই হউক না কেন, দেশবাসী 
প্রফুল্লচন্দ্রকে কত গভীর শ্রদ্ধা করিত এবং তিনি দেশবাসীর নিকট কি 
ভাবে প্রতিভাত হইতেন, তাহা এই সকল কার্ষ্য দ্বারা, আমরা সম্যক 
উপলব্ধি করিতে পারি। কিন্তু জাতির মুক্তি আন্দোলন সম্পর্কে তাহার 
মনের সম্পূর্ণ পরিচয় উহার দ্বারাই আমরা পাই না। মহীপুরুষদিগের 
চিন্তলেকি সমুদ্রের ন্যায় বিশাল। এখাঁনে ভাবের তরঙ্গ উঠে। তাহার 
যে গুলি সংসারের তটে আসিয়৷ ভাঙ্গিয়া পড়ে, তাহাই আমরা দেখিতে 
পাই। তাহা দিয়াই বিক্ষোভের স্বরূপ আমরা উপলব্ধি করিতে 
চেষ্টা করি। 

১৯২১ সালে ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ ও নদীয়ার হরিপদ চট্টোপাধ্যায় যখন 
জাতীয় আন্দোলনে যোগদান করিবার জন্য তাহার অনুমতি চাহিতে 
আসিয়াছিলেন, প্রফুল্লচন্দ্র প্রথমে তাহাদিগকে প্রতিনিবৃত্ত করিতে 
চেষ্টা করেন। কিন্তু তাহারা যখন বলিলেন_-“ডাঁক এলে, তখন 
আর কেউ ঘরে থাকতে, পারে না। দেশের ইতিহাসে এমন দিন 
আর আসে নি।” তখন এই সংযত বৈজ্ঞানিকের হুদয় উদ্দেল হইয়া 
উঠিল । তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে উচ্ছৃসিত স্বরে বলিয়া উঠিলেন-_ 
“এমন স্বার্থত্যাগী সন্তানকে বক্ষে ধারণ ক'রে বঙ্গ জননী গৌরবিনী। 
আশীর্বাদ করি, তোমর! সাঁফল্য লাভ কর।” 

আবার ১৯২৫ সালের জুন মাসে গান্ধীজীর বঙ্গভ্রমণ কাঁলে আচার্য্য 
প্রফুল্লচন্দ্র খুলনাবাসীর পক্ষ হইতে তীঁহাকে সম্বর্ধনা করিবার জন 
যে সময় খুলনায় উপস্থিত ছিলেন, সেই সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের 
সৃত্যু-সংবাদের তার পাইয়া তিনি শোক-মথিত হৃদয়ে কাদিতে কীদিতে 
বলিয়াছিলেন, “বাংলা আজ বিধবা হলো।” তারপর চিত্বরপ্জনের 


মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র ৯৯ 


শসা ছি লামা পালা পাস পাসিলিিপান্ট পালিত ৯ পাটি পি পরস্পর পট পা পাস রিপা পাটিপসটি পাস গাছ তি তি পা পাস ছি ই তিছি ০ ৯ পি পি সি লা পা পাস পা পপ সপাসটিপাস্পি পাপা পাপ ২০ 


চিতাগি যখন নির্্ধাপিত হইল, তখন তাহার স্মৃতিতর্পণে প্রফুললচন্ 
যাহা বলিয়াছিলেন, তাহাতে তাহার সমগ্র বিশাল অন্তরলোক যেন 
ভাষায় রূপায়িত হইয়! বাহিরে প্রকট হইয়া পড়িয়াছিল। তিনি 
বলিয়াছিলেন, “যেন তাঁর চিতাবাষ্প সমগ্র ভারতের আকাশে বাঁতাঁসে 
মিলাইয়! গিয়া, নিঃগ্র/সের সহিত দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়। প্রত্যেক 
ভারতবাসীকে তাহার সুমহান আদর্শে ও অনুরাগে প্রদীপ্ত, প্রতিভ। 
ও প্রেরণায় অন্নুপ্রাণিত, উদ্চদ্ধ ও জাগ্রত করিয়৷ তুলে, ভারতের 
জননীগণ যেন এই প্রকার নন্তানই গর্ভে ধারণ করেন ।” 
১৯২৮ সালে পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে কলিকাতায় 
ভারতের রাহ্ীয় মহাসমিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন হয়। ইহার 
প্রতিনিধি সভায় ভারতের লক্ষ্য “ওপনিবেশিক স্বায়ন্ব শাসন" অথনা 
“পূর্ণ স্বাধীনতা” হইবে-_ইহ! লইয়! প্রবল মতভেদ হয়, পণ্তিত 
মতিনাল ওপনিবেণিক স্বায়্শাসনের পক্ষপাতী, আর তাহার পুত্র 
জহরলাল পূর্ণম্বাধীনতাকামী । প্রকুল্লচন্দ্র তাহার গবেষণাগার হইতে 
পিতাপুত্রের এই অভিনব ছন্দের কথা শুনিলেন। একস্ুরে বাঁধা 
অনেকগুলি বাগ্ঘযন্ত্রের মধ্যে একটি বাজিয়া উঠিলে, অপরগুলিও 
যেমন বাজিয়া উঠে, তেমনি একের মহৰ দৃষ্টে অপর হৃদয়ও মহন্বে 
অন্ুরণিত হইয়া উঠে। সমধন্মী চিত্তের স্বভাবই এইরূপ । প্রফুল্লচন্দ্ 
আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। পরদিন তিনি সভায় যোগদান 
করিলেন এবং প্রকাশ্য সভায় ভাবের বিহ্ব্লতায় জহরলালকে বক্ষে 
জড়াইয়! ধরিলেন। 
১৯২৪ সালে গান্ধীজী কারাগার হইতে মুঁক্তলাভ কারয়। 
গ্রফুল্লচন্দ্রকে যে তার করেন, তাহার উত্তরে প্রফুল্লচন্দ্র যাহা লিখিয়। 


১০০ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্ 





ছিলেন, তাহাতে প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক মনোভাব যেন তাঁর 
অজ্ঞাতেই ফুটিয়া উঠিয়াছে।__ 

“0০1 0116 18 10১ 2 1058] 1080. 60 ৭5912] 8700. ৮00]7 
চড010 67০ 10017) 2100 6901008 7090), 10 18 170% 100 
178 60 10107001106 217 01)117101) 01) 6119 80198001110 01 
00116255198 01 0119 £96010 ০0 00107058106) 60 (0307)0119, 
700৮ 8115 1000]. [1080 79 70617016690 ৮০0 ৪9 0109৮ 11 ৪ 
[90610 01 00 90615199101) 11950 1১901) 89916 01) 01) 
81091 790. 0662, 0197664. 00.00180001%0 07019701170 
9109601)90. 0 50০8. 60০ ৮৪ 60 9৪] 0010 19০9 1998] 
1) 00018 01006 00178100015 811079190.” ( অর্থাৎ প্রত্যেকেই 
কঠিন কণ্টকাঁকীর্ণ পথ ত্যাগ করিয়া স্বরাজের রাজপথ অবলম্বন করিতে 
উৎসুক। ব্যবস্থাপক সভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধি প্রেরণ উচিৎ কি 
অনুচিত, তৎসম্পর্কে কোন মতামত প্রকাশ করা আমার পক্ষে সমীচীন 
নহে। কিন্তু এইটুকু বলিতে পারি--যে উৎসাহ ইহাতে নিয়োগ কর! 
হইয়াছে, তাহার কতকাঁংশ যদি আপনার পরিকল্পিত সংগঠন কার্যে 
নিয়োগ করা হইত, তবে এতদিন স্বরাজের পথ অনেকটা 
নিকটতর হইত )। 

নিপীড়ন ও অত্যাচারের বোঝা মাথায় লইয়া দুরায়িত লক্ষ্যের 
দিকে চাহিয়া দেশসেবার ছূর্গম ও. কণ্টকাকীর্ণ পথে চলিয়াছে 
যাহারা, তাহাদের সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধা ও মমতায় প্রফুল্লচন্দরের 'হাদয় 
ভরিয়াঁ গিয়াছিল। জাতীয় আন্দোলন পার্বত্য নদীর শ্যায় কখনও 
বর্ধার বিরাট প্লাবনের মত দেশব্যাগী হইয়া, কখনও শ্্ীক্সের শীর্ণধারার 


মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র ১৪১ 


মত নামমাত্র বজীয় থাথিয়! নিরবচ্ছিন্ন খাঁরায় বহিয়৷ চলিয়াছে। 
দিনের পর দিন তিনি ইহার গতি লক্ষ্য করিয়াছেন। ব্রিটিশ উদারতায় 
নির্ভরশীল এডিনবারার ছাত্র প্রফুল্লচন্দ্ের রাজনৈতিক মতবাদ জাতির 
অসহায়তা ও দৈন্য এবং ব্রিটিশের অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্য দিয়। 
আমূল পরিবর্তন লাভ করে। বার্ধক্যে এই রোগজীর্ণ স্থবির বৈজ্ঞানিকের 
দেশজৌড়৷ অন্তরে কোন্‌ স্বপ্ন সাফল্যের প্রতীক্ষায় জাগিয়! থাঁকিত ! 
কোন্‌ অনাগত দিনের অরুণোদয়ের রাঙ্গা আলোয় দেশম।ত্বকার 
মহিমময়ী মৃত্তি সর্বন্ষমামণ্ডিত হইয়া ফুটিয়া উঠিবে__-তাহারই কি 
তীব্র আশা-আকাথায় তীহার চিত্তলোক উজ্জ্রল হইয়া উঠি৩__তাহ। 
যেন আমরা স্পষ্টই দেখিতে পাই। এই অরাজনীতিক প্র্রফুল্লচন্দ্রের 
বিরাট ব্যক্তিত্ব এবং অনন্যসাধারণ জনপ্রিয়তা দেখিয়া কোন 
ইউরোগীয় বলিয়াছিলেন-_“গান্ধী আর ছুইজন পি. সি. রায় স্থষ্টি 
করিতে পারিলে, এক বতসরের মধ্যেই স্বরাজ লাভ করিতে 
পারিতেন।” প্রফুল্লচন্দ্র যদি বৈজ্ঞানিক না হইয়া রাজনীতিক 
হইতেন, তিনি নিঃসন্দেহে জাতির পুরোভাগে থাকিয়া সমস্ত সঙ্কটের 
মধ্য দিয়। জাতিকে নুচুভাবে পরিচালনা করিতে পারিতেন। 

এইবার আমর! প্রফুল্লচন্দ্রের রচনাগুলির সমালোচনা করিব, 
আমরা ইচ্ছা করিয়াই তীহার রচনাগুলিকে সাহিত্য আলোচনার 
পৃথক পরিচ্ছেদে সঙ্িবিষ্ট না করিয়া উহাদিগকে তাহার সমাজের মঙ্গল 
প্রচেষ্টার অন্ততুপ্ত করিলাম; কারণ সাহিত্য স্থির বিশুদ্ধ প্রেরণা 
লইয়া এ গুলি লিখিত নহে। রচনাগুলি উদদেট-মু্ক। ্রফুললচন্ত্রে 
্ভবসিদ্ধ সাহিত্যানরাগ তীহার চিন্তার ধরণটিকে সাহিত্য রচনার 
অনুকূল করিয়াই গড়িয়া তুলিয়াছিল এবং যাহাই তিনি রচনা করিয়া! 


১০২ মনীষী গ্রফুল্চন্ত্র 


ছেন, তাহার সাহিত্যিক প্রতিভার স্পর্শে তাহাই সাহিত্যের মাধুর্য্ে 
সমৃদ্ধ তইয়া উঠিয়াছে। 

তাহার রচনাগুলিকে আমরা প্রধানতঃ ছুইভাগে ভাগ করিতে 
পারি--(১) বিজ্ঞান সম্পকীয়ি ও (২) সমাজ সম্পকীঁয়। বিজ্ঞান সম্পর্কে 
তাহার গবেষণা-মুলক" রচনাগুলি বু দেশী ও বিদেশী সাময়িকীতে 
প্রকাশিত হইয়াছে । .“হিন্তু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস” তাহার 
বহু বর্ষের কঠোর পরিশ্রমের ফলম্বরূপ বাহির হইয়াছিল। এই 
গ্রন্থ ও তাহার অন্যান্য রচনাগুলি পৃথিবীর পণ্ডিতমগ্ডলীর উচ্চ 
প্রশংসা লাভ করিয়াছে । ইংরাজী ভাষার উপর তাঁহার কি অসাধারণ 
অধিকার জন্মিয়াছিল, এই সকল রচনা তাহারই উজ্জল দৃষ্টান্ত" 

তাহার সমাজসম্পকাঁয় লেখাগুলি বিশ্লেষণ-মূলক। জাতির 
জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাহার বৈজ্ঞানিকের শুক্র দৃষ্টি সঞ্চালন 
করিয়া তিনি তাহার ক্রটিবিচ্যুতিগুলি . আবিষ্কার করিতে চেষ্টা 
করিয়াছেন এবং যেখানেই কুসংস্কার ও ছূর্নীতির বিদ্ভামানতায় 
সমাজদেহে দুর্বলতার চিহ্ন লক্ষ্য করিয়াছেন, সেখানেই তাহার 
ক্ষুব্ধ অন্তর লেখনীমুখে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে । তাহার লেখাগুলি 
সমাজের সমালোচনায় পূর্ণ। কিন্তু যুক্তি-মূলক রচনার শ্যায় তাহার 
ছন্দ দীর্ঘ এবং গতি প্রশান্ত নহে; তাহার ভাবাঁবেগময় অন্তরের 
ক্ষৌভের স্পর্শে তাহার ভাষা উচ্ছবাসময়, শ্লেষযুক্ত এবং বেগবান । 

বাঙ্গালীর অর্থ নৈতিক জীবনের ক্রমিক অধঃপতন তিনি লক্ষ্য 
করিয়াছিলেন। জাতিভেদ মানুষের জীবনে যে ফক্কীর্ণতা সৃষ্টি 
করিয়াছে এবং জাতীয় এক্য প্রতিষ্ঠায় যে বাধা শ্ৃপ্তি করিয়াছে-_ 


তাহা তাহার চিত্তকে ব্যথিত করিয়াছিল। বস্তুগত দমীক্ষা ইইতে 


মনীষী গ্রফুল্লচন্্র ১৪৩ 


শি পাপ পাপপীসিপাও পাসপপাসিিসেস্পিপসপা স্পা ৮৮ পিল তপন াপিসিপিলীশিপশি স্পেস পিপাসা স্পাতী শী পিপসপপপা পাশিশিপাসপিপিসসপাসিলাস্পাি সাতাশ পপাসিশাশাা শিপাটি টি শাস্পাপিপিসী পাশপাশি 


বিজ্ঞানের জন্ম। এদেশের মনীষা বন্তবিমুখ থাকিয়! সুক্ষ বুদ্ধির 
চুলচের। বিচারের আত্মস্তরিতায় মগ্ন হইয়া পড়িয়াছিল। ফলে, অন্ত- 
মৃধীন চিন্তাধারার সহিত বাহিরের সংসারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় 
সংসারে তাহার আত্মপ্রসারের ক্ষেত্র সঙ্কীর্ণ হইতে সন্কীর্ণতর হইয়া 
পড়িয়াছিল। প্ররফুল্লচন্দ্র জাতির আসন্ন দৈন্যের সম্মুখে দাড়াইয়! 
বাঙ্গালীর শক্তি ও মেধার এই অপরিমেয় অপব্যয়ে পীড়া বোধ 
করিধাছিলেন। সমাজের অস্পৃশ্যতা কণ্টকের ন্যায় তাহার হৃদয়কে 
বিদ্ধ করিত। এই সকল পুষ্জীভূত ক্ষোভ ও বেদনার প্রেরণায় তিনি 
লেখনীধারণ করিয়াছিলেন । “বাঙ্গালীর মস্তিষ্ধ ও তাহার অপব্যবহার,” 
“অন্পসমন্যা” ও “জাতিভেদ” প্রভৃতি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ লিখিয়া' 
তিনি বাঙ্গলীকে উন্নতির পথ নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। তাহার 
“আত্মচরিত” প্রত্যেক দেশবাসীরই অধ্যয়ন করা উচিত। ইহা যে 
শুধু বাঙ্গালীকে প্রেরণা জোগাইবে তাহাই নহে, বনুতথ্যের, সমাবেশে 
ইহা এতই পাত্ডিত্যপূর্ণ যে, মাত্র এই একখানি গ্রন্থপাঠে মানুষের 
জ্ঞানতৃধণ বহুমুখে সম্প্রসারিত হইবে । 

প্রফুল্লচন্্র নিজেকেই দেশের জন্য দান করিয়। গিয়াছেন। সুতরাং 
তাহার আঘিক দীনের কথ] উল্লেখ করা নিশ্রয়োজন।' আত্মস্থার্থকে 
কেন্দ্র করিয়া ষাহার জীবন আবর্তমান, বিপুল আঁক দান তাহার 
জীবনের পক্ষে বড় কথা হইতে পারে। কিন্ত জাতির স্বার্থ কেন্দ্র 
করিয়া প্রফুল্লচন্দ্রের সমগ্র জীবন আবর্তিত হইয়াছিল। আর্থিক দান 
তাহার জীবনের একটি নগণ্য বৈশিষ্ট্য মাত্র । কিন্তু তাহার দানের 
পাত্র ও পরিমাণ দেখিয়া আমরা তাহার দানের স্বরূপ উপলগ্ধি করিতে 


পারি।' তাহার নিজের গ্রয়োনতন অতি মামান্য ছিল। শীমান্য 





১০৪ মনীষী গ্রফুল্লচন্্ 


আহাধ্য এবং ছুইখানি মাত্র ধুতি ও ছুইটি কামিজ হইলেই তাহার 
চলিয়া গিয়াছে। তাহার উপার্জিত অবশিষ্ট বিপুল অর্থ-_তিনি 
জনহিতে দান করিয়া গিয়াছেন। এই দানের পরিমাণের কথা চিন্তা 
করিলে বিস্মিত হইতে হয়। প্রার্থী কখনও বিফল হইয়৷ তাহার 
নিকট হইতে ফিরে নাই। প্রফুল্লচন্দ্র দানেই অর্থের সার্থকতা দেখিয়া- 
ছিলেন, অথবা দান তাহাকে নেশার মত পাইয়া বসিয়াছিল। ছাত্র- 
মণ্ডলীর শিক্ষাব্যপদেশে, দীন-দুঃখী-গীড়িতের সেবায় ও অন্যান্য 
লোকহিতকর অনুষ্ঠানে তাহার মাসিক ব্যরের তালিকা প্রস্তত থাকিত। 
বেঙ্গল কেমিক্যালের কর্মচাবী শরৎচন্দ্র দাদ এ তালিকানুষায়ী অর্থ 
বন করিয়! দিতেন। 

১৮৮৯ সাল হইতে ১৯২১ সাল পর্য্যন্ত প্রফুল্লচন্দ্র বাংলা দেশের 
দীন ছাত্রদিগের সাহীষ্যকল্পে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দান করেন। 
প্রফুল্চন্্রের স্বগ্রামে ১৯১৮ সালে স্থাপিত ও কোম্পানীর আইনানুসারে 
রেজেদ্বীকৃত শিক্ষা পরিষদে (77000861010, 9০০196 ) বেঙ্গল 
কেমিক্যালের ১০১০০০২ টাঁকাঁর শেয়ার এবং ১৯২১ সালে রেজেস্তীকৃত 
কাঁটিপাড়। সেবাশ্রমে ১০০০২ টাঁকার শেয়ার দান করেন। প্রতি 
বংমর--ডিভিডেও. স্বরূপ যে টাকা পাওয়া যায়, তাহ! এডুকেশন 
সোসাইটির কর্তৃপক্ষ রাড়ুলি ও তন্নিকটবর্তী বহু পল্লীর শিক্ষা ও 
জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করেন। ১৯২২ সাল হইতে ১৯৩৭ সালু 
পর্য্যন্ত বিজ্ঞান-কলেজের, পালিত অধ্যাপক হিসাবে তাহার প্রাপ্য 
বেতন বিজ্ঞান-চর্চার উন্নতিকল্পে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিগ্ভালয়ের 
হস্তে অর্পণ করেন। ইহার দ্বারা 'স্তার প্রফুল্লছক্র রিসা্চ 
ফেলোদিপ' নামে বৃত্তির ব্যবস্থা'করা হইয়াছে । উক্ত তহবিলে তাহার 


মনীষী গ্রফুলচন্ত্র ১০৫ 


সিটি পি পিসি লা পালি পো লাই স্টি স্টিল পা পপি পাপী পা পি শর পীর ২০ পাতিল শা্পিনী তি পাটি পা পাঁছ পাত 


মৃত্যুর পূর্বব পর্য্যন্ত ১৩০,০০০২ টাকার অধিক জমা ছিল। এতত্যতীত 
তিনি ১৯২২ সালের মার্চ মাসে “নাগাজ্জুন প্রাইজ” নামে সর্বেবাংকৃষ্ট 
রাসায়নিক গবেষণার জন্য এবং ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে 'আশুতোষ 
প্রাইজ” নামে প্রাণী-বিজ্ঞান ও উদ্ভিদ্-বিজ্ঞান সম্বন্ধে সর্বেবাৎকৃষ্ট 
গবেষণার জন্য দশ হাঁজার করিয়! বিশ হাজার টাঁকা দান করেন। 
বোম্বাই, মাদ্রাজ, নাগপুর, বেনারস, ঢাকা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে 
ধারাবাহিক বক্তৃত! করিয়৷ তিনি যে পারিশ্রমিক পান, তাহ! এসব 
বিশ্ববিচ্ভালয়ে দান করেন। চরকা ও খব্দর প্রচলনের জন্য তাহার 
দানের কথা পূর্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। 

এতদ্যতীত ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাহার 
দানে পুষ্ট হইয়াছে। মোট কথা, তিনি নিজের জন্য বা তাহার ভ্রাতু্পুত্র, 
ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রভৃতির জন্য কপর্দকও রাখিয়া! যান নাই। তীহার 
উপার্জিত সমুদয় অর্থ ই তিনি দান করিয়া গিয়াছেন। 


১০৬ মনীষী প্রফুল্চন্ত্ 


মানুষ প্রুল্লচন্দ্ 

বৈষ্ণব কবি গাহিয়াছেন__“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে 
নাই ।” তিনি যে অর্থে ই এই বাক্য প্রয়োগ করিয়া থাকুন, আমরা ইহার 
দ্বারা বুঝি__মনুষ্যত্ই জীবনের সর্বোত্তম গৌরব। বৈজ্ঞানিক দস্থ্য 
হইতে পারেন, সমাঁজ-সেবা যশোলিগ্লার দ্বারা মলিন হইতে পারে, 
সাহিত্যিকের চরিত্রগত অন্য দোষ থাকিতে পারে; কিন্তু মনুষ্য 
অকলঙ্ক_ ইহা! সূর্য্ের সায় দীপ্তিশীল-_ইহার সংস্পর্শে জীবনের সমুদয় 
বৈশিষ্ট্যই প্রোজ্জল ও দীন্তিশীল হইয়া উঠে। 

বস্তুতঃ কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় মনুঘ্যত্বকে আমরা অভিহিত করিতে 
পারি না। কোন নিন্দিষ্ট পথে ইহা বাইরে প্রকট হয় না। একটি 
রুদ্রোজ্বল বা মধুরোজ্জল ব্যাপ্তিতে মানুষের সকল কাজের উপর 
আপনাকে ছড়াইয়৷ দিয়া সকল কাজের উপর ইহা ব্যক্তিত্বের একটি 
বিশিষ্ট ছাপ আঁকিয়া দেয়। প্রফুল্লচন্দ্র বৈজ্ঞানিক- বিজ্ঞান সেবা 
তাহার জীবনের ধর্ন্ন- কিন্তু মানুষ প্রফুল্লচন্দ্র দেশজননী-ন্যস্ত পবিত্র 
কর্তব্য হিসাবে গভীর আদর্শ-নিষ্ঠার সহিত এই বিজ্ঞান-সেব! ব্রত 
উদ্যাপন -করিয়াছিলেন। ব্যবসায়ী প্রফুল্লচন্দ্র বিরাট পরিকল্পনা এবং 
অপূর্বব সংগঠন শক্তিদ্বারা বিরাট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিলেন; 
কিন্তু মানুষ গ্ফুল্লচন্দ্র এই বিপুল এশ্ব্যের নেপথ্যে বাস্তব রিক্ততার 
মধ্যে আগন মনুয্যুতবের অগার এরবর্য্যের কোলে আমীন রহিলেন। এই 
ভাবে তাহার প্রত্যেক বিশিষ্ট কর্ম্মধারার মধ্য দিয়া মানুষ প্রফুল্লচন্তর 
ফুটিয়া উঠিয়াছে। তাহার মনুয্তের বৈশিষ্টটুকু সকল ক্ষেত্রে আলোচ্য 
কর্মধারার অনুগামী গুণ হিসাবে আমরা বুঝিতে চেষ্টা করিয়াছি। কিন্ত 


মনীষী প্রফুল্লচন্্ ১০৭ 


বা সপ পাছত সিসি পা ০ এ তাত পিসি পাটি সি পা্পাশপিনিল স্পিনার ৩ পপির পা স্পা শা পোপ সপ শাসিত পা তা তি শপাউিলাসিপিস্পিণী পিপি পিপি 


পিক্ষকতা, বৈজ্ঞানিকতা, সমাজসেবা পতি মধ্যে মানুষ প্রফুল্লচন্দর 
নিঃশেষ হইয়া যায় নাই । তাহার জীবনের সকল কর্মধারাকে প্রদীপ্ত 
করিয়াও মানুষ প্রফুল্লচন্দ্র-বাঙ্গালীর ঘরের ছেলে আম।দের প্রফুল্লচন্দ্ 
মনুষ্যত্বের বিমল মহিমায় বাঙ্গালার ঘরে ঘরে বাঙ্গালীর হৃদয় 
হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত ; প্রফুল্লচন্দ্র যিনি পিতার বাৎসল্যে, বন্ধুর আপ্যায়নে 
সকলকে মুগ্ধ করিয়াছিলেন; প্রফুলপচন্দ্র-_পল্লীর নিরক্ষর মূর্খ চাষী 
বাহার নামে তাহার গাছের প্রথম ফলটি উৎসর্গ করিয়া রাখিত-_ 
পল্লীর বধূরা নিজেদের হাতে পাক-করা “পু ইশাক চচ্চড়ি” ষাহাকে 
খাওয়াইবার জন্য আগ্রহের গ্রতিদন্ছিতা করিত ! 

সত্যই প্রষুল্পচন্দ্র গভীর মননশীলতা ও শুদ্ধ সংস্কৃতির উচ্চতম 
মানসিক স্তরে অধিষ্ঠিত থাকিয়াও সুলভ প্রাচুর্যে আপনাকে সকলের 
মধ্যে ছড়াইয়া দিয়াছিলেন। নিরক্ষর মুর্খ চাষী হইতে স্ুবিজ্ঞ পণ্ডিত 
পর্য্যন্ত সকলেরই নিকট তিনি সুগম ও সহজবোধ্য ছিলেন। এই দিক 
দিয়া প্রফুল্লচন্দ্র কতকটা যেন গান্ধীজীর সহিত উপমেয়। সুভাষচন্দ্র 
জহরলাল, ইহাদের নিকট যাইতে হইলে আমাদের যেন মনের তোলা 
পোষাক পরিয়া যাইতে হয়_মন যেন দূর হইতে সম্ভ্রম জানাইয়া 
ফিরিয়া আসিতে চায়। আ'র গান্ধীজী, প্রফুল্লচঞ্জ ? ইহারা যেন নিত্য 
পুজার দেবতা_-আমাদের ছৃঃখ-দৈম্য-গ্লানি-ভরা মন লইয়া ইহাদের 
পার্খে যাইয়া আমরা বসিতে পারি-_- ইহাদের পাশে বসিয়া দিনের পর 
দিন আমাদের ছুঃখীর জীবনের কাহিনী শুনাইতে আমাদের মন যেন 
উদগ্রীব হইয়া উঠে। জনসাপ্ায়ণের মনের গঠন ইহারা জানেন । 
তাহাদের মনের অস্পষ্ট ভাব তাহাদের ভাষায় ফুটাইয়৷ তুলিবার ক্ষমতা 


ইহাদের অদ্ভুত। তাই প্রফুললচন্্র যখন কিছু বলিয়াছেন, জনসাধারণের 


১৮ মনীষী প্রফুল্লচন্ত্র 


স্পাপ্পাসপী? 
ভিলা াশিিশিশী শশী -শ্টাশাশাশাশীশীটিশিসীীাািশাশাপিশিশীশি শীতাতপ ীিশিশিিিাাশিশিশাীস্টাি সি 


নিকট তাহা নিজের মনের কথ! নিজের মুখে বলিয়৷ নিজের কাণে 
শোনার মত মনে হইত) তাহাদের মন, ভাব ও ভাষার এই সঙ্গতি- 
জনিত আনন্দে উল্লসিত হইয়। উঠিত। নুভাষচন্ত্র, জহরলাল-_ ইহার! 
যেন মনুষ্যত্বের ধিরাট শৈল-_মহিমায় গান্তীধ্যে মনে সন্ত্রম জাগায়। 
গান্ধী, প্রফুল্লচন্ত্রব ইহারা যেন মনুষ্যত্বের স্রোতম্িনী- নদীর সুস্বাছ্ 
জলধারার ন্যায় স্বীয় মনুষ্যত্বের ক্ষীরধারায় মানব হৃদয়ের বেদনা-দগ্ধ 
উর মরু ক্ষেত্রকে স্নিগ্ধ ও সঞ্জীবিত করিয়া তুলে। একজনের 
বিশাল ভাবলোকে-_হূর্গত-অত্যাচারিত মানবজাতির ছুঃখকষ্ট কল্পনার 
যাছু-তুলি স্পর্শে মর্মন্দ বেদনার একখানি করুণ চিত্র হইয়! 
ফুটিয়া উঠিয়াছে, যাহার মধ্যে দেশের জন্য জনসাধারণের ছুঃখ কষ্টের 
রূপটুকু বিধৃত হইলেও, তাহা এক বৃহত্তর পরিমগুলের অংশ বিশেষ 
মাত্র; আর একজন অভাবে, দৈন্যে, অনশনে, রোগে, শোকে মাটির বুক 
যেখানে আর্তচীৎকারে ফাটিয়৷ পড়িতেছে, তাহারই মাঝখানে দীড়াইয়। 
সমবেদনায় গলিয়া তিলে তিলে আপনাকে বিলাইয়া দিয়া তাহাদেরই 
একজন হইয়া উঠ্িয়াছেন। একজন অত্যাচারের প্রতিবাদে মানুষের 
দেবতা হইয়াছেন, আর একজন অত্যাঁচারিতের সমবেদনায় দেবতার 
আসন হইতে নামিযা মানুষের নখ ছুঃখের সাথী হইয়া মানুষ হইয় 
দাড়াইয়াছেন। একজনের আদর্শ ভাবগত, অপরের আদর্শ বস্তগত 
এবং আমরা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি প্রফুললচন্ত্র প্রফুরচন্দ্র না হইলে, 
গান্ধী হইতেন। | 

এই মহাপুরুষের, জীবন. যতই, আলোচনা কর! যায়, ততই তাহা 
নব নব ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ হইয়া উঠিতে থাকে । তাহার জীবন যেন 
বাঙ্গালী জাতির দিপদর্শন যন্্। ইহা বাঙ্গালী জাতির জীবনে যাহ কিছু 


মনীষী এফুরচন্্র ১০৯ 


পাস সি এস পপ 





সপপস্পীলাত আাপাস্পািপাস্পসিা7-শিশাীশিলী্ািতিটি ০ পাশাপাশি ৩ স্পা শি পাসে 


শ্রেয় এব প্রেয়, তাহার অভিমুখী করিয়!'জীবনের পথ নির্দেশ করে। 
তাহার জীবন যেদিন বাঙ্গালী জাতির জীবনে- তাহার চিন্তায় এবং কর্মে 
সত্য হইয়া উঠিবে, যেদিন জীবন দেবতার অপূর্ব আহ্বানে বাঙ্গালী 
জাতি তাহার শিথিল ও বিক্ষিপ্ত জীবনকে পৌরুষে, ওার্য্যে এবং 
মানবতায় সঞ্জীবিত করিয়া, নিষ্ঠায় ও সাধনায় একমুখী করিয়া, তাহার 
অর্থ নৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিগত পন্থুতা দূর করিবার জন্য বন্ধ- 
পরিকর হইবে, সেই দিনই বাঙ্গালী জাতির মধ্যে প্রফুল্পচন্দ্রের জীবন 
ধারণ সার্থক হইয়া উঠিবে। আমরা ক্রমে ক্রমে তাহার মানুষী রূপটি 
উপলব্ধি করিতে চেষ্ঠ। করিব । 
ংঘাঁত উপস্থিত হইলে বাঁধাকে বিচুর্ণ করিয়া চলার পথ করিবার 
উপযোগী উগ্র বীর্ধ্যবত্তা, দিয়! প্রফুল্লচন্দ্রের মনুষ্যত্ব গঠিত হয় নাই। : 
তাহার দৈহিক গঠনও তাহার অনুকুল ছিল না। তিনি হতমাঁন 
হইয়াও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন । 
কিন্তু ক্রুফট্‌ সাহেবের কথার প্রত্যুত্তরে অপরিসীম ধৈর্য্য দিয়! তিনি 
“বেঙ্গল কেমিক্যাল এও ফারমাসিউটিক্যাল ওয়ার্কন্‌” গড়িয়া তুলিলেন 
যেখানে এই এডিনবারায় শিক্ষা প্রাপ্ত ডাক্তারের আদেশের প্রতীক্ষায় 
মাসিক হাজার টাকা বেতন*প্রাপ্ত ম্যানেজার সর্বদাই উৎকর্ণ হইয়া! 
থাঁকিতেন। তাহার সংকল্প মৃছ্ভাবে ক্রিয়াশীল হইলেও, ইহার লক্ষ্যাভি- 
মুখী গতি সুনিশ্চিত এবং অনিবাধধ্য। এই তর্স্বাস্থ্য খজুদেহ পুরুষটির 
সকল সংকল্পই উগ্রতা-বঞ্ভিত, কিন্তু অধ্যবসায়ে ও একান্তিকতায় 
সার্থক-কাম। 
অভিমান-শৃন্ক মন কোন ব্যাপারেই প্রদীপ্ত হইয়া উঠিতে জানে না। 
প্রৃল্লচজ্্র নিরভিমান ছিলেন। অভিমান সকল কাজের মধ্য দিয়া 





১১০ মনীষী গ্রসুল্লচন্্র 





আপনাকে প্রচার করিতে চায়, সকল কাজের মধ্যে “আমি” মনোহর 
মুত্ততে কুটিয়া উঠূক, ইহাই তাহার কাম্য । প্রফুল্লচন্দ্র অভিমান 
ংহরণ করিয়া আমিত্বকে জাতির মধ্যে বিস্তৃত করিয়া দিয়াছিলেন। 
সাধারণ ক্ষেত্রে আমরা যাহাকে আত্মত্যাগ বলি, প্রফুল্লচন্দ্রের পক্ষে 
তাহা ছিল আত্মসম্প্রসারণ। ত্যাগ কথার ভিতর সংযম বা মানসিক 
আয়াস-ন্বীধারের ঈঙ্গিত থাকে । প্রফুল্লচন্দ্রের ভিতর তাহা ছিল ন|। 
তিনি সকলের মধ্যে আপনাকে পাইয়াছিলেন, তাই আনন্দের সহজ 
প্রেরণায় অ'পনাকে সকলের মধ্যে বিলাইয়! দিয়াছিলেন । 
নিজের সুখস্থাচ্ছন্দ্য অব্যাহত রাখিয়া পরের কল্যাণে দান করিবার 


গদাঁধ্যের মধ্যে যে আত্ম-বিলাস লুকাইয়। থকে, তাহা তাহাকে স্পর্শ 
করিতে পারে নাই। তাহার দানশীলত। ছিল হৃদয়ের একটি অনিবার্ধ্য বৃত্তি । 
মৌখিক সহানুভূতি তাহার হৃদয়ের ধশ্ম ছিল না__প্রের বেদনা! তাহার 


অনুভূতিতে নিজের বেদনার স্তায় তীক্ষ ও তীব্র হইয়া! উঠিত। সেই 
বেদনার প্রেরণায় তাহার হস্ত সাহায্য করিবার জন্য স্বতঃই প্রসারিত 


ইইত। তাহার জীবন দেবত| বুঝি তাহার নিকট সর্বস্বই চাহিয়া- 
ছিলেন ; তিনিও হৃ'হাঁতে তাহার সর্বন্ব_এমন কি নিজেকে পর্য্যন্ত 
পরের কল্যাণে দান করিয়া গিয়াছেন। 

প্রফুল্লচন্দ্র বিবাহ করেন নাই। পুত্র পৌত্রাদি বশ পরম্পরার মধ্যে 
নব নব রূপে আপনাকে বাঁচাইয়। রাখিবার ব্যাকুল আকাঙ্া কখন 
তাহাকে প্রলুব্ধ করে নাই। স্থজন প্রবৃত্তি জীবনের সহজ ধর্ম । প্রফুল্ন- 
চন্দ্রের মধ্যেও এই ধর্ম ক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু তীহার প্রবৃত্তি স্থুল- 


থষ্টির বহু উর্ধে ভাবলোকে উন্নীত হইয়াছিল। উচ্চ মানসিক স্তর 
হইতে এই স্প্ির ইফনা তাহার জীবনকে দোল দিয়াছিল। তাই 


মনীষী প্রফুল্লচন্্ ১৯১ 





প্রফুল্লচন্তর শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্যের আবিষ্বর্তা নহেন। তিনি বৈজ্ঞানিকের : 
অষ্টাও। অপংখ্য বিজ্ঞানী শিগ্তের মধ্য দিয়! প্রফুল্লচন্্র আপনাকে 
বহুরূপে ফুটাইয়া তুলিয়াছিলেন। এই বৈজ্ঞানিকের শিয্ভপরম্পরা 
হয়তো একদিন ভারতের ইতিহাঁসে বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ রচনা করিবে 
এবং তাহাদের আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্যের জলগণ্ুষে এই বৈজ্ঞানিকের 
আদিপুরুষ, "গোষ্ঠীপতি' প্ররফুল্লচন্দ্রের অবিনাশী আত্মা অমৃতলোকে 
বসিয়। তৃপ্তি লাভ করিবেন। ৃ 
পোষাক পরিচ্ছদে প্রফুল্লচন্দ্র আদর্শ বাঙ্গালী ছিলেন। ১৯০১ 
সালে মহামান্ত গোখেলের সঙ্গী হুইয়৷ গান্ধীজী প্রফুল্লচন্দ্রের সহিত দেখা 
করিতে আসেন। তিনি আপগিয়া দেখিলেন শ্মশ্রুগুল্ষ বিমণ্তিত, ধুতি- 
পিরহান-সন্বল প্রফুল্লচন্্র-_বিজ্ঞান কলেজের একটি অনাড়ম্বর কক্ষে 
তাহার একক জীবনের সংসার ; স্থপ্রচুর উপার্জন, কিন্তু তাহা হইতে 
নিজের অত্যন্ত সাধারণ জীবন-যাত্রার জন্য সামান্য কয়েক টাঁক1 মাত্র 
রাখিয়া, অবশিষ্ট ছাত্র ও ছ্ঃস্থের কল্যাণে বিলাইয়া দেন। গান্ধীজী 


সম্ভবত; হতাশ হইয়াছিলেন ৷ কিন্তু এই হতাশ! তাহার হর্ষেরই কারণ 
হইয়াছিল। গান্ধীজী তখনও চল্লিশ কোটি ভারতবাসীর দারিদ্র্যের 
প্রতীক চীর বস্তু গ্রহণ করেন নাই। উচ্চ__বিশেষতঃ বিদেশী শিক্ষার 
, অপরিহার্ধ্য অঙ্গরূপে বিলাতী পোষাক ও হাবভাঁব তখনও দেশবাসীর 

নিকট আদরণীয় ছিল। গান্ধীজীর সন্মোহিনী বাণীর অনুপ্রেরণায় 
তাহাঁরা তখনও দেশবাসীর অঙ্গ ও স্বভাব হইতে খসিয়৷ পড়ে নাই। 
কিন্ত গরফরচন্্র বিদেশী পোষাক ও হাবভাবকে কোন দিনই শ্রীতির 


চক্ষে দেখেন ন্টুই। ইংরাজী শিক্ষার প্রভাবাধীনে প্রফুল্লচন্দ্রের বিরাট 
ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ বিকশিত হইয়াছিল সত্য, ই-াজী সাহিত্য তাহার সুপ্ত 


১১২ মনীধী প্রফুন্নচন্ত্র 





পাশিপাসপিস্িজআাটি 


সাহিত্যিক চেতনাকে উদ্বোধিত করিয়াছিল সত্য, কিন্তু বাঙ্গালীর 
পরিচ্ছদ, বাঙ্গালীর আলাপআচরণ তাহার মহত চরিত্রের মহত্তর 
অলঙ্কার রূপে তীহার নিকট চিরদিনই সমান আদরনীয় ছিল। 
বাঁল্যম্থলভ চপলত। বৃদ্ধ বয়সেও কোন দিন তাহাকে পরিহার করে 
নাই। নাগরিক জীবনের মাঞ্জিত চপলতা৷ ইহা! নহে। ইহ! সরল গ্রাম) 
মনের চপলতা-_বুঝি ব| বন্যাও। প্রকৃতির কোলে স্বাভাবিক উপায়ে 


বাড়িয়া-ও$। প্রাণ-প্রাচুর্ধ্যে উল্লন্ষমান বন্য পশুর মত সে মন। তাহার 
দরজ। অবারিত, দর্শনাকাজক্ষীর নিত্য ভিড়। তাহার স্বভাবের সহিত 
পরিচিত নহে-_এমন €কোঁন যুবক তাহার সহিত দেখা করিতে গেলে, 
সত্যই তাহাকে বিব্রত হইতে হুইত। প্রফুল্লচন্্ যুবকটিকে আকর্ধণ 
করিয্সা, তাহার পেশীগুলি মঙিয়া ডলিয়া, তাহার বুকে পিঠে কিলবৃষ্ঠি 
করিয়া__-তাহাকে একেবারে বিব্রত করিয়া তুলিতেন। তাহার হাত 


হইতে না হইলে, এই অশিষ্টাচরণ যে কোন লোকের নিকটই 
সুনিশ্চিত ক্রোধের কারণ হইত। এইভাবে ঠাহার বন্ত মনের সহিত 


মুখোমুখী ঠাড়াইয়৷ পরিচয়ের প্রথম পর্বব সমাপ্ত হইত। ক্রমে সেই 
বন্য মনকে সংহত করিয়। বৈজ্ঞানিক-ব্যবসায়ী-পরামর্শদীতা৷ প্রযুল্লচস্তর 


জাগিয়া উঠিতেন। 
পল্লী চিরদিনই যেন তাহাকে হাতছানি দিয়! ড]কিয়াছে। পল্লীর 


আবহাওয়ায় তিনি যেরাপ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিতেন, এমন আর কৌথাও 
নহে। বাল্যে কলিকাতায় অধ্যয়ন কালে তিনি মধ্যে মধ্যে রাড়/ৃল 


যাইয়া গরী আবহাওয়ার নির্ঘন বাতাসে মনকে গবিভ্ব করিয় 


আসিতেন। তীহার কর্মজীবনেও তিনি বৎসরে অন্ততম্ঈএকবার তাহার 


কলিকাতীর শ্রদ্। ৫ মন্ানের রাজ হইতে রাড়নি'কাটিগাড়। 


মনীষী প্রফুল্লচন্ত্ ১১৩ 


পিপিপি পি পারি উসমান 


পল্লীর “গুহক'-দিগের দাদা-কাকা-মামা-জ্যেঠার-মিতার রাজতে ফিরিয়। 
যাইতেন। হরগোৌজার বনাকীর্ণ তটরেখার তলে কপোতাক্ষের 
কালো নীরধারা,__অদূরে প্রান্তর, দিগন্তে নীলহরিতে মেশামিশি হইয়| 
গিয়াছে-_জীকা-বাঁকা সরূপথ পল্লীর নির্জন নিরাল! দিয়া কোথায় 
যেন চলিয়া গিয়াছে! ইহারই স্থানে স্থানে মানুষের বসতি-কৃচিৎ 
কোথাও আড়ম্বর উকি মারিতেছে; প্রায় সর্বব স্থানেই দারিদ্র্যের 
নগ্ন রূপ। ইহার অধিবাসীরা? অল্পই তাহাদের অভাব; তাহাও 
সম্পূর্ণ পুরণ হয় না । ইহারা ক্রোধে কুন্ধ হয়, আনন্দে প্রফুল্ল হইয়া 


উঠে, বেদনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে না। এখানকার অধিবাসীরা 
হই দিন তালের মজায় ক্ষুনিবৃন্তি করিয্মা তৃতীয় দিন হরিশ্চন্দ্র সাজিয়। 


সসাগর। পৃথিবী দান করিতে পারে। ইহাই প্রফুল্লচন্দ্রের জন্ম-পল্লীর 
পরিবেশ ! বৈভ্গানিকের খোলস ছাড়িয়া এখানে আসিয়। গ্রাফুল্চন্দ্, 


মানুষ হইয়া ঝাচিয়া উঠিতেন | 
ফুনুর ( ইহাই তাহার বাল্যকালের নাম ) আগমনে গ্রামের মধ্যে 


একটি শ্রীতির শিহরণ জাগিয়া উঠিত। সম্মান ও শ্রদ্ধায় ভারাক্রান্ত 
সঙ্কৃচিত আড়ষ্ট গ্রীতি ইহা নহে) যে স্বতংস্ফুর্ত প্রীতির উচ্ফ্কীসে 
ভাই ভাইকে বক্ষে ধারণ করে-_বন্ধু বন্ধুকে আলিঙ্গন করে-_ইহা 
সেই গ্রীতি-__বাঁধাহীন গ্রাম্য মনের পুলকাকুলতা। এখানে তিনি. 
শিশুর পরম নির্ভরতায় মাতৃ-অস্কে শুইয়া পড়িতেন, বাল্যগুকর পদধূলি 
লইতে বালকের মতই ছুটিয়! যাঁইতেন___পল্লীবধূর গ্রীতিক্সিগ্ধ হাঁসির 
অভ্যর্থনার মধ্যে প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে কুশলবার্তা লইয়! ফিরিতেন। 

গৃহে অবস্থানকালে প্রফুল্লচন্র প্রতিদিন নিয়মিত নৌকাঁযোগে বাহির 
হইতেন। পার্শবর্তা গ্রাম হইতে যুবকের! নৌকায় আসিয়া তাহার, 


৮ 


১১৪ মনীষী প্রফুললচন্্র 





পাস 


সহিত মিলিত হইত । সে কি হৃদয়ের উদ্বেলতা-_আনন্দের মাতামাতি 
সঙ্গীতে-_-কলহাস্তে আকাশ মুখরিত হইয়। উঠিত। ডাক্তার প্রফুল্লচন্্র 
-স্যাঁর প্রফুল্লচন্দ্র সেই পুলক বন্যায় কোথায় ভাঁসিয়া যাইত ! বঙ্গ- 
জননীর চির আদরের সন্তান মানুষ প্রফুল্লচন্দ্র তাহার নগ্ন সৌন্দর্য্য 
জাগিয়! উঠিতেন। স্থানে স্থানে নৌকা চাপাইয়! তিনি ঘাসের উপর 
গড়াগড়ি দিতেন_ পরিপূর্ণ নিঃশ্বাসে মাতৃ-অলের সমস্ত সৌগন্ধটুকু 
বুঝি অন্তরে টানিয়৷ লইতে চাহিতেন। ইহাই প্রফুল্লচন্তরের মানুষী রূপ !' 
ইহাই গুণের পর গুণ যোজনাঁয় বৈজ্ঞানিক, ব্যবসায়ী, লোকশিক্ষক, 
সমাজসেবক প্রফুল্লচন্দের মহামানবতার অনবদ্য চিত্রে, বূপায়িত 
হইয়াছিল । | 

: অত্যই, জাতীয় ছুর্গতির মসীলিপ্ত পটভূমিকার উপর প্রফুল্লচন্দ্রের 
জীবন একখানি স্ুুসমপ্জস ছবির ন্যায় ফুটিয়া উঠিয়াছিল। বিধাতা 
বুঝি তাহার অমর তুলি দিয়! সুঙ্গমাতিসূন্মম রেখা ও বর্ণ 
বিশ্টাসে অপূর্ব ব্যঞ্জনা দিয়া এই ছবিখানিকে ফুটাইয়! তুলিয়া- 
ছিলেন। আহার-বিহার, পৌষাক-পরিচ্ছদ, দৈনন্দিন, জীবন 
যাত্রা, সর্ববদিক দিয়া একটি স্ুপ্রণালীবদ্ধ কর্মসচী ও আদর্শ নিষ্ঠা 
তাহার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করিত। ভ্রমণের উদ্যোগে একটি সুচী 
পর্ধ্যন্ত তাহার মনৌযোগ এড়াইতে পারিত না।- তাহার একক 
জীবনের গৃহস্থালীতে এতটুকু ত্রুটি ঝিচ্যুতির সম্ভাবন! ছিল না। সময়: 
বা অর্থের এতটুকু অপব্যয় তিনি সহা করিতে পারিতেন না।' মিতাহার 
ও মিতাচার তাহার চরিত্রের বিশিষ্ট গুগ ছিল। তাহার অসাধারণ 
মন:সংযোগ শক্তি ছিল বলিয়া দেশের চিন্ত৷ তাহার বিজ্ঞান ' সাধনাকে 
ব্যাহত করিতে পারে নাই। জীবনের সকল ক্ষেত্রে একটা. শোভন” 


মনীষী প্রফুল্লচন্্র ১১৫ 





১০০ পপীাসিিসিপিসী 





পেশ 





পাশ শা পাশীশীশীত। 


ভঙ্গী, স্থুরুচি ও শালীনতা! তাহার চরিত্রকে সঙ্গতি ও মাধূর্ধ্যে সুন্দর 
করিয়! তুলিয়াছিল। সর্বেবোপরি একটা! আরধ্য-মনোভাব- ত্যাগভূয়িষ্ঠ 
জীবনের স্থুর নিক্ষাম কন্মের প্রেরণা এবং আত্মসম্প্রপারণের আনন্দ 
তাহার সকল কার্য্ের উপর আদর্শের একটি বিশিষ্ট ছাপ আকিয়া 
দিয়াছিল। 

প্রফুল্লচন্দ্র স্থানে স্থানে হিন্দুশান্ত্রকে আক্রমণ করিয়াছেন__এই 
অনুযোগ অনেককে করিতে শোনা যায়-_অনধিকারী হইয়! শাস্ত্রের 
বিরুদ্ধ সমালোচনা করা তাহার পক্ষে শোভন হয় নাই। হয়তো 
তিনি শান্ত্রের মন্ার্থ উপলব্ধি করিতে পারেন নাই। কিন্তু শাস্ত্রের 
গোপ্তা ও ব্যাখ্যাতা যাহারা, তাহারাঁও শাস্ত্রের মন্মার্থ উপলব্ধি 
করিয়াছেন এরূপ মনে করিবার কোন সঙ্গত কারণ তিনি হয়তো 
খু'ঁজিয়া পান নাই। অপৌরুষেয় শাস্ত্র _-সর্ববদেশ ও সর্বকালের শাশ্বত 
সত্য তাহাতে নিহিত থাকিবেই। বস্তুতঃ হাজার হাজার বৎসর ধরিয়। এই 
শাস্ত্র ভারতের জাতীয় জীবনের সহিত যে'গ রক্ষা করিয়! আসিয়াছিল 
এবং তাহার সকল কাধ্য ও চিন্তায় প্রেরণা জোগাইয়া জাতির 
প্রতিভাকে সজীবিত রাখিয়াছিল। সমাজের প্রত্যেক পরিবত্তিত 
অবস্থার সমর্থনে যুক্তি শাস্ত্রের মধ্যেই মানুষ তখন খুঁজিয়া পাইত। 
কিন্তু যুগধর্ম্ম-পরিবপ্তিত জীবন ধারার সহিত শাস্ত্রের যোগ আজ 
কেবলই বিচ্ছিন্ন হইয়! পড়িতেছে ; জীবনের অগ্রগতির পথে সহায় না 
হইয়া সে পুনঃপুনঃ বাধার শৃঙ্খল সৃষ্টি করিতেছে; মধ্যযুগীয় তর্ক 
বিতর্কের ধূঅঞ্জালের মধ্য দিয়া জাতি পিছন দিকে পায়ের-পাতা-জোড়! 
ভূতের ম্যায় জীবনের ক্ষেত্র হইতে ক্রুতগতিতে পশ্চাতে ছুটিয়া 
চলিয়াছে; তাহারই আক্ষেপোক্তি প্রফুল্লচন্্র করিয়াছেন। বহুদিনের 


০ 


১১৬ মনীষী প্রফুল্লচ্ 


শী পি 


পরাধীন জাতির নিগীড়িত ও জড় মনের উপর শাস্ত্রের মন্মার্থের যে 
বিকৃত রূপ প্রতিভাত হইয়াছিল, এবং তাহার সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া, 
চলিতে যাইয়া যে অধঃপতন জাতির জীবনে প্রকট হইয়াছিল, তাহাই 
তাহার মনকে তীব্রভাবে বিক্ষু্ধ করিয়াছিল। শাস্ত্র সম্পর্কে তাহার 
মন্তব্য এই বিক্ষোভেরই অভিব্যক্তি । 

এই মহান্‌ আধ্যতাপসের ছুজ্জেয় মানস লোকের সম্পূর্ণ রপট্রকু 
ফটাইয়া তোলা তীহারই ম্ায় বিস্তৃত-মনা ব্যক্তি ব্যতীত অপরের 
পক্ষে সম্ভব নহে। তাহার অদৃশ্য অন্তর লোকে কোন্‌ গুণ কেমন 
করিয়া তাহার চরিত্রের অঙ্গীভূত হইয়! পড়িতেছিল--কোন্‌ অনুকুল 
মানসিক পরিবেশের মধ্যে বিচিত্র ভঙ্গিমায় তাহার। বিকাশ লাভ 
করিতেছিল- চিন্তাকে যথাসম্ভব প্রসারিত করিয়াও আমরা তাহার 
কুলকিনারা পাই না। মানুষের যত কিছু শিক্ষাদীক্ষা, বাহ্য 
ঘটনার সংস্পর্শে সমস্ত সংবেদন--তাহারই স্ুল্পাতিশুক্্র নির্যাস 
প্রতিনিয়ত অস্তুরের মানুষটিকে পরিপুষ্ট করিতে থাকে । প্রফুল্লচন্দ্রে 
মনুষ্যত্ব এ একই প্রকারে পুষ্টিলাভ করিয়াছিল । কিন্তু প্রফুল্লচন্দের 
এই পরিপুষ্ট মনুষ্যত্বের প্রীণকোষটি ইহা প্রফুল্লচন্দ্র কোথায় 
পাইয়াছিলেন? বঙ্গজননীর স্থজন-শক্তি কত যুগের সঞ্চয় দিয়া 
এবটি প্রফুল্লচন্দ্র গড়িয়া তুলেন ₹_ একজন বিবেকানন্দকে স্ত্টি 
করেন ?_ একজন চিত্রপ্জীন দেশবাসীকে উপহার দেন? পরাধীনা 
বঙ্গ জননী ও পৃতগর্ভ বঙ্গনারীদের স্ষ্টির সমৃদ্ধি দেখিয়া শ্রদ্ধায় 
মস্তক অবনত হইয়া আসে, আর ই'হার্দের আবির্ভাবে বাঙ্গাল 
আপনাকে ধন্য ও কৃতার্থ মনে করে। 


মনীষী প্ররফুদ্লচন্দ্র ১১৭ 


শেষ জীবন 
ংলার মাটি রসাল। এখানে বৃক্ষলতা সবুজ শোঁভার মাধুধ্য সম্পদে, 


সহজেই বিকশিত হইয়। উঠে। কিন্তু শুষ্ক ক্ষেত্রের তীক্ষ আবহাওয়ার 
বৃক্ষাির ন্যায় তাহারা কখনই সন্ববান বা ঘাতসহ হয় না। মাটির 
গুণে মানুষও বুঝি চরিত্র মাধুর্য্যে ফুটিয়া উঠিয়া ছু'দিনের জন্য লংসারকে 
আমোদিত করে। আবার বাংলার বৃক্ষলতার ন্যায় ছু'দিনে আপনাকে 
বিলাইয়। দিয়! একেবারে নিঃশেষ হইয়া পড়ে । এদেশের বিবেকানন্দ__ 
এদেশের চিত্তরঞ্জন বাংলার কত দিনের সম্পদ? পঞ্চাশ. বংসরের 
শক্তি পাঁচ বংসরেই ঘনীভূত হইয়া অলৌকিক সার্থকতায় তাহাদের 
জীবনকে যেন বিকশিত করিয়াছিল ! তাহাদের বিরাট ব্যক্তিত্বকে দীর্ঘ- 
কাল বহন করিবার মত শক্তি বাংলার জলবায়ুপুষ্ট দেহে বুঝি সম্তবে না! 
এই অল্পজীবীর দেশে যে ছুই-এক জন বিরাঁট মহীরুহের ন্যায় 
দীর্ঘকাল স্বীয় ব্যক্তিত্বের প্রভাব বিস্তার করিয়া অক্ষু্ কর্মম-শক্তি 
লইয়া জীবিত ছিলেন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র তাহাদের অন্ততম। 
্রফুল্লচন্ত্র ৮৩ বৎসর জীবিত ছিলেন। শেষের ছুই বৎসর তাহার 
প্রায় শহ্যাশায়ী অবস্থায় কাঁটিযাছিল। তখনও বাংলার ও বাঙ্গালীর 
ভবিষ্যৎ ভাবিয়া তাহার উদ্বেগের অন্ত ছিল নাঁ। যখনই কোন সুদুর- 
প্রসারী সমস্যা বাঙ্গালীকে বিব্রত করিয়াছে, তাহার অনসুস্থের শয্যা 
হইতে তিনি তাহার শ্চিন্তিত অভিমত সংবাদ পত্রে প্রকাশ করিয়া 
অথব! সাধারণ সভায় প্রেরণ করিয়া জাতিকে সাহাষ্য করিয়াছেন । 
বার্ঘক্য-স্থুলভ দুর্বলতায় তিনি আক্রান্ত হইয়াছিলেন। তদুপরি 
অনিদ্রা রোগ তীহাকে স্থায়ীভাবে কষ্ট দিতেছিল । এই সময় তিনি কিছু 
দিনের জন্য খুলনার অন্তর্গত শ্রীপুরৈ শ্রীযুক্ত অরবিন্দ সরদারের গৃহে 


শ শিনশিপিপসপডি 


১১৮ মনীষী গ্রফুল্লচ্র 


অবস্থিতি করেন । সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর তিনি কলিকাতায় 
ফিরিয়া আসেন। কলিকাতা তাহার ভাল লাগিল নাঁ। তিনি নিজের 
জন্মস্থান রাড়লি দেখিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন। বস্তুতঃ কত 
দেশ তিনি দেখিয়াছেন; কিন্তু কপোতাক্ষীর ক্ষীরধারা নিষিক্ত খুলনার 
কথা মনে হইলে জীবন-সন্ধ্যাতেও তাহার চিত্ত আবেগময় হইয়া উঠিত। 

এই সময় খুলনাবাসীদিগের উদ্চোগে খুলনা সহরে প্রফুলল-জয়ন্তী 
উত্মব মহা সমারোহে সুসম্পন্ন হয়। বাংলার বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি 
এই উৎসবে যোগদান করেন । রাড়।লি ও কাটিপাড়ার অধিবাঁসীবর্গ এই 
স্বযোগে তাহাদের অন্তুরের ভক্তি-অর্থ/ তাহার পায়ে নিবেদন করেন। 
. এই সময় প্রফুল্লচন্দ্র প্রায় চলচ্ছক্তিহীন হইয়াছেন । কিন্তু দেশ- 
'বাসীর এই স্নেহের দাবী তাহার দরদী প্রাণ কোন ক্রমেই প্রত্যাখ্যান 
করিতে পারে নাই । তিনি সভামগ্ডপে উপস্থিত হইয়াছিলেন। অভি- 
নন্দনের উত্তরে এই মহাপ্রাণ মনীষীর বাণী প্রচ্ছন্ন বেদনায় মন্থর-_ 
বিদায় বেলার সঙ্গীতের ন্যায় উদাস--আশা আকাঙ্খায় বিক্ষুব্ধ সেহাতুর 
প্রাণের সম্পূর্ণ রূপ তাহাতে ফুটিয়া উঠিয়াছে। 

এইবার প্ররফুল্লচন্্র কলিকাতায় ফিরিয়া আসিয়৷ তাহার পরম 
আদরের বিজ্ঞান কলেজে বাদ করিতে লাগিলেন। এই বিজ্ঞান 
কলেজই তাহার সাধনার প্রকট মুন্তি। জীবনের শেষ মুহুর্তে তিনি এই 
স্থান ত্যাগ করিতে চাহিলেন না। এইখানেই ১৯৪৪ সালের ১৬ই জুন 
অপরাহ্ন ৬ টা ২৭ মিনিটের সময় তাহার শেষ নিঃশ্বাস বহির্গত হয়| : 

্রফুল্লচন্দ্র চলিয়া গিয়াছেন। কিন্তু বাঙ্গালী তাহাকে তুলিতে 
পারিবে না। তিনি যদি পৌরাণিক যুগে জন্মগ্রহণ করিতেন, হয়তো 
কোন নূতন নক্ষত্রের আবির্ভাব তাহার জন্মের দিন স্থচিত করিত ; হয়তো 


্ীনীষী প্রফুল্লচন্ত্র ১১৯ 


কোন আকাশ বামী তাহার জীবনের বিরাট সন্তাবনার কথা আভাসে 
জানাইয়া দিত ; হয়তো এই দেবাংশ সম্ভৃত মহাপুরুষ দেবতার আসনে 
প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া গ্রাম্য বটবৃক্ষমূলে পুজা ও অর্চনা লাভ করিতেন। 
পল্লী কবি তাহার নামে স্তোত্র রচনা করিত, পল্লী বধূ তাহার নামে 
বটবৃক্ষমূলে দীপ জ্বালাইয়৷ দিত। কিন্তু এযুগে তাহা সম্ভব নহে। 
তিনি এই মাটির পৃথিবীতে সহজ মানুষের মত স্বাভাবিক অবস্থার . 
মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। কেবল প্রতিভার দীপ্তিতেই তাহার 
জীবন ভাস্বর হয় নাই। তিনি পরম সহিষুণতীয় তিলে তিলে তাহার 
মনুষ্যত্বের পরম সম্পদ গড়িয়া তুলিয়াছিলেন। এই মনুষ্যত্ব তিতীক্ষায় 
এ্বর্্যশালী, প্রেমে মাধুর্্যময়, জ্ঞানে উজ্জল এবং সংযমে ও 
অধ্যবসায়ে ফলবান। 

আজ বাঙ্গালী প্রফুল্লচন্্রকে হারাইয়াছে। হারানোর ছুঃখ বাঙ্গালীর 
বুকে তীক্ষ ও গভীর ভাবে বাজিয়াছে। এ দুঃখ বাঙ্গালী তুলিয়া! 
যাইবে । কিন্তু দিনের পর দিন-__বতসরের পর বসর-_যুগের পর যুগ 
ধরিয়া প্রফুল্লচন্দ্র বাঙ্গালীর মধ্যে বীচিয়া থাকিবেন-_বাঙ্গালীর জীবনকে 
প্রভাবিত করিবেন। অশরীরী প্রফুল্লচন্দ্র নব নব ব্যপ্রনা লাভ করিয়! 
ভাঁব রূপে বাঙ্গালীর চিত্তে অনুপ্রেরণা আনিয়৷ দিবে। হৃদয়ের মাধুর্য 
ও মনের কল্পন! দিয়! বাঙ্গালী প্রফুল্লচন্দ্রকে নৃতন করিয়া গড়িয়া লইবে। 
এই ভাবে নৈর্যক্তিক প্রফুল্লচন্্র তাহার ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা হারাইয়। 
কালে একটি সর্ববজন-কাম্য আদর্শের ভাবময় সত্তায় রূপান্তরিত হইয়া 
যুগ যুগান্ত ধরিয়া বাঙ্গালীর হৃদয়-গীঠে পূজা পাইতে থাকিবেন। 


সম্পুর্ণ